স্লুইস গেটটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ দফতরের অধীন নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তির নির্বাহী বাস্তুকার দেবাশিস পাড়ুই বলেন, “আমরা কোটালের সময়ে তো বটেই তিন দিন ধরে হুগলি নদী থেকে জোয়ারের জল তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু শীত এ বারে একটু বেশিদিন থেকে যাওয়ায় দক্ষিণ দিক দিয়ে বাতাস বইছে না। ফলে জোয়ারের জলস্তরের উচ্চতা কম হচ্ছে। যাই হোক দামোদরে মোটামুটি ৯ মিটার উচ্চতায় জল থাকলেই চাষের সমস্যা মিটে যাবে। সেই উচ্চতায় জল তুলে দিতে পারব বলে আমরা আশা করছি।”
খালে যে জল ছিল তা জমিতে দেওয়া হয়েছে জানুয়ারি মাসের প্রথমে। তাতেই ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেকে টম্যাটো, সূর্যমুখী, তিল প্রভৃতি রবি ফসলের বীজও রোপণ করেছেন। তার পর থেকে দামোদরে জল না-থাকায় খালগুলি শুকিয়ে গিয়েছে।
বাগনান ১ নম্বর ব্লকের গোপালপুর গ্রামের চাষি সোমনাথ বেজ ৯ বিঘা জমিতে টোমাটো চাষ করেছেন। তাঁর কথায়, “৭০ হাজার টাকা ঋণ করে চাষ করেছি। মাঠ ফুটিফাটা। কী করব বুঝতে পারছি না। কৃষি দফতরকে সব কথা জানিয়েছি। আমাদের এলাকায় কোনও গভীর নলকূপও নেই। নেই কোনও আরএলআই (নদী থেকে পাম্প করে জল তোলার ব্যবস্থা)। এই অবস্থায় জল না-পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
অন্যদিকে কাছারিপাড়া গ্রামের হায়দর বেগ, শেখ মোস্তফা বোরো চাষ করেছেন। গোপালপুরের অরূপ শ্বাসমল, শেখর বেরা টম্যাটো এবং সূর্যমূখী চাষ করেছেন। প্রত্যেকেই জলের অভাবের কথা জানালেন।
বাগনান ১ ব্লক কৃষি দফতর সূত্রের খবর জলের অভাবে প্রায় ১২০০ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শ্যামপুর ২ নম্বর ব্লকের জয়নগর গ্রামের মহাদেব ধাড়া ৮ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তাঁর কথায়, “মাঠে একফোঁটা জল নেই। সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছি। জলের অভাবে চারা শুকিয়ে যাচ্ছে। কী হবে জানি না।” জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর চারটি ব্লক মিলিয়ে অন্তত পাঁচ হাজার একর জমির বোরো ধান ও রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, বিষয়টি তিনি সেচ দফতরকে জানিয়েছেন।
এ দিকে শ্যামপুর ২ নম্বর ব্লকের খাড়ুবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তারা জানান, ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় ৫৮ গেটটি যেমন বন্ধ করে দেওয়া হয় অন্য দিকে মূল দামোদরের সমান্তরাল মজা দামোদরেও একটি আড়বাঁধ দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য, এখান থেকে যাতে জমা জল বেরিয়ে যেতে না-পারে। আড় বাঁধটি দেওয়া হয় মরশাল গ্রামের কাছে। প্রতিবছর খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেই এটা করা হয় বলে তাঁরা জানান।
গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, চলতি বছরে সেচ দফতর সিদ্ধান্ত নেয় তারা নিজেরাই মজা দামোদরে আড় বাঁধটি দেবে। জানুয়ারির ২০ তারিখ নাগাদ তারা আড় বাঁধ দিতে শুরু করে। কাজ চলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য অরূপ মাজি বলেন, “মজা দামোদরে সেচ দফতর যখন আড় বাঁধ দিতে আসে তখন সেখানে ভালই জল ছিল। কিন্তু বাঁধ দেওয়ার জন্য মজা দামোদরের খাত শুকানোর দরকার হয়। তখন ৫৮ গেট খুলে জমা জলের অনেকটাই বের করে দেওয়া হয়েছিল। পরে দেখা যায় হুগলি নদীর কোটালে আর সেই পরিমাণ জল আসছে না। জল না পাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়েছে সেই কারণেই।”
অভিযোগ অস্বীকার করে নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তির নির্বাহী বাস্তুকার দেবাশিসবাবু বলেন, “৫৮ গেট থেকে যে জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমি সুনিশ্চিত নই। তা ছাড়া প্রতি বছরই গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আড় বাঁধ দেওয়ার আগে কিছুটা জল তো ছাড়তেই হয়। কিছুটা জল ছাড়া হলেও ফের কোটাল এবং জোয়ারের সময়ে জল ঢুকিয়ে জলের অভাব মিটিয়ে দেওয়া হয়। আসলে এ বারে হুগলি নদীর কোটালে জলস্তর সে ভাবে ওঠেনি। জোয়ারেও তেমনভাবে উঠছে না। আমরা প্রতিদিন ৫৮ গেট খুলছি। অনেকটা জল ঢোকানো হয়েছে। বোরো চাষে জলের সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছি।” |