নিজস্ব সংবাদদাতা • রিষড়া |
শ্রীরামপুর-বাগবাজার রুটের বাস কন্ডাক্টর অলোক আঢ্যকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে উত্তরপাড়ায় সখের বাজার এলাকা থেকে দুলাল সামন্ত নামে ওই ব্যক্তিকে ধরা হয়। ওই এলাকাতেই তাঁর বাড়ি। পুলিশের দাবি, ধৃত ব্যক্তি বাসটির দেখভাল করতেন। খুনের ঘটনার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় (অনিচ্ছাকৃত খুন) মামলা রুজু করা হয়েছে। এই নিয়ে খুনের ঘটনায় মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হল।
বুধবার ধৃতকে শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই রুটের বাস-মালিক সংগঠনের অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় দুলালবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে। বাস-মালিক সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ ঘোষের অভিযোগ, “দুলালবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সময় উনি সেখানে ছিলেন না।” তিনি বলেন, “আমরা সত্যিকারের দোষীদের শাস্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু তার পরিবর্তে যে ভাবে দুলালবাবুকে ধরা হল, তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।” হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” এর আগে বিভিন্ন মহল থেকে জানা গিয়েছিল, দুলালবাবু বাসটি ‘লিজ’-এ চালান। পুলিশ জানিয়েছে, দুলালবাবু ‘লিজ’ বা অন্য কোনও চুক্তির প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি বাস-মালিক সংগঠনেরও সদস্য নন। এফআইআর-এ নির্দিষ্ট করে কারও নাম না থাকলেও পুলিশের দাবি, পরে নিহতের পরিবারের তরফে দুলালবাবুর জড়িত থাকার ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে তদন্তকারীদের কাছে।
নিহত অলোকবাবুর ভাই রঞ্জন আঢ্য বলেন, “ঘটনার দিন দুলালবাবুর ভূমিকা নিয়ে আমাদের খটকা লাগে। যা শুনেছি, তাতে উনি দাদাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা তো করেননি, আমাদের বাড়িতেও খবর দেননি। তা ছাড়া, দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। আমি ফোন করে দেখা করতে চাইলে তা-ও করতে চাননি।”
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে ভাড়া নিয়ে বিবাদের জেরে রিষড়ার সন্ধ্যাবাজারের কাছে অলোকবাবুকে কয়েক জন ‘মদ্যপ’ যুবক মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই সময় বাসের অপর কন্ডাক্টর এবং চালক দুলালবাবুকে ফোন করলে তিনি বাস নিয়ে বাগবাজারে চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগ। অলোকবাবু জখম অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত অন্য একটি বাসে করে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন সকালে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ওই কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়।
গত রবিবার চুঁচুড়ায় নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র দুলালবাবুর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে’ অলোকবাবুকে খুন করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিলেন।” ঘটনার পিছনে পুরনো কোনও ক্ষোভ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন। |