অবিলম্বে উৎপাদন চালু এবং বকেয়া পাওনার দাবিতে এ বার দিল্লি রোড অবরোধ করলেন হুগলির শ্রীরামপুরের স্পিনিং মিলের কর্মীরা। সোমবার সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু-র নেতৃত্বে ওই আন্দোলন হয়।
মিল সূত্রের খবর, প্রায় সাত মাস ধরে সেখানে উৎপাদন বন্ধ। দ্রুত উৎপাদন চালু এবং বকেয়ার দাবিতে সিটুর পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে আসছে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনও। তৃণমূলের সংগঠন আইএনটিটিইউসি এবং কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, রাজ্য সরকার যখন মিলের পুনরুজ্জীবনের ব্যবস্থা প্রায় পাকা করে ফেলেছে, তখন সিটু ‘অবরোধের রাজনীতি’ করে মানুষকে হয়রান করছে।
শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের রাজ্যধরপুর পঞ্চায়েতের সিমলায় দিল্লি রোডের ধারে অবস্থিত ওই মিলটি রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন। এক সময় রমরম করে মিল চললেও বামফ্রন্ট শাসনের শেষ দিকে অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরেই মিলটি ধুঁকতে থাকে। ‘ইচ্ছে করে’ লক্ষ লক্ষ টাকায় কেনা যন্ত্রপাতি ফেলে রেখে নষ্ট করারও অভিযোগ ওঠে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চলছিল শ্রমিকদের। গত বছরের জুলাই মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের দাবি, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বেতন মেলেনি। দুর্গাপুজোর বোনাস বা অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধাও পাননি তাঁরা। এই মূহূর্তে মিলে ৫৪২ জন শ্রমিক রয়েছেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে শ্রমিকদের এক মাসের বেতন মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি বেতনও মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। |
সিটুর অভিযোগ, প্রশাসন দ্রুত উৎপাদন চালু করতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। কবে মিল খুলবে, সে বিষয়ে শ্রমিকেরা অন্ধকারে। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ মিল-সংলগ্ন বাঙ্গিহাটি মোড়ে দিল্লি রোড অবরোধ করেন শ্রমিকরা। সিটু নেতা জীবন পাল বলেন, “যত দিন পর্যন্ত অভাবের তাড়নায় কোনও শ্রমিক আত্মঘাতী না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত বোধ হয় সরকারের টনক নড়বে না। শ্রমিকদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।”
শ্রীরামপুরের প্রাক্তন সাংসদ, সিটু নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রাজ্যের কুটির শিল্প মন্ত্রী মানস ভুঁইঞাকে দু’টি চিঠি দিয়েছি। ফোন করেছি। শ্রমমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সরকার দর্শক হয়ে বসে রয়েছে। শুধু শ্রীরামপুর নয়, কল্যাণী এবং রায়গঞ্জের সুতোকলেও একই পরিস্থিতি।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই মিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য নির্দিষ্ট প্রস্তাব এনেছে সরকার। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী মানস ভুঁইঞার বিস্তারিত কথাও হয়েছে। শান্তশ্রীবাবু বলেন, “সরকার কী চাইছে, তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হোক। আমি যত দূর জানি, এ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।”
শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের বক্তব্য, “পূর্বতন সিপিএম সরকার মিলটি বাঁচানোর জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি। আর এখন মিথ্যে কথা বলছে।” কংগ্রেসের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ নাথেরও বক্তব্য, “সিপিএম লোক দেখানো আন্দোলন করছে। আসলে মিলের এই অবস্থা হয়েছে তাদের ব্যর্থতাতেই।” বিধায়ক সুদীপ্তবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী মানস ভুঁইঞা মিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য প্যাকেজ করেছেন। সেই প্যাকেজ অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের অনুমতি মিললেই একটি লাভজনক সংস্থায় রূপান্তরিত হবে এই মিল।”
এ দিন অবরোধের ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তায় সারি দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। নাকাল হন রাস্তায় বেরনো মানুষজন। পরে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া লিখিত ভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বেলা ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে। পুলিশ জানায়, স্মারকলিপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। |