জোট-বার্তা সিঙ্ঘভিরও
প্রণব-মমতার যৌথ সফর মানসের সবংয়ে
শাসক জোটে ‘টানাপোড়েনে’র আবহেই প্রণব মুখোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়াদের নিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেচমন্ত্রী মানসবাবুর ‘খাসতালুক’ সবংয়ে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদীর তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হওয়ার কথা আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ফোনে অনুরোধ জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণববাবুকে। তিনি সম্মতি দেওয়ার পরেই সরকারি আধিকারিকদের অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার এ দিনই কলকাতায় দলীয় এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে ‘জোটের বার্তা’ই দিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় মুখপত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি বলেছেন, “কংগ্রেস জোট ভাঙবে না। ভাঙার প্রশ্নও নেই। কারণ রাজ্যে ও দিল্লিতে তৃণমূল আমাদের সঙ্গে জোট গড়েই সরকার চালাচ্ছে। আর পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর সিপিএমের অপশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা দু’দল জোট বেঁধে লড়াই করেছি। আমাদের জোট সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সংখ্যায় আমরা নগণ্য ঠিকই। কিন্তু আমরাও এই সরকারে আছি।”
ঘটনাচক্রে, প্রণববাবুকে নিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য মমতার এ দিনের উদ্যোগ সিঙ্ঘভির বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই। একই দিনে পিঠোপিঠি এই দুই ঘটনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই জোট শিবিরের একাংশের অভিমত।
দলীয় মুখপত্রের উদ্বোধনে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও প্রদীপ ভট্টাচার্য।
বস্তুত, কিছু দিন ধরে ধানের সহায়ক মূল্যের দাবি, সল্টলেকে ইন্দিরা ভবনের নাম বদল বা মমতার উপরে গুলিচালনার ঘটনায় অভিযুক্ত মোক্তারকে কংগ্রেসে নেওয়া-সহ একগুচ্ছ প্রশ্নে দুই শরিকের টানাপোড়েন চলছিল। তার উপরে চাষি-মৃত্যু, শিশুমৃত্যু নিয়ে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের মন্তব্য ঘিরে পরিস্থিতি ‘উত্তপ্ত’ হয়েছে। এই অবস্থায় সবংয়ের অনুষ্ঠান দুই শরিকের ‘তিক্ততা’ কিঞ্চিৎ প্রশমিত করতে পারে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের ধারণা। বর্তমানে শরিকি টানাপোড়েনে কংগ্রেস নেতৃত্ব ‘স্বস্তি’তে নেই। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড তো বটেই, প্রণববাবুও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাস্তায় নেমে আন্দোলন’ না-করার পরামর্শ দিয়েছেন। দলীয় এক কর্মসূচিতে এ দিন কলকাতায় এসে সিঙ্ঘভিও প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একই ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, সিঙ্ঘভি তাঁদের স্পষ্ট বলেছেন মনে রাখতে হবে লোকসভায় তৃণমূলের ১৯ জন সাংসদ আছেন। এখন কোনও অবস্থাতেই তৃণমূল নেতৃত্বকে ‘বিরক্ত’ করা চলবে না।
সামনে কেন্দ্রীয় বাজেট পাশ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো বিষয়ের কথা মাথায় রেখেই দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্ব শরিক তৃণমূলের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ বজায় রাখতে আগ্রহী। সিঙ্ঘভি এ দিন প্রকাশ্যে মমতার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ব্যাপারেও ‘সতর্ক’ ছিলেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, বারবার বলা সত্ত্বেও কেন্দ্রের কাছ থেকে কোনও আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। সিঙ্ঘভি বলেন, “কেন্দ্র ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো উন্নয়ন ও কিছু প্রকল্পের জন্য ৭,৮০০ কোটি টাকা রাজ্যকে দিয়েছে। রাজ্যের সমস্যার দিকে কেন্দ্রের নজর নেই, এমন কথা ভাবা ঠিক নয়।” শিশু বা কৃষক-মৃত্যু নিয়েও তাঁরা যে সরকারকে ‘হেয়’ করতে সমালোচনা করছেন না, তা-ও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপত্রের এ দিন আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন সিঙ্ঘভি। তার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ দলীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই তিনি বলেন, “এটা গঠনমূলক সমালোচনা। এই সমালোচনা কংগ্রেস করছে, কারণ আমরা চাই সরকার ও প্রশাসন যেন ঠিক পথে চলে।”
প্রণব-মমতার একই সঙ্গে সবং-যাত্রার উদ্যোগের জন্য ‘সবংয়ের মানুষের পক্ষ থেকে’ মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন সেচমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানসবাবু। ওই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শিশির অধিকারী, তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ও এলাকার বিধায়কদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বলে মানসবাবু জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “১৭ তারিখ সবংয়ের মানুষের কাছে ঐতিহাসিক দিন। গত ৩৪ বছর ধরে যে কাজ বাম সরকার করেনি, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রণবদার উদ্যোগে তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে।” তিনি জানান, ২০০৯-১০ সালের বাজেটে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদীর সংস্কার ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের কাজে ৬৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে প্রণববাবুর উদ্যোগেই। এ বার সেই কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী, শিশিরবাবু, শুভেন্দু ও এলাকার সমস্ত বিধায়কের সহযোগিতা তাঁরা পেয়েছেন বলে মানসবাবু উল্লেখ করেন।
কংগ্রেসের কর্মীদের উপরে তৃণমূলের হামলার অভিযোগ নিয়ে প্রদীপবাবু ইতিমধ্যে চারটি চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু কোনও চিঠিরই উত্তর তিনি পাননি বলে প্রদীপবাবু জানিয়েছিলেন। সিঙ্ঘভি অবশ্য এই বিষয়ে প্রশ্নকে তেমন ‘গুরুত্ব’ দেননি। তাঁর বক্তব্য, “কাউকে আক্রমণ করা বা কোনও দলীয় দফতরে হামলা চালানো অপরাধ। এই অপরাধ বন্ধ করা পুলিশের কাজ। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করেছি। এখন পুলিশ কী করে, সেটাই দেখতে হবে।”
মনোজ চক্রবর্তীর বদলে অন্য কাউকে মন্ত্রী করা হবে কি না, জানতে চাইলে সিঙ্ঘভি বলেন, “রাজনীতিতে কোনও স্থানই শূন্য থাকে না। যখন আমাদের অধিকার নিশ্চিত হবে, তখন কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ভাবা যাবে।” মমতা কংগ্রেসকে ‘সিপিএমের বি-টিম’ বলে যে কটাক্ষ করেছিলেন, সেই বিষয়টিও এড়িয়ে গিয়েছেন সিঙ্ঘভি। এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মমতা কী বলেছেন, তা আমি জানি না। তবে এই অভিযোগ ঠিক নয়। কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও যোগই নেই।”
তবে সিঙ্ঘভি এ দিন যা বলেছেন, তা নিয়ে তৃণমূলের নেতৃত্ব কোনও মন্তব্য করেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.