সরস্বতীর ভাসানে তারস্বরে মাইক,
প্রহৃত প্রতিবাদী, ইটে চোখও জখম
রস্বতী পুজোর বিসর্জনেও মাইকের উপদ্রব। এবং তার বিরুদ্ধে সরব হয়ে ফের আক্রান্ত প্রতিবাদী।
শনিবার রাতে পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার হেরবনা গ্রামের ঘটনা। আহত রামচন্দ্র গরাইয়ের ‘অপরাধ’, তিনি বিসর্জনে পাড়ার যুবকদের তারস্বরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করেছিলেন। তার জেরে প্রথমে তাঁকে মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। ইটের ঘায়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে দেওয়া হয় তাঁর একটি চোখ। শনিবার রাতে প্রথমে বরাবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে রবিবার সকালে রামচন্দ্রবাবুকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিন বরাবাজার থানায় এলাকারই চার যুবকের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ অবশ্য এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।
বছর চল্লিশের রামচন্দ্রবাবুকে পুরুলিয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে বরাবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর মুখের বাঁ দিকটা তখনও রক্তাক্ত। বাঁ চোখটা বোজা। চোখের মণি যেন থেঁতলে কোটরে ঢুকে গিয়েছে। চোখের ঠিক নীচের অংশে জমাট বেঁধে আছে রক্ত। কপালের ক্ষতে ব্যান্ডেজ। মুখে কালশিটে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, রামচন্দ্রবাবুর চোখের বাইরে যথেষ্ট আঘাত রয়েছে। ভিতরের আঘাত কতটা, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
শব্দদূষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রতিবাদীর মৃত্যুও দেখেছে এই রাজ্য। বেশ কয়েক বছর আগে এ রাজ্যের প্রথম ‘শব্দ শহিদ’ হন শ্রীরামপুর-পিয়ারাপুরের দীপক দাস। তিনি কালীপুজোয় শব্দবাজির প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই মামলাটির আজও ফয়সালা হয়নি। ২০১০ সালেও শব্দবাজির প্রতিবাদ করে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা বকুল অধিকারীকে প্রাণ হারাতে হয়। মার খান তাঁর দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূও। গত বছর হলদিয়ার দুর্গাচকে ক্লাবের ছেলেদের মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হন এক প্রাথমিক শিক্ষক। এ বার শব্দাসুরের চেলাদের নৃশংসতার শিকার হলেন পুরুলিয়ার রামচন্দ্রবাবু।
প্রতিবাদের ‘সাজা’। জখম রামচন্দ্র গরাই। ছবি: সুজিত মাহাতো
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সরস্বতী পুজো ২৮ জানুয়ারি হলেও তার প্রতিমা বিসর্জন দিতে এত দেরি হল কী করে? ওই গ্রামের যুবকরা কি পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অনুমোদন নিয়েছিলেন? পুজোর উদ্যোক্তাদের অবশ্য সাফাই, গ্রামের এই একটিই বারোয়ারি সরস্বতী পুজো। সবাই মিলে এই পুজো করেন। ফলে এত দিন পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন তাঁরা মনে করেননি। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, “মামলা শুরু হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। ভবিষ্যতে এ রকম যাতে না হয়, তা স্থানীয় পুলিশকে দেখতে বলেছি। এ ক্ষেত্রেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বরাবাজারের এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “গ্রামে এ রকম পুজো বহু হয়। এ সব ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে অনেকেই আসেন না। আমাদের পক্ষেও কোথায় কোথায় পুজো হচ্ছে, তার খোঁজ পাওয়া শক্ত।”
কী ঘটেছিল শনিবার রাতে? পেশায় মুরগি ব্যবসায়ী রামচন্দ্র বাবু বলেন, “শনিবার ব্যবসা সেরে বাড়ি পৌঁছে দেখি, বাড়ির সামনে সরস্বতী প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলছে। মাইক আর সাউন্ডবক্সের বিকট শব্দে কান পাতাই দায়। বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা মা রয়েছে।” গ্রামের কিছু যুবককে ডেকে তিনি আওয়াজটা একটু কমাতে বলেন। যুবকরা সেই অনুরোধে কান দেয়নি। বরং আওয়াজ আরও বাড়িয়ে দেয়। রামচন্দ্রবাবু বলেন, “হঠাৎই চার পাঁচ জন যুবক আমাকে ঘিরে ধরে অশ্লীল ইঙ্গিত করতে থাকে। আমি প্রতিবাদ করলে গ্রামেরই ছেলে বৃহস্পতি মাহাতো আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এর পর বৃহস্পতি, ভাস্কর, সুখেন, অশোক মাহাতোরা আমাকে ঘিরে ধরে কিল-চড়-ঘুসি মারতে থাকে। রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ইট তুলে ছুড়তে থাকে আমাকে লক্ষ করে। একটা ইট আমার বাঁ চোখে লাগে।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রামচন্দ্রবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে গণেশ গরাই যোগ করেন, “মামা ইটের আঘাতে লুটিয়ে পড়েছিলেন। কিছু ক্ষণ অজ্ঞানও হয়ে পড়েন। আমরা কোনও রকমে টেনে বাড়িতে ঢোকাই। জ্ঞান ফেরার পরে অনেক চেষ্টায় গাড়ি জোগাড় করে মামাকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাই।” রামচন্দ্রবাবুর বৃদ্ধা মা ফুলমণি গরাই বলেন, “ওই আওয়াজে কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। শোভাযাত্রা পেরিয়ে যাওয়ার পরে দেখি রাম মাটিতে পড়ে রয়েছে।” গণেশবাবুর দাবি, তাঁর মামার পকেটে ব্যবসার কয়েক হাজার টাকা ছিল। তা-ও খোয়া গিয়েছে গণ্ডগোলের সময়। মাইক বাজানো নিয়ে তর্কাতর্কির কথা স্বীকার করলেও অভিযুক্ত বৃহস্পতি মাহাতো, ভাস্কর মাহাতোদের অবশ্য দাবি, “মারধরের অভিযোগ মিথ্যা। রামচন্দ্রবাবুর সঙ্গে বচসা হয়েছিল। উনি মাইক বন্ধ করতে বলেছিলেন। সেই সময় দলের কয়েকটি ছেলে বলে, সরস্বতী পুজার ভাসান উপলক্ষে আমরা একটু আনন্দ করি। উনি মানতে চাননি। আমাদের গালিগালাজ করেন। সেই সময় কেউ ঠেলে ফেলে দেয়। তবে কেউ মারধর করেনি। মনে হয়, পড়ে গিয়ে উনি চোট পেয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.