রোজ রোজ অসংখ্য আবেদন শুনতে হয় আদালতকে। সংসার ভাঙা ঠেকাতে এ বার আবেদন-নিবেদনের পথ নিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরাই।
অপূর্ব চৌধুরী চিকিৎসক, স্বাস্থ্য ভবনে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী শম্পা মৈত্র চৌধুরীও চিকিৎসক, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী। তাঁদের একমাত্র মেয়ে আত্রেয়ীর বয়স ১১। তার বাবা বিবাহ-বিচ্ছেদ চান। আর হাইকোর্ট চায়, সন্তানের মুখ চেয়ে একসঙ্গেই থাকুন চৌধুরী দম্পতি। তাঁদের কাছে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন, “মেয়েটির দিকে তাকান। এখন ওর বেড়ে ওঠার সময়। আপনারা দু’জনেই শিক্ষিত। সুউপায়ী। ভুল বা বিবাদ মিটিয়ে আবার সুখের সংসারে ফিরে যান।” মেয়ের কথা ভেবে এটুকু আত্মত্যাগ করার জন্য আবেদন জানান বিচারপতি।
১৯৯৫ সালে অপূর্ববাবু ও শম্পাদেবীর বিয়ে হয়। কয়েক বছর পরে আত্রেয়ীর জন্ম। সে একটি বেসরকারি নামী স্কুলের ছাত্রী। মেয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই মা-বাবা দু’জনকেই চায়। কিন্তু বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা ঠুকে দিয়েছেন অপূর্ববাবু। শম্পাদেবীর অবশ্য একত্রে থাকার ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই।
বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি সোমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার দীর্ঘ সময় ধরে দু’পক্ষের বক্তব্য শোনে। আইনি লড়াই থেকে সরে এসে স্বামী ও স্ত্রী দু’জনকেই বারবার নতুন পথ খুঁজতে বলেন বিচারপতিরা। তার পরেই বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসক দম্পতিকে হাইকোর্টের নতুন ভবনের ১০তলায় যেতে বলেন। সেখানে হাইকোর্টের একটি প্রেক্ষাগৃহ আছে। বিচারপতির নির্দেশে ১০তলার সেই প্রেক্ষাগৃহ খুলে দেওয়া হয় ওই দম্পতির জন্য। বিচারপতি বলেন, “ওখানে নিরিবিলিতে বসে দু’জনে কথা বলুন।” তাঁর বিশ্বাস, বিচ্ছেদ নয়, অন্য পথের সন্ধান মিলবে। স্থির হয়, বিকেলে ফের মামলাটির শুনানি হবে। কিন্তু বিকেলে শুনানির সময় জানা যায়, এ দিন চৌধুরী দম্পতির নিভৃত আলোচনায় দু’জনের একসঙ্গে থাকার তেমন কোনও সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। তার পরে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এ দিন আর শুনানি হবে না। আজ, বৃহস্পতিবার বেলা ২টোয় ফের শুনানি হবে। বিচারপতিরা দম্পতিকে বলেন, “নিজেদের মধ্যে আরও আলোচনা করুন। মেয়ের সঙ্গেও কথা বলুন। হাইকোর্ট শুভ সমাপ্তি আশা করে।” |