নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
মাসের পয়লা তারিখেই বেতন মেলার কথা। কিন্তু, তা মিলছে না। ফলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে খড়্গপুর মহকুমা এলাকার অন্তর্গত স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে। শুধু ফেব্রুয়ারিতেই নয়, গত দু’-তিন মাস ধরেই এ সমস্যা চলছে বলে অভিযোগ। জানুয়ারি মাসের বেতন যেমন বুধবারও মেলেনি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, দু’-একদিনের মধ্যেই বেতন মিলবে। জেলার অন্যত্র অর্থাৎ ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল কিংবা মেদিনীপুর সদর মহকুমার এলাকার অন্তর্গত স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের কিন্তু এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। সাধারণত, তাঁরা মাস পয়লাতেই বেতন পাচ্ছেন। তা হলে খড়্গপুরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা ঠিক কোথায়? জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড়ের বক্তব্য, “এই এলাকার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ স্কুল থেকে সময়মতো রিক্যুইজিশন আসে না। অনেক সময়ে আবার কাগজপত্রে ভুল থাকে। সেগুলি সংশোধনের জন্য পাঠাতে হয়।” তাঁর বক্তব্য, “এমন সমস্যা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও অবশ্য করা হচ্ছে।”
জেলার মধ্যে খড়্গপুরই সবথেকে বড় মহকুমা। এখানে প্রায় ৩৫০টি মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। মাস পয়লা বেতন না-মেলায় ইতিমধ্যেই খড়্গপুরের সহকারী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে দরবার করেছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, জেলার অন্যত্র হলেও এখানে সময়মতো কাজকর্ম হয় না। কর্মীরা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে গড়িমসি করেন। রিক্যুইজিশন জমা পড়লেও তা বিল করে ট্রেজারিতে পাঠাতে দেরি করেন। ফলে, মাসের এক তারিখ বেতন মেলে না। এক তারিখে বেতন না-মেলায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের ক্ষোভ স্বাভাবিক দাবি করে স্যাগেশাস টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক মধুসূদন গাঁতাইত বলেন, “নতুন রাজ্য সরকার মাসের ১ তারিখেই বেতন দিতে উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরের কিছু কর্মচারীর জন্যই তা সম্ভব হচ্ছে না। ওই কর্মচারীরা কাজের ক্ষেত্রে অযথা গড়িমসি করছেন।” তাঁর কথায়, “জেলার মধ্যে শুধু খড়্গপুর মহকুমার ক্ষেত্রেই এই ঘটনা ঘটছে। কেন এমন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।”
শিক্ষকদের একাংশ আবার এটাও মানছেন, সহকারী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী কম। ফলে, সময়মতো কাজ সেরে ওঠাও মুশকিল। ঠিক কী পরিস্থিতিতে রয়েছে ওই দফতর? জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, খড়্গপুরের সহকারী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদটিই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে। এখন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সঙ্ঘমিত্রবাবুই। দু’জন অফিসারের পদও শূন্য পড়ে। করণিক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ক্ষেত্রেও ২টি করে পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। ফলে, সময়ের মধ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের আবার দাবি, স্কুলগুলি যদি ভুল রিক্যুইজিশন পাঠায়, তা হলে সময়ের মধ্যে কাজ এগোনো মুশকিল। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এ বারও ৩১টি স্কুল থেকে এমন রিক্যুইজিশন পাঠানো হয়েছে, যার কাগজপত্রে ভুল রয়ে গিয়েছে। সমস্যা এড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই উদ্যোগী হতে হবে। শুধু দোষারোপ করে লাভ হবে না।” তাঁর কথায়, “এ বার ট্রেজারিতে ৮ দফা বিল পাঠানো হয়েছে। একাংশ স্কুল থেকে পাঠানো কাগজপত্রে ভুল থাকার ফলেই সময়ের মধ্যে কাজ এগোতে অসুবিধা হয়। তার উপর পরিকাঠামোগত সমস্যা তো রয়েইছে।” সাধারণত, মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই প্রতিটি স্কুল থেকে চলতি মাসের রিক্যুইজিশন জমা পড়ার কথা সংশ্লিষ্ট মহকুমার সহকারী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে (যাতে পরের মাস পয়লাতেই বেতন মেলে)। রিক্যুইজিশন থেকে বিল তৈরি করে তা ট্রেজারিতে পাঠানো হয়। ট্রেজারি থেকে বেতন বাবদ অর্থ জমা পড়ে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে। |