অবাধ্য ট্রাক রুখে প্রহৃত পুলিশ, ধৃত কংগ্রেস নেতা
‘নো এন্ট্রি’ ভেঙে ঢুকে পড়া একটি ট্রাককে আটকে ছিলেন তাঁরা। আর সেই ‘অপরাধে’ এক পুলিশকর্মী ও এক গ্রিন পুলিশকর্মীকে রাস্তায় ফেলে সদলবলে পেটানোর অভিযোগ উঠল জেলা কংগ্রেসের এক নেতার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে লিলুয়ার বিরাডিঙি এলাকায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই পুলিশকর্মী ও গ্রিন পুলিশকর্মীকে হাওড়ার জয়সোয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি মৃণালকান্তি গুহ-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ট্রাফিক আইন না মানায় জরিমানা বাবদ গত পাঁচ মাসে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের আয় হয়েছে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে এত টাকা জরিমানা আদায় কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছে, কমিশনারেট হওয়ার আগে ট্রাফিক আইন না মেনে যানবাহন চলাচলেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল হাওড়া শহর। হাওড়ার পুলিশ কমিশনারেট যে কড়া হাতে যান-শাসন করতে বদ্ধপরিকর, তা মঙ্গলবার রাতের ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিয়েছে। পাশাপাশি, এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা এ কথাও প্রমাণ করে যে, যান-শাসনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দাদাগিরিকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না হাওড়া সিটি পুলিশ।
হাসপাতালে অনির্বাণ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সালকিয়ায় শীতলা মায়ের স্নানযাত্রা উপলক্ষে হাওড়া ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে উত্তর হাওড়ার বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। সেই মতো বেনারস রোড দিয়ে দু’চাকার যান ছাড়া সমস্ত গাড়ির প্রবেশ রাত ১০টা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। ঘটনার রাতে বেনারস রোডের কাছে বিরাডিঙি এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিলেন পুলিশকর্মী তপন মাইতি এবং গ্রিন পুলিশের কর্মী অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, রাত ৯টা নাগাদ দাশনগরের দিক থেকে একটি মাল বোঝাই ট্রাক বিরাডিঙি দিয়ে এসে বেনারস রোডে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনই ওই পুলিশকর্মীরা ট্রাকটির পথ আটকান। ট্রাকটিতে রেশন দোকানের চাল ছিল। এই নিয়ে চালকের সঙ্গে বচসা বেধে যায় ওই পুলিশকর্মী এবং তাঁর সঙ্গী গ্রিন পুলিশকর্মীর।
পুলিশ জানায়, ওই সময়ে ট্রাকচালক মোবাইল থেকে রেশন দোকানের মালিককে খবর দেন। এর পরেই ১৫-২০ জন যুবক ঘটনাস্থলে এসে তপনবাবু ও অনির্বাণবাবুকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। অভিযোগ, এই মারধরে নেতৃত্ব দেন মৃণালবাবু নিজে। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী ও র্যাফ গিয়ে লাঠি চালিয়ে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
বুধবার হাসপাতালে শুয়ে তপনবাবু বলেন, “মাল বোঝাই ট্রাকটি আটকানোর পরেই মৃণালবাবুর নেতৃত্বে একদল যুবক এসে আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তলপেটে লাথি মেরে আমায় রাস্তায় ফেলে দেয় তারা। এর পরে চোখে বারবার আঘাতও করে।”
অনির্বাণবাবু বলেন, “আমাদের মারার কারণ কী, বুঝতে পারছিলাম না। আমরা কর্তাদের নির্দেশ মেনেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছিলাম। ‘নো এন্ট্রি’ ভেঙেছে বলেই ট্রাকটিকে আটকানো হয়।”
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে মৃণালবাবু ছাড়া সৌম্য গুহ ও অমল গুহ নামে দু’ই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এ দিকে, প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, যে ট্রাকটিকে গলির মধ্যে আটকানো হয়েছিল, সেটিতে মৃণালবাবুর এক আত্মীয়ের রেশন দোকানের চাল আসছিল। তাই গাড়ি আটকানোর খবর পেয়েই ছুটে এসেছিলেন মৃণালবাবু।
ট্রাফিক পুলিশকে মারধরের ঘটনার সঙ্গে দলের এক নেতার জড়িয়ে পড়া নিয়ে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রতীক ঘোষ বলেন, “মৃণালদাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি তো মারধর করেননি। বরং গোলমাল মেটাতে ছুটে গিয়েছিলেন। পুলিশ আসল আক্রমণকারীদের না পেয়ে ওঁদের ধরেছে।”
হাওড়ার ডিসি (ট্রাফিক) অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “আমরা ওই পুলিশকর্মী ও গ্রিন পুলিশকর্মীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই ওই তিন জনকে গ্রেফতার করেছি। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মীকে মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
এ দিকে, এ দিন বিকেলে ধৃত কংগ্রেস নেতা-সহ তিন জনকে হাওড়া আদালতে তোলা হয়। আদালত তিন জনকে সাত দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.