মদে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ স্থগিত দু’মাস
বিষাক্ত চোলাই খেয়ে সংগ্রামপুরে মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবারের এই নির্দেশের ফলে রাজ্য সরকার আগামী দু’মাস মৃতদের পরিবারের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি করতে পারবে না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, বিষমদ খেয়ে মৃত ১৭২ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। কোন খাত থেকে ওই টাকা দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে জল্পনা চলছিল। পরে মহাকরণ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে ‘দুর্ঘটনায় মৃত্যু’ দেখিয়েই ক্ষতিপূরণের টাকা বণ্টন করতে হবে।
বিষাক্ত চোলাই খেয়ে মৃতদের পরিবারকে আমজনতার করের টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কেন, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। টাকা বিলির আগে হাইকোর্টে দু’টি জনস্বার্থের মামলাও দায়ের করা হয়। দু’টি মামলাতেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বিষমদে মৃতদের পরিবারের জন্য করদাতাদের টাকা ব্যয় করা হবে কেন? বিষমদের কারবারিদের চিহ্নিত করতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্যও আর্জি জানানো হয়।
এ দিন মামলা দু’টির শুনানির পরে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ ক্ষতিপূরণের টাকা বণ্টন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে সিআইডি বিষমদ কাণ্ডের তদন্তে কতটা এগিয়েছে, সেই ব্যাপারে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে ডিআইজি (সিআইডি)-কে। চোলাই উৎপাদন এবং তা বিক্রি বন্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে রাজ্যের আবগারি কমিশনারকে। রাজ্য সরকারকেও আলাদা ভাবে হলফনামা পেশ করতে বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
সরকার এখন কী করবে? রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “হাইকোর্ট আট সপ্তাহ সময় দিয়েছে শুনছি। মঙ্গলবার নির্দেশের প্রতিলিপি পাব। পড়ে দেখি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তো আলোচনা হবেই। তার পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ বণ্টন স্থগিত করে দিয়ে থাকলে তা শিরোধার্য। আদালতের নির্দেশের উপরে মন্তব্য করব না। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে কি না, দেখতে হবে। রাজ্য সরকার যে-পদক্ষেপ করবে, তাতেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে।” মদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁরা সমর্থন করছেন কি? সরাসরি জবাব এড়িয়ে সূর্যবাবু বলেন, “ফসলের দাম না-পেয়ে আত্মঘাতী কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।”
বিষমদে ক্ষতিপূরণ নিয়ে দু’টি জনস্বার্থের মামলার মধ্যে একটির আবেদনকারী, আইনজীবী চিত্তরঞ্জন পাণ্ডা বলেন, মৃতেরা সবাই গরিব। তাই তাঁদের পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পেলে খরচ করে ফেলবে। সেই জন্য ওই সব পরিবারের হাতে নগদ টাকা দেওয়া উচিত নয়। তাঁর দাবি, ওই সব পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য রাজ্য সরকারকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিষাক্ত মদে মৃত সকলের পরিবার বিপিএল বা দারিদ্রসীমার নীচের বাসিন্দাদের তালিকাভুক্ত নয়। তাই সরকারের পক্ষে সব পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। জিপি-র যুক্তি, রাষ্ট্র কল্যাণকামী। তাই রাজ্য সরকার ওই সব বিপর্যস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারই অঙ্গ।
হাইকোর্টে দায়ের করা দ্বিতীয় জনস্বার্থের মামলার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, বিষাক্ত চোলাইয়ের ব্যবসা একটা সংগঠিত অপরাধ। আবগারি ও পুলিশ বেআইনি মদ বিক্রেতাদের কাছ থেকে ‘হপ্তা’ তোলে। হাইকোর্ট এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করলে ফের এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে। এর জন্য কে বা কারা দায়ী, তা স্থির করা অত্যন্ত জরুরি। সুব্রতবাবু সব বেআইনি মদের ঘাঁটি ভাঙার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান।
জিপি অশোকবাবু প্রশ্ন তোলেন, কে কোথায় বেআইনি মদ খাবে, তার দায়িত্ব রাজ্য সরকার নেবে কী ভাবে?হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি তখন জিপি-র কাছে জানতে চান, এই ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে আগে কোনও রাজ্য কি এ ভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে? অশোকবাবু বলেন, এক সময় কেরলে বিষমদে মৃতদের পরিবারকে এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। পরে তা বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করা হয়। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, গোটা বিষয়টি নিয়ে আগে রাজ্য সরকার, আবগারি দফতর এবং সিআইডি-র বক্তব্য জানা দরকার। আবেদনকারীরা কী জবাব দেন, দেখা দরকার সেটাও। সব রিপোর্ট যাচাই করে হাইকোর্ট পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে। ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি আট সপ্তাহ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বিচারের স্বার্থেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.