স্থানীয় ঝামেলাকে কেন্দ্র করে ফের জাতীয় সড়ক অবরোধের জেরে নাকাল হতে হল যানবাহন থেকে পথচারীদের। সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বনগাঁয় যশোহর রোডে ওই অবরোধ হয়।
এক তৃণমূল কাউন্সিলরের ছেলেকে মারধরের অভিযোগে রবিবার রাতে বনগাঁ শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর চালায় একদল জনতা। কয়েকজনকে মারধরের অভিযোগও ওঠে। আহত অবস্থায় এক বৃদ্ধকে বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতার ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে কয়েকশো বাসিন্দা সোমবার সকালে যশোহর রোড অবরোধ করেন। পরে বনগাঁ থানার আইসি স্বপন দে ঘটনস্থলে যান। পৌঁছে যায় গাইঘাটা থানার পুলিশও। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। এই ঘটনায় সুমতি পোদ্দার নামে ওই তৃণমূল কাউন্সিলর-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও অভিযুক্ত ওই কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ওই কাউন্সিলরের ছেলেকে দা গিয়ে কোপ মারা হয়েছিল। তবে তার জেরেই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “সমস্ত ঘটনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “দিন কয়েক আগে ওই কাউন্সিলরের ছেলেকে দা দিয়ে কোপ মারা হয়। এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এ সবের বিরুদ্ধেই মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বক্সীপল্লি, নয়াগোপালগঞ্জ ও গোলকনগরের কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর চালায় একদল জনতা। রেল লাইনের ধারের ওই বাড়িগুলি ছিল টালির ও টিনের। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে শুয়ে বৃদ্ধ কালাচাঁদ বিশ্বাস বলেন, “রবিবার রাতে হঠাৎই একদল লোক আমাদের ঘরে ঢুকে পড়ে আমাকে মারধর শুরু করে। তাদের অভিযোগ ছিল, আমার ছেলে গৌর নাকি কাউন্সিলরের ছেলেকে মারধর করেছে।” সেখান থেকে বেরিয়ে আরও কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে দলটি। এমনই একটি বাড়ির বাসিন্দা বৃদ্ধা মহারানি মৃধা বলেন, “আমার বাড়িতেও ওরা ঢুকে ভাঙচুর করে। ছেলে মিঠুনকে মারধর করে।” মহারানিদেবী বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে এলাকার কাউন্সিলরের ছেলের সঙ্গে কিছু ছেলের ঝামেলা হয়। মারধরের ঘটনাও ঘটে। মিঠুন তা ঠেকাতে গিয়েছিল। ও কাউকেই মারেনি। কিন্তু এ দিন ওই কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামীর উপস্থিতিতেই আমাদের বাড়ি ভাঙচুর, মারধর করা হয়।” কনক ঢালি নামে আর এক বাসিন্দার অভিযোগ, “কাউন্সিলরের স্বামী বিনয়রতন পোদ্দার আমাদের হুমকি দেয়, সোমবার সকাল ১১টার মধ্যে এলাকা ছেড়ে না গেলে বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। আমাকে দা দিয়ে মেরে ফেলার ভয়ও দেখানো হয়েছে।” কনকদেবীর পুত্রবধূ বিউটিদেবী বলেন, “আমি অন্তঃসত্ত্বা। রাতে শুয়েছিলাম। হঠাৎ ওরা ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালাতে শুরু করলে বাইরে বেরিয়ে আসি। ওরা বলল আমার স্বামী নাকি গুলি চালিয়েছে। কিন্তু সব মিথ্যে।” |
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই তৃণমূল কাউন্সিলারের স্বামী রেল লাইনের ধারে রোজ মদের আড্ডা বসান। প্রতিবাদ করলে ভয় দেখান। অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলার সুমতি দেবী ও তাঁর স্বামী বিনয়বাবু অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিনয়বাবুর পাল্টা অভিযোগ, “এলাকায় ১০-১৫ জনের একটি দুষ্কৃতীদল তৈরি হয়েছে। তারা রেলের মালপত্র চুরি, এলাকায় ছিনতাই-সহ নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত।” তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা তাঁদের বন্ধুদের বাড়ি পৌঁছতে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়। তাঁর ছেলে ফাল্গুনীকেও মারধর করা হয়। রবিবার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে স্থানীয় মানুষ ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে যান। বিনয়বাবুর অভিযোগ, “সেই সময় দুষ্কৃতীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তবে আমি বা আমার স্ত্রী তখন সেখানে ছিলাম না। পরে লোকজনদের বুঝিয়ে সরিয়ে আনতে সেখানে যাই।”
|