বিপিএলের তালিকায় গলদের সুবাদে ইন্দিরা আবাসন যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন, এমন লোকেদের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলার ‘ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি’।
বুধবার বর্ধমানে বৈঠকের পরে কমিটির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “বিপিএল তালিকায় এমন বেশ কিছু লোকেরা নাম রয়েছে, যাঁরা অবস্থাপন্ন। এঁদের অনেকেই ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়িও পেয়েছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রশাসন এঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি বাড়িও ফেরত নিয়ে নেওয়া হবে।” বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক বলেন, “আমরাও চাই বিপিএলের তালিকায় অন্যায় ভাবে ঢুকে পড়া লোকেদের চিহ্নিত করা হোক।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বর্ষে ওই কেন্দ্রীয় যোজনায় জেলায় মোট ৭০১৪টি বাড়ি তৈরি হবে বলে স্থির রয়েছে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “গত আর্থিক বর্ষে প্রায় ১২ হাজার বাড়ি তৈরি হয়েছে। বর্ধমানই প্রথম জেলা, যারা এ বার সবার আগে ইন্দিরা আবাস যোজনার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়েছে। যে বাড়িগুলি অনুমোদিত হয়েছে, সেগুলি তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু প্রধান শাসকদলের কিছু লোকজনের বিরুদ্ধেই বেনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, “ইন্দিরা আবাস যোজনার প্রাপকদের নামের তালিকা বা ওয়েটিং লিষ্ট না মেনে কাজ করার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। যেমন, ১৮ নম্বরে থাকা কাউকে বাদ দিয়ে ২৩ নম্বরে থাকা লোককে আবাসন দিতে চাপ দিচ্ছে তৃণমূলেরই কিছু লোক। এটা যাতে না হয়, তালিকা ধরেই যাতে আবাসনের টাকা দেওয়া হয়, বৈঠকে আমরা সেই দাবি জানিয়েছি।”
মুকুলবাবু এ দিন জেলায় ১০০ দিন প্রকল্পের অগ্রগতিও খতিয়ে দেখেছেন। তাঁর দাবি, “কাজে গতি এসেছে। যে ৩২টি পঞ্চায়েত কাজ না করে হাত গুটিয়ে বসে ছিল, সেগুলিও সক্রিয় হয়েছে। এক মাস আগে জেলায় কাজের গড় ছিল ৩২ দিন। তা বেড়ে হয়েছে ৩৯। দেড়মাসের মধ্যে আমরা তা অন্তত ৫০-এ নিয়ে যেতে চাই।” তিনি জানান, এক মাস আগে পর্যন্ত এই খাতে খরচ হয়েছিল ১৭১ কোটি টাকা। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১ কোটিতে। সিপিএম সাংসদ সাইদুল হকও মেনে নেন, “১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে গতি ফিরেছে। গড় বাড়ছে। জেলার ২৭৭টি পঞ্চায়েতই কাজে নেমেছে। এটা অবশ্যই বড় সাফল্য।”
কাজে গতি আনার পাশাপাশি রাজ্য সরকার মহিলাদের শ্রমের বহর কিছুটা কমাতেও চাইছে বলে মুকুলবাবু জানান। তিনি বলেন, “আগে মহিলারা ৮৮ কিউবিক ফুট মাটি কেটে যে মজুরি পেতেন, তা এ বার থেকে ৬২ কিউবিক ফুট মাটি কেটেই পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, মহিলা শ্রমিকদের কাজের পরিমাণ আরও কিছুটা কমাতে।” তাঁর দাবি, “আগে এক মাস পরে মজুরি মিলত। এখন মিলছে সাত দিন পরে। যাতে প্রতি দিন কাজ শেষের পরেই শ্রমিকেরা মজুরি পেতে পারেন, রাজ্য সরকার সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলার ২২টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা (মোট দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার) সংস্কারের জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছে এবং নতুন ৪৯টি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও মুকুলবাবু জানিয়েছেন। |