নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে সঙ্কটে খড়্গপুর-২ ব্লকের চাষিরা। দ্রুত বিদ্যুতের সুরাহা না হলে প্রায় ২০০ একর জমির বোরো-ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুফল মেলেনি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ঋণ নিয়ে চাষ করা কৃষকদের মাথায় হাত। বিদ্যুৎ দফতরের সার্কেল ম্যানেজার সনৎ বিশ্বাস বলেন, “দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” বিদ্যুৎ দফতরের খড়্গপুর ডিভিশনের ম্যানেজার শ্যামল হাজরা বলেন, “বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু একটি ক্ষেত্র থেকে বাধা আসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে দু’একদিনের মধ্যেই সংযোগ দেওয়া যাবে বলে আশা করছি।” |
সভাধিপতির কাছে সুরাহার আশায় চাষিরা। নিজস্ব চিত্র। |
খড়্গপুর-২ ব্লকের পলসা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়তা, উত্তর জগৎপুর, আম্বি-বাটিটাকি, তফরি-আম্বি, কুলডিহা, শ্যামচক-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা বোরো ধান চাষ করেছিলেন। কেউ এক মাস আবার কেউ ১৫ দিন আগে ধান রোপণ করেন। ওই এলাকায় ৩০-৪০টি মিনি ডিপটিউবওয়েল রয়েছে। আগে ওই নলকূপগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। পিংলা সাবস্টেশন থেকে ওই সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। ফলে সেচের সমস্যা হত না। কিন্তু বোরো চাষে সেচের প্রয়োজনে পিংলাতেও পাম্প চলায় একটি সাবস্টেশনে চাপ বাড়ছিল ক্রমশ। পিংলার চাষিরা পলসা এলাকার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। গত শুক্রবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটে। পলসার চাষিরা বিদ্যুৎ দফতরে গেলে প্রথমে তাঁদের গোপালি সাবস্টেশন থেকে সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু ওই সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ-সরবরাহ অনিয়মিত এবং লো-ভোল্টেজের অভিযোগ ওঠে। তখন বিদ্যুৎ দফতর করকাই সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার বিদ্যুৎ দফতর থেকে খুঁটি পুঁততে গেলে বাধা দেন করকাই এলাকার কিছু চাষিই। তাঁদের আবার আশঙ্কা, ওই সাবস্টেশন থেকে অন্য এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হলে তাঁদের এলাকায় পাম্প চলবে না। তাঁদের দাবি, বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের গ্রামে এসে চাষিদের এ ব্যাপারে আগে আশ্বস্ত করতে হবে। বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন। তাই কয়েকটি সাবস্টেশন থেকে ভাগ করে কী ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়, সে নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
৩০ বিঘে জমিতে বোরো চাষ করা শক্তি ভঞ্জ বা ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৬ বিঘে জমিতে ধান চাষ করা অবিনাশ টুডুরা পড়েছেন মহা ফাঁপরে। তাঁরা বলেন, “এমনিতেই ৬দিন হয়ে গেল সেচ দেওয়া যায়নি। এর পর দেরি হলে তো মাঠের ধান মাঠেই মরে যাবে। ঋণ নিয়ে চাষ করে যদি সেচের অভাবে ধান মরে যায় তা হলে আমাদেরও আর বাঁচার উপায় থাকবে না।” একই কথা চাষি দেবব্রত নাগ, রঞ্জিত সামন্ত বা অজয় দে-র। দেবব্রতবাবু, রঞ্জিতবাবুদের নিজেদের নলকূপ রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে নলকূপ থেকেই বা কী লাভ!” বুধবার চাষিরা জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গেও দেখা করেন। সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “বিদ্যুৎ দফতরকে দ্রুত সংযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছি। ওঁরা আশ্বাসও দিয়েছেন। দ্রুত সংযোগ না দিলে চাষিরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।” |