কাছাড়ের বিভিন্ন স্কুলে মিড ডে মিলের চাল খাতায়-কলমে যতটা পাঠানো হয়, অভিযোগ, বাস্তবে তা পরিমাণে প্রায়শই কম থাকছে। এর ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা পড়ছেন ফ্যাসাদে। কারণ ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে হয় পুরো চালেরই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এই অব্যবস্থার প্রতিকার চেয়ে কাছাড় জেলার স্কুল শিক্ষকেরা গঠন করেছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটি।
প্রাথমিক শিক্ষক সংস্থা, মধ্য ইংরেজি ও মধ্য ইংরেজি মাদ্রাসা শিক্ষক সংস্থা, মধ্য বঙ্গ শিক্ষক সংস্থা, বুনিয়াদি শিক্ষক সংস্থা এবং মিডল স্কুল সায়েন্স টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনপাঁচটি সংগঠন সম্মিলিত ভাবে গড়ে তুলেছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটি। কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক অলক পাল ক্ষোভের সুরে বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে এই অরাজকতা চলছে। নানা ধরনের অব্যবস্থাকেই এখানে ব্যবস্থা হিসেবে চালানো হচ্ছে।” হিসাব দেখিয়ে অলকবাবু জানান, বছরে অন্তত ১০ হাজার কুইন্টাল মিড-ডে মিলের চাল ‘উধাও’ হয়ে যায়। তাঁর প্রশ্ন, কোথায় যায় সে সব চাল?
ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের অভিযোগ, স্কুলে পৌঁছনোর আগেই মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ চালের একাংশ ‘উধাও’ হয়ে যায়। কাছাড় জেলায় যে-সব প্রধান শিক্ষক রেশন দোকান থেকে চাল মেপে আনেন, তাঁদের প্রতি কিস্তিতে দশ শতাংশ ছেড়ে আসতে হয়। অন্যান্য স্কুলগুলিতে অবশ্য রেশন দোকান থেকে চাল সরাসরি চলে যায় স্কুলেই। কতটা চাল এল তা মেপে রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই প্রধান শিক্ষকরা বস্তা গুনেই চাল পাওয়ার কথা লিখে দেন। কিন্তু বস্তাগুলিও পুরো ভর্তি থাকে না বহু সময়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কুইন্টালে ১০ থেকে ২০ কিলোগ্রাম কম। এই ‘ছাঁটাই’য়ের দায় কিন্তু গিয়ে পড়ে শিক্ষকদের ঘাড়েই।
কো-অর্ডিনেশন কমিটির প্রচার-সম্পাদক মৌসম দত্তের অভিযোগ, তাঁদের চন্দ্রনাথপুর স্কুলের মিড-ডে মিল থেকে দশ শতাংশ কেটে রাখে সোনাপুর সমবায় সমিতি। প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে, ‘এটা জেলা প্রশাসনের নির্দেশ। তাঁদের গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন।’ অলক পাল, ইকবাল হোসেন মজুমদার এমন বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, যে সব স্কুলে চাল সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাদের কাছে রেশন দোকান বা সমবায় সমিতিগুলির বাঁধাধরা জবাব, ‘যেমন বস্তা তেমন দিলাম। এ বার আপনারা বুঝুন।
শিক্ষকদের আরও অভিযোগ, চাল কিছুটা পরিমাণ এ ভাবে কেটে রাখা হলেও প্রধানশিক্ষকদের আবার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে হয় পুরো চালেরই। ফলে জোড়াতালি দিতেই হয়। যে-সব প্রধান শিক্ষক এতে পটু নন, তাঁরা অডিট বা অন্য কোনও হিসাব দাখিলে সমস্যায় পড়েন। এমনকী কাউকে কাউকে ‘চাল চুরির দায়ে’ আদালতে পর্যন্ত ছুটতে হয়।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবাশিস চক্রবর্তীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি অবশ্য জানান, কোনও স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা জেলার কোনও শিক্ষক সংস্থার কাছ থেকে এ ধরনের কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। একই কথা জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাবিলউদ্দিন আহমদও। তাঁদের কথায়, জেলা গণবণ্টন গুদাম থেকে চাল চলে যায় সমবায় সমিতিতেসেখান থেকে রেশন দোকান হয়ে স্কুলে। দেবাশিসবাবুর পাল্টা অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকরা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য কেউ কেউ রেশন থেকে চাল সংগ্রহ না করে তা স্কুলে পাঠিয়ে দিতে বলেন। অথচ ওই চাল মেপে বুঝে নেওয়া প্রধান শিক্ষকেরই দায়িত্ব।
কিন্তু চন্দ্রনাথ স্কুলের মতো যেখানে মেপে আনতে গেলে ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়? দেবাশিস চক্রবর্তী ও কাবিলউদ্দিন আহমদ দু’জনেই বলেন, সুস্পষ্ট অভিযোগ এলে অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। দোষীরাও শাস্তি পাবে। |