|
|
|
|
‘ঘুরে দাঁড়াতে’ পাঁচ দফা ‘দাওয়াই’ সিপিএমের |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ নিয়ে দলের মধ্যে সংশয় আছে। কিন্তু, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব আশাবাদী, প্রতিকূলতার মধ্যেও সম্ভাবনার উপাদানগুলিকে সময়মতো কাজে লাগানো গেলে অদূর ভবিষ্যতে জেলায় ফের ঘুরে দাঁড়ানো যাবে।
সদ্য-সমাপ্ত জেলা সম্মেলন থেকে এ জন্য পাঁচ দফা ‘দাওয়াই’ও প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দলের সর্বস্তরে সেই ‘বার্তা’ পৌঁছনোর কাজ শুরু হয়েছে। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, এই বার্তা থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা অনুপ্রেরণা পাবেন। পরিস্থিতি দেখেশুনে এগোতে পারবেন। জেলা সম্মেলনের পর গত শনিবারই প্রথম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হয়। দলীয় সূত্রে খবর, ওই বৈঠকেও ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র বিষয়টিই উঠে আসে। সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত প্রকাশ্য সমাবেশে যে ভিড় হয়েছে, তাতে ‘আশার আলো’ই দেখা গিয়েছে বলে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি। তাঁর কথায়, “জেলার সর্বত্র সন্ত্রাসের আবহ। নানা ভাবে আক্রমণ চলছেই। তার মধ্যেও এত মানুষ এসেছেন। সমাবেশ থেকেই স্পষ্ট হয়েছে, মানুষ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।” |
|
পাঁশকুড়া-খড়্গপুর তৃতীয় রেললাইনের কাজ চলছে। বালিচকে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
‘ঘুরে দাঁড়ানো’র জন্য ঠিক কী দাওয়াই দিচ্ছে জেলা সিপিএম? দলীয় সূত্রে খবর, দলের সর্বস্তরে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে যে, ‘নজিরবিহীন প্রতিকূলতার মধ্যেও সম্ভাবনার উপাদানগুলি কাজে লাগিয়ে পার্টিকে রক্ষা করো’ ও ‘সম্ভাব্য সম্প্রসারণ চালিয়ে যাও’। কী ভাবে এই কাজ সম্পন্ন হবে, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, ‘টিকে থেকে এগিয়ে যাও’। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, বামফ্রন্টের নির্বাচনী বিপর্যয় ও তৃণমূল-জোটের সরকার গঠনের মধ্যে দিয়ে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঠিক উপলব্ধির ভিত্তিতে যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনা করে পার্টিকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ভয়ভীতি, হতাশা ও বিভ্রান্তি কাটিয়ে নানা উপায়ে পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রেখে তৃণমূল-সৃষ্ট সন্ত্রাস ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চক্রান্ত থেকে আত্মরক্ষার যথোপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করতে হবে। আত্মসন্তুষ্টি নয়, আবার প্ররোচনা সৃষ্টিকারী হঠকারিতাও নয়। ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ‘শ্রেণি ও গণ-আন্দোলন বাস্তবতা অনুযায়ী বাড়িয়ে যাও’। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের বক্তব্য, কেন্দ্রে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের জনস্বার্থবিরোধী কাজ, তৃণমূল-সৃষ্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এলাকার পরিস্থিতির বাস্তবতা অনুযায়ী জনমত গঠন ও নানা কায়দায় মানুষকে সমবেত করে সোচ্চার করতে হবে। শ্রমিক, কৃষক-সহ অন্য মানুষের অধিকারে আঘাত এলে প্রতিবাদ করতে হবে। নতুন সরকারের প্রত্যাশা-পূরণে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রচারের পাশাপাশি জমি, কাজ ও মজুরির দাবিতে পরিকল্পিত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যূনতম সুযোগের দাবিতে সংগ্রাম চালাতে হবে।
তৃতীয়ত, ‘লড়াইয়ের ময়দান থেকেই বাছাই করে পার্টিতে আনো’। এ ক্ষেত্রে সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, পার্টিতে নতুন কর্মী আনার যথোপযুক্ত ক্ষেত্র হল সংগ্রামের ময়দান। শ্রেণি-আন্দোলন ও গণ-আন্দোলনের অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে থেকেই বাছাই করে প্রথমে সহায়ক-গ্রুপে সংগঠিত করে পার্টি নির্ধারিত পদ্ধতিতে লালনপালন করে রাজ্য কমিটি ও জেলা কমিটির নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রার্থী-সদস্য করার পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্যই জেলাগত ভাবে নিয়মিত ‘চেক-আপ’ করতে হবে। চতুর্থত, ‘শ্রমজীবী মানুষ ও মহিলা-সহ সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অংশ এবং ৪০ বছরের নীচের তরুণ-তরুণীদের বেশি সংখ্যায় পার্টিতে আনো’। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের বক্তব্য, এ জেলায় শ্রমিক, খেতমজুর, গরিব কৃষক মোট সদস্যের ৭৭.১৭ শতাংশ। নিশ্চিত ভাবেই যা উৎসাহজনক।
তবে সর্বহারা শ্রেণির রাজনৈতিক দল হিসেবে এই অংশের লোকেদের আরও বেশি সংখ্যায় সদস্য করতে হবে। পাশাপাশি ধারাবাহিক উদ্যোগ নিয়ে তফসিলি জাতি, উপজাতি ও সংখ্যালঘুদের পার্টিতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। এখনকার সংখ্যার থেকে অবশ্যই কমপক্ষে ২-৩ শতাংশ বাড়াতে হবে। মহিলা সদস্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য প্রথমেই গণ সংগঠনের প্রাথমিক ইউনিট সদস্যদের এজিতে এনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পরিকল্পনা করে প্রার্থী-সদস্য করা দরকার। এবং পঞ্চমত, ‘গ্রাম ভিত্তিক শাখা-পাড়া ভিত্তিক এজি গড়ে তোলো’। বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত যে গণ-প্রভাব ও গণ-সমর্থন ছিল তা পুনরুদ্ধার করে পরিকল্পনামাফিক প্রচেষ্টা চালালে অনেকটাই সাফল্য আসবে বলে মনে করছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। |
|
|
|
|
|