উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রথম দিনেই জোড়া অস্বস্তিতে পড়ল বিজেপি।
বিধানসভায় বসে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ছবি দেখতে গিয়ে গোটা বিজেপি নেতৃত্বকেই প্রবল অস্বস্তির মুখে ফেলে দিলেন কর্নাটকের তিন মন্ত্রী। বিতর্কের জেরে নিতিন গডকড়ী মন্ত্রিপদ থেকে তিন জনের পদত্যাগপত্র আদায় করে নিয়েছেন বটে, কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিরোধীরা এই সুযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র হাতে পেয়ে গিয়েছে। ফলে চাপের মুখে পড়ে গিয়েছেন দলের নেতৃত্ব। আবার কর্নাটকের ঘটনা সামলানোর মধ্যেই এ দিন গুজরাত হাইকোর্ট নরেন্দ্র মোদীকে ভর্ৎসনা করে বলে দিয়েছে, দশ বছর আগের দাঙ্গা থামাতে সরকার ও প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি। বরং নিষ্ক্রিয় ছিল। তার জেরে রাজ্যে নৈরাজ্য তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেসের দাবি, নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করুন মোদী। |
|
|
|
লক্ষ্মণ সাভাড়ি |
কৃষ্ণ পালেমার |
সি সি পাটিল |
|
মোদী বিপাকে পড়লে গোটা বিজেপি ভেঙে পড়ে, এমন নয়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে গডকড়ী যখন তাঁর ‘ইজ্জতের’ লড়াই লড়ছেন, সেই সময় এই জোড়া অস্বস্তি। তার মধ্যে কর্নাটকের ঘটনাই দলীয় নেতৃত্বের কাছে সব থেকে বেশি উদ্বেগের। গতকাল কর্নাটক বিধানসভায় বিতর্ক চলাকালীন সমবায় মন্ত্রী লক্ষ্মণ সাভাড়ি এবং নারী উন্নয়নমন্ত্রী সি সি পাটিল মোবাইলে অশ্লীল ছবি দেখছিলেন। যদিও তাঁদের দাবি, তাঁরা একটি পার্টির ছবি দেখছিলেন, এবং বিজ্ঞানমন্ত্রী কৃষ্ণ পালেমার সেই ভিডিও ক্লিপ তাঁদের দিয়েছেন। রাজ্যে উদ্দাম পার্টি সংক্রান্ত একটি বিতর্কে তাঁরা যাতে তথ্য দিয়ে কথা বলতে পারেন, সে জন্যই না কি তাঁরা ওই ক্লিপ দেখছিলেন। কাল রাত পর্যন্ত জোর গলায় তাঁরা এই সব যুক্তি দিলেও আজ সকালে ছবিটা বদলে যায়।
দলীয় সভাপতি গডকড়ী তাঁদের তড়িঘড়ি মন্ত্রীপদ থেকে ইস্তফার নির্দেশ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতেও বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ সকালে এই তিন জন ইস্তফা দিলেও বিধানসভায় গিয়ে সাফাই দিতে যান। সেখানে প্রবল হট্টগোলের মধ্যে বিরোধীরা বিধায়ক পদ থেকেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার ঘনিষ্ঠ এই তিনজনকে সরানোর দাবি তোলে। স্পিকারের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই তিন প্রাক্তন মন্ত্রীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় দেওয়া হয়েছে। সেই পর্যন্ত তাঁরা বিধানসভার অধিবেশনে থাকতে পারবেন না। |
বৃষ্টি ঠেলে... ভোটকেন্দ্রের পথে। বুধবার উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার নির্বাচনে
গোন্দা বিধানসভা এলাকায়। ছবি: পি টি আই |
কমিটি রিপোর্ট পেশ করবে আগামী মাসে। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ভোটপর্ব মিটে যাবে। কিন্তু নির্বাচন পর্বে বিজেপিকে আক্রমণের এমন সুযোগ কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছে না কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল বলেন, “দেখা যাচ্ছে, বিজেপির সদস্যদের একাংশ সব ধরনের মজাই ভোগ করছেন। কখনও তা রাজনৈতিক মনোরঞ্জন। কখনও তা অন্য কিছু।” কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ অলভি বলেন, “এটাই বিজেপির আসল চেহারা। ইয়েদুরাপ্পা থেকে রেড্ডি ভাই, বঙ্গারু লক্ষ্মণ থেকে উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমেশচন্দ্র পোখরিয়াল সকলেই আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত।
শুধু এই দিকটাই বাকি ছিল। সেটাও হয়ে গেল।”
বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে খোদ শরিক দল জেডি (ইউ)। দলের নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি বলেন, “যে বিজেপি-আরএসএস সংস্কৃতির ধারক-বাহক বলে নিজেদের দাবি করে, তাদের থেকে এ ধরনের আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়।” অণ্ণা হাজারেও বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন।
এই অস্বস্তি কাটাতে নিতিন গডকড়ী থেকে অরুণ জেটলি আজ ময়দানে নামেন। উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই দু’জনেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। বলেন, বিজেপি দলগতভাবে এই ঘটনার জন্য দায়ী না হলেও বিধানসভায় বসে অশ্লীল ছবি দেখার ঘোরতর নিন্দা করে। প্রাথমিকভাবে এই নেতাদের মন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। দোষ প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে কংগ্রেস-সহ বাকি দলগুলি যখন নৈতিকতার প্রশ্নে বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে, তা মোকাবিলা করার জন্য পাল্টা কৌশলও তৈরি করতে হচ্ছে বিজেপিকে। দলের মুখপাত্র রাজীব প্রতাপ রুডি বলেন, “নিঃসন্দেহে ভোটের মধ্যে এ ধরনের ঘটনার বিরূপ প্রভাব পড়ে। কিন্তু রাজস্থানে কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী মাদেরনার সঙ্গে ভাঁওয়ারি দেবীর অবৈধ সম্পর্ক, রাজভবনে বসে নারায়ণ দত্ত তিওয়ারির আপত্তিকর আচরণ এবং তা নিয়ে সিডি তৈরির ঘটনাও যেন কংগ্রেস ভুলে না যায়।” অরুণ জেটলি বলেন, “ব্যক্তিগত স্তরে আমাদের দলের নেতাদের অসাধু আচরণ আমরা সমর্থন করি না। ভুলটা স্বীকারও করি। কংগ্রেস তো তা-ও করে না।”
|