সরকারি স্কুলের বুনিয়াদি স্তরেও ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় করা হচ্ছে, অভিযোগ পেয়ে রাজ্য জুড়ে সমীক্ষায় নেমেছে অসম রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুচিত্রা কাকতি জানান, সমীক্ষার কাজ যত এগোচ্ছে ততই শিক্ষাব্যবস্থার ভেঙে পড়া চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে।
২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইনে পরিষ্কার নির্দেশ আছে, সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি নেওয়া চলবে না। কিন্তু অভিযোগ, এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অধিকাংশ স্কুলে এ বার ফি আদায় করা হয়। কামরূপ, উদালগুড়ি-সহ বিভিন্ন জেলায় এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। প্রতিবাদে কোথাও কোথাও রাস্তা অবরোধও হয়েছে। এর পরই এ ব্যাপারে সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় অসম রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। এ পর্যন্ত ২৬টি জেলায় সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন ডিমা হাসাওয়ে সমীক্ষার কাজ চলছে। দু-চার দিনের মধ্যে শুরু হবে কার্বি আলং জেলায়। এই পর্যায়ে রাজ্যের ৬৫ শতাংশ স্কুলে সমীক্ষকরা গিয়েছেন বলে জানান কাকতি। পরবর্তী পর্যায়ে বাকি ৩৫ শতাংশ স্কুলেও যাবেন সমীক্ষকরা।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় যাওয়া সমীক্ষকদের কাছ থেকে যে রিপোর্ট মিলছে তাতে কমিশন উদ্বিগ্ন। কাকতি জানান, দুই-তৃতীয়াংশ স্কুলে এ বার ফি আদায় করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকদের সাফাই, ২০০৯ সালের আইনটির কথা তাঁরা জানেনই না। বিভাগীয় কর্তারাও কোনও নির্দেশ পাঠাননি। পরে অবশ্য প্রধান শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের ডেকে সংগৃহীত ফি ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। অনেকে আবার কমিশনের কাছে অভিযোগ করেন, বেতন-পরিকাঠামো ছাড়াও স্কুল চালাতে বহু ধরনের খরচ আছে। কিন্তু সরকার সে জন্য কোনও অর্থ দেয় না।
কমিশন এই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে নির্ধারিত বিষয়ের বাইরেও বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। রাজ্যের বেশ ক’টি স্কুলের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দিহান কমিশন। এ ছাড়াও সমীক্ষকরা দেখতে পেয়েছেন, বহু স্কুল প্রতিদিন বসেই না, বা স্কুল খুললেও প্রধান শিক্ষকদের দেখা মেলে না। সব থেকে করুণ অবস্থা ডিমা হাসাও ও হাইালাকান্দি জেলায়। কাকতি এ জন্য স্কুল পরিচালন কমিটির নিষ্ক্রিয় বা নেতিবাচক ভূমিকাকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, সর্বাধিক ১০ শতাংশ কমিটি স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে কাজ করে। অধিকাংশ শুধুই খাতায়-কলমে।
ভর্তি ফি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতী কমিশন। কার্বি আলংয়ের সমীক্ষা শেষ হলে সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। সঙ্গে থাকবে সুপারিশগুচ্ছ। এ নিয়ে প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান চেয়ারপার্সন কাকতি। |