জখম প্রৌঢ় ঘণ্টাখানেক পড়ে থাকলেন রাস্তায়
বেলা সাড়ে এগারোটায় স্বর্ণময়ী বাজারে তখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। চারপাশে অনেক লোক। কিন্তু রাস্তার পাশেই পড়ে থাকা এক প্রৌঢ়কে পৌঁছে দেওয়া গেল না বাজারের উল্টো দিকের হাসপাতালে।
সোমবার সকালে হঠাৎ মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন ওই প্রৌঢ়। তারপরে একটি ট্রাক এসে তাঁকে ধাক্কা দেয়। বহরমপুর লাগোয়া সারগাছি মহিষাস্থলীর বাসিন্দা অনাথ পাল নামে বছর বাহান্নর ওই ব্যক্তি ভরা বাজারের সামনেই সেই অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকেন প্রায় ঘণ্টা খানেক। ওই বাজারের কাছাকাছি স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁর মালিক সুশান্ত দাস একা হাতে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। প্রায় সংজ্ঞাহীন অনাথবাবুকে কোনওমতে তিনি রাস্তার ধারে নিয়ে আসেন। কিন্তু অনাথবাবুকে তাঁর একার পক্ষে রিকশায় তোলা সম্ভব হয়নি। রিকশাও তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি কেউই। তিনি তখন পুলিশকে খবর দেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে তারপরে অনাথবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। নিউ জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা ডেপুটি সুপার আনন্দ মণ্ডল বলেন, “এটা অমানবিক ঘটনা! আচমকা রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময়ে মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সময় মতো চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। তবে যে কেউ এসে খবর দিলেই আমরা অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিকে ভর্তির ব্যবস্থা করতাম।” কেন সকলের চোখের সামনে পড়ে থাকা সত্ত্বেও অনাথবাবুকে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাননি? স্বর্ণময়ী বাজার কমিটির সম্পাদক সুবল হালদার বলেন, “বাজারে তখন খরিদ্দারের ভিড়। বেচাকেনার সময়ে অন্য কোনও কিছু নিয়ে ভাবার সময় কোথায় মানুষের?” তিনি বলেন, “এটাও সেই সঙ্গে ঠিক যে, অচেনা কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে পুলিশের প্রশ্নে জেরবার হতে হয়। তাই অনেকেই মনে করেন, কী দরকার ঝামেলায় জড়ানোর?” এ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “আগে কী হয়েছে আমি জানি না। তবে আমি জেলার সব থানাকে নির্দেশ দিয়েছি, এই রকম পরিস্থিতিতে কাউকে যেন কোনওরকম হয়রানির মুখে পড়তে না হয়।” সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ রোগী বা পথচলতি সাধারণ মানুষ কখনও কোনও বিপদে পড়লে খবর পেয়েই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া পুলিশের কর্তব্য। আমি জেলার সমস্ত পুলিশ অফিসারদের কাছে স্পষ্ট করে সে কথা জানিয়েছি। বহরমপুরের পাশাপাশি অন্য থানার অফিসারেরাও একই ভূমিকা পালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে স্বর্ণময়ী বাজারের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে যাচ্ছিলেন ওই প্রৌঢ়। আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ার আগে ওই পথ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রাক্টরের ধাক্কা লাগে তাঁর ডান পায়ে। সুশান্তবাবু বলেন, “ট্রাক্টরের ধাক্কা লাগার পরেই তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার উপরে পড়ে যান। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রিকশা ডাকলেও কেউ সাড়া দেয়নি। ওই ব্যক্তিকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে একা সম্ভব ছিল না। তাই কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরে পুলিশকে ফোন করি।” সুশান্তবাবু ওই ব্যক্তির চোখে-মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরানোরও চেষ্টা করেন। তাঁর অভিযোগ, “স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পথচলতি মানুষ সকলেই দাঁড়িয়ে দেখলেও ওই প্রৌঢ়ের সাহায্যের জন্য কাউকে পাশে পাইনি। শেষ পর্যন্ত বহরমপুর থানায় ফোন করে খবর দিই।” রিকশা ভাড়ার টাকাটা দেন পুলিশ অফিসার অনন্ত বিশ্বাস। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “এই ঘটনায় আমি আশ্চর্য হচ্ছি না। এর আগেও কলেজ যাওয়ার পথে এক জন অসুস্থ ব্যক্তিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছি। আমিও একবার রিকশা থেকে ছিটকে রাস্তায় বেশ কিছু ক্ষণ পড়েছিলাম। কেউ এগিয়ে আসেননি। নাগরিক সভ্যতা আমাদের যান্ত্রিক করে তুলেছে, এই সব ঘটনা তারই প্রমাণ।” বহরমপুর গার্লস কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষিকা রত্নাবলী বিশ্বাস বলেন, “পরিস্থিতির চাপে এখন মানুষ আত্মকেন্দ্রীক হয়ে পড়ছে। নিজের গণ্ডির বাইরে আমরা অন্য কিছু ভাবতে ভুলে গিয়েছি। এই ঘটনা যে কোনও দিন আমার সঙ্গেও ঘটতে পারেএই বোধটাই তাঁদের কাজ করে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.