আদালতের নির্দেশ ছিল। তবু উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কাছ থেকে বাস দুর্ঘটনায় ছেলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেন না কাটোয়ার রামেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কল্পনা ঘোষ। তাঁর আইনজীবী কাটোয়া আদালতের সৌমেন সরকার এ নিয়ে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার (এনবিএসটিসি) ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে চিঠি দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার রায়ের পাড়া গ্রামের নবদম্পতি উদয়কুমার ঘোষ (২৭) ও সুনন্দাদেবী অষ্টমঙ্গলার জন্য কেতুগ্রামের বারান্দা গ্রাম যাচ্ছিলেন। ২০০৩ সালের ৭ মার্চ সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ন’নগর গ্রামের কাছে এনবিএসটিসির একটি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় উদয়বাবুর। সংস্থার তৎকালীন এমডি-র কাছে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে চিঠি পাঠান কল্পনাদেবী। এমডি তা দিতে অস্বীকার করলে কল্পনাদেবী কাটোয়া মহকুমা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক বিচারকের দ্বারস্থ হন। ওই বছরেই মে মাসে বিচারকের কাছে লিখিত ভাবে কল্পনাদেবী জানান, মৃত্যুর সময়ে ছেলের মাসিক আয় ছিল ৫ হাজার টাকা। সেই কারণেই তিনি এনবিএসটিসির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ছ’বছর ধরে মামলা চলার সময় এনবিএসটিসি-র তরফে আদালতে কোনও আইনজীবীই ছিল না। পরে ২০০৯ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন বিচারক সঞ্জিত মজুমদার তাঁর রায়ে জানান, এনবিএসটিসিকে মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণবাবদ ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা দিতে হবে।
বার বার আবেদন করেও এই টাকা পাননি কল্পনাদেবী। এর পরে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ডিভিশন বেঞ্চের আইনজীবী অমিত তালুকদার ও প্রভাত কুমার দে ওই সংস্থাকে নির্দেশ দেন, কাটোয়া আদালতে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করার পর থেকে ৮ শতাংশ হারে সুদ-সহ ওই পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রায়ের প্রতিলিপি পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে ওই নির্দেশ বলবৎ করতে হবে। কল্পনাদেবীর আইনজীবী অনুপমা হাজারি-ও পরিবহণ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে হাইকোর্টের রায় জানিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি জানান, গত বছর ২২ মার্চ হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি পেলেও এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়নি এনবিএসটিসি।
সেই প্রসঙ্গ তুলেই মহকুমা আদালতের আইনজীবী সৌমেন সরকার বলেন, “এক বছর কেটে যাওয়ার পরেও আদালতের নির্দেশ মানতে অনীহা দেখাচ্ছে ওই সংস্থা। আদালত অবমাননার অভিযোগে আমরা ফের আদালতের দ্বারস্থ হব।”
পরিবহণ সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগান বলেন, “বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গেই দেখছি।” |