নীলোৎপল রায়চৌধুরী • রানিগঞ্জ |
আবাসন ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিচারিতার অভিযোগে মামলা শুরু হল ইসিএলের বিরুদ্ধে।
রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকায় ১৯৯৬ সালের ১৭ এপ্রিল আসানসোলকে ‘বি-টু’ শ্রেণির শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী, শহরে বসবাসকারী ইসিএলের কর্মীদের ১৫ শতাংশ আবাসন ভাতা পাওয়ার কথা ছিল। এর পরে ২০০৯ সালে আবার কেন্দ্রীয় সরকার আবাসন ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে আসানসোলকে ‘ওয়াই’ শ্রেণির শহর বলে ঘোষণা করে। সে ক্ষেত্রে কর্মীদের আবাসন ভাতা হওয়ার কথা ২০ শতাংশ। অথচ ইসিএল কর্মীদের ১০ শতাংশ আবাসন ভাতা দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে কর্মীদের তরফে শ্রম দফতরের দ্বারস্থ হয় আইএনটিইউসি। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টির মীমাংসা না হওয়ায় শ্রম দফতর ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাইব্যুনাল কাম লেবার কোর্ট’-এ পাঠায়। গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সেই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
আইএনটিইউসি অনুমোদিত নরসমুদা কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের অভিযোগ, ২০০১ সালের ১৪ জুন কোল ইন্ডিয়া ইসিএলকে দু’টি বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। একটিতে আধিকারিকদের ক্ষেত্রে আসানসোলকে ‘এ’ শ্রেণির শহর হিসেবে উল্লেখ করে ২৫ শতাংশ ও অন্যটিতে কর্মীদের ক্ষেত্রে ‘সি’ শ্রেণির শহর উল্লেখ করে ১০ শতাংশ আবাসন ভাতা দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়। এর পরেই নরসমুদা, বরাচক, কাল্লা হাসপাতাল, মুসলিয়া, নিউঘুষিক, গিরমিটের মতো কয়েকটি খনির প্রায় হাজার দেড়েক কর্মী সরকারি ঘোষিত ভাতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগে নরসামুদা কোলিয়ারিতে আইএনটিইউসি-সহ কয়েকটি সংগঠনের নেতৃত্বে আন্দোলনে নামে। আসানসোলের তৎকালীন মহকুমাশাসক দেড় মাসের মধ্যে ইসিএলকে সঠিক ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
নরসমুদা কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের অভিযোগ, বৈঠকে তা দিতে প্রতিশ্রুত হলেও ইসিএল কাযর্ত ১০ শতাংশ ভাতাই দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে কর্মীরা আবার আন্দোলনের কথা ঘোষণা করলে আসানসোলের সহকারী শ্রম কমিশমনার (সেন্ট্রাল) এম কে ধুরুয়া ত্রিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু সেই আলোচনা ব্যর্থ হয় বলে শ্রমমন্ত্রককে জানান তিনি। পাশাপাশি, কর্মীদের দাবি ‘যুক্তিসঙ্গত’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ২০১০ সালের ৩১ মে শ্রমমন্ত্রক বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। কিন্তু এই সময়ে কোনও বিচারক না থাকায় আদালতে শুনানির কাজ বন্ধ ছিল।
ইতিমধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী আসানসোলকে ‘ওয়াই’ শ্রেণির শহর হিসেবে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নির্দেশে ২০ শতাংশ ভাতা দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও আধিকারিকদের ভাতাও কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হল। তবে তাদের জন্য আলাদা অনুদানের ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়। অন্য দিকে, ২০ শতাংশ ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও কর্মীদের আগের মতোই ১০ শতাংশ ভাতা দিতে থাকেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়েও ফের শ্রমমন্ত্রকে আলোচনা হলেও ফল হয়নি। অভিযোগ, এমনকী কোল ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর পার্সোনেলের প্রতিনিধিও আসানসোল শ্রমমন্ত্রকের কাছে লিখিত পর্যায়ে জানান, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ‘ওয়াই’ শ্রেণির শহর হিসেবে আসানসোলের বসবাসকারী কর্মীরা ২০ শতাংশ ভাতা পাওয়ার যোগ্য। এর পরেও ইসিএল ১০ শতাংশ ভাতাই দিয়ে চলেছে।
সম্প্রতি এই মামলার প্রথম শুনানি হয়। আইএনটিইউসি-র পক্ষে নরসমুদা কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি সঞ্জয় মাজি এবং ইসিএলের তরফে আইনজীবী পীযূষ দাস হাজির ছিলেন। সঞ্জয়বাবুর দাবি, সব স্তরের আলোচনার সব নথি তাঁরা দেখিয়েছেন। অথচ সংস্থা সব নথি দেখাতে পারেনি। সে কারণে এর আগের আলোচনায় শ্রমমন্ত্রক-সহ অন্যেরা তাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে আছি।” ইসিএল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “যা বলার তা আদালতেই বলা হবে।” |