প্রশাসন-বাসমালিক বিরোধ
পুরুলিয়ায় বাস বন্ধে ভোগান্তি যাত্রীদের
স্ট্যান্ডের উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে ‘বিরোধে’র জেরে বাস বন্ধ রাখল বাসমালিক সমিতি। সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হওয়ায় পুরুলিয়া জেলার ৪৬টি রুটের প্রায় ৩৮০টি বাস রাস্তায় নামেনি। শুধু তাই নয়, অন্য জেলা থেকে আসা বাসগুলিও এ দিন জেলায় ঢোকেনি। স্বাভাবিক ভাবে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে নিত্য যাত্রীদের।
আর দুই পক্ষের বিরোধে সমস্যায় পড়তে হল যাত্রীদের। বাস না চলায় ট্রেকারগুলোতে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে। কোথাও আবার সরকারি বাসে ওঠার জন্য পড়েছে লম্বা লাইন। জেলায় এ দিন সরকারি বাস চলেছে মাত্র ১৩টি। এ দিন ঝাড়খণ্ড থেকে পুরুলিয়ায় বাড়ি ফিরতে পারলেন না মকরকান্তি মাহাতো, স্কুলে যেতে পারলেন না শিক্ষিকা কাবেরী রায়।
বাসস্ট্যান্ডের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি ও বাসমালিক সমিতিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ। প্রশাসন ও জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাসস্ট্যান্ড কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিলস্ট্যান্ডে ঢোকার সময়ে বাস পিছু ১৫ টাকা করে দিতে হবে এবং যে সব বাস স্ট্যান্ডে রাখার জন্য সরকারি জায়গা ব্যবহার করে সে জন্য বাসগুলিকে মাসে ১ হাজার টাকা দিতে হবে।
বন্ধ বাসের সারি। ছবি: সুজিত মাহাতো
পুরুলিয়ার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক আশিস সাহা বলেন, “আইন অনুযায়ী বাসমালিকদের কাছ থেকে ওই টাকা নিতে পারেন জেলাশাসক। শুধূ তাই নয়, আইনে উল্লেখ রয়েছেবাসের পারমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে তার নির্দিষ্ট গ্যারাজ থাকা বাধ্যতামূলক। যেহেতু বাসগুলি রাতে গ্যারাজে না থেকে বাসস্ট্যান্ডে থাকে, তাই নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী রাতে স্ট্যান্ডে বাস রাখার জন্য মাসে ১ হাজার টাকা দিতে বলা হয়েছে মালিকদের।” তিনি আরও বলেন, “কিন্তু বাস মালিকেরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাদের নোটিস পাঠানো হয়েছে।”
এই বিরোধের জেরে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাসধর্মঘট শুরু করেছেন মালিকেরা। যদিও জেলা বাসমালিক সমিতির অভিযোগ, স্ট্যান্ডে ঢোকার ক্ষেত্রে বাস পিছু প্রতিদিন ১৫ টাকার পরিবর্তে ট্রিপ পিছু ওই টাকা চাইছে বাসস্ট্যান্ড কমিটি। সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “যে বাসগুলি রাতে থাকে সে জন্য মাসে বাসপিছু ৫০০ টাকা করে দিতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন তাদের দাবি অনড়।” তাঁদের আরও অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই সরকারি শো-কজ করা হয়েছে। প্রতিভারঞ্জনবাবুর দাবি, “রাস্তায় বাস চালানোর জন্য কিছু জরুরি নথিপত্র সরাসরি দেওয়ার পরিবর্তে নিয়ম ভেঙে ডাকযোগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ওই নথি দেরিতে আসছে। ফলে বাস চালাতে সমস্যায় পড়ছেন মালিকেরা।” বাসমালিক সমিতির বক্তব্য, ২০০৬ সাল থেকে জেলায় ভাড়া বাড়েনি। বাস্তব অবস্থা না দেখে প্রশাসন কার্যত তাদের উপরে জোর করছে।
ঝুঁকির যাত্রা। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।
আরটিও বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরি সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ধর্মঘট অযৌক্তিক। প্রশাসনের অতিসক্রিয়তা ও বাস মালিকদের বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কাএই দুইয়ের বিরোধে ধর্মঘটের জেরে সমস্যায় পড়তে হল যাত্রীদের।” সমস্যা মেটানের জন্য এ দিন দুপুরে বাসমালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, “প্রশাসনের উচিত ছিল, বাসমালিকেরা ধর্মঘটে যাওয়ার আগে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করে নেওয়া। জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো হবে।”
অন্য দিকে, সরকারি কাজের জন্য বিকেল পর্যন্ত নিজের কার্যালেয় ছিলেন না জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ। তিনি বলেন, “ধর্মঘট করার আগে লিখিত ভাবে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। ফলে কী কারণে তাঁরা ধর্মঘট ডেকেছেন জানি না। তবে স্ট্যান্ডের উন্নয়নের জন্য বাসস্ট্যান্ড কমিটি নিয়ম মেনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাসমালিকেরা নিয়ম মানবে না তা হতে পারে না। আমরা ওদের ডেকে জানতে চাইব, কেন তারা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেললেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.