পুলিশের ফোন পেয়ে মাকে ঘরে ফেরাল ছেলে
কটা কলাইয়ের বাটি। তাতে চায়ে ভেজানো সামান্য কয়েকটি মুড়ি। নবদ্বীপের একটি আশ্রমের চাতালে এক দল ভিক্ষাজীবীর মধ্যে একটু জবুথবু হয়েই বসেছিলেন তিনি।
শহরের পোড়া মা তলার দুই যুবক তরুণ সাহা এবং সুকু দাসের নজরে পড়ে, এই বৃদ্ধা অন্যদের মতো নন। তিনি কারও কাছ থেকে ভিক্ষাও চাইছিলেন না। তাঁরাই তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, দিন পাঁচেক ধরে এই শহরের বিভিন্ন রাস্তা, চাতালই ছিল কলকাতার বেহালার মাইতি পাড়ার বাসিন্দা তরুবালা মাইতি নামে ওই বৃদ্ধার আশ্রয়। তাঁরা তরুবালাদেবীকে নিয়ে যান পুলিশের কাছে। সেখানে তরুবালাদেবী জানিয়েছেন, ছেলের সঙ্গে পুণ্যক্ষেত্র নবদ্বীপে তীর্থ করতে এসে হঠাৎ একা হয়ে গিয়েছেন। ছেলে কোথায় চলে গিয়েছে তা তিনি জানেন না। কোনওমতে এই মাঘের শীতে রাত কাটিয়েছেন ক’টা দিন। পেটে প্রায় কিছুই পড়েনি। কেবল ছেলেকে খুঁজেছেন।
নবদ্বীপ থানার আইসি শঙ্করকুমার রায়চৌধুরী বলেন, “ওই বৃদ্ধার কথা শুনে আমরা বুঝতে পারি, তাঁর ছেলে তাঁকে নবদ্বীপে ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকেই আমরা তাঁর ছেলের ফোন নম্বর পাই। ফোন করে তাঁর ছেলেকে তারপরে নবদ্বীপে আসতে বলা হয়। শনিবার সকালে এসে তিনি তাঁর মা’কে নিয়ে গিয়েছেন।”
তরুবালাদেবীর ছেলে দুলাল মাইতির কাছ থেকে পুলিশ একটি মুচলেকাও লিখিয়ে নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা

তরুবালা মাইতি
গিয়েছে, ওই মুচলেকায় দুলালবাবু লিখেছেন, মা’কে আর কোনওদিন অবহেলা করবেন না, মায়ের ভরনপোষণের দায়িত্ব তিনিই বহন করবেন।
দুলালবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “আমি মা’কে নিয়ে আসিনি। মা যে নবদ্বীপে তা-ও জানতাম না। সম্প্রতি মা আমার কাছে থাকতেন না। কী ভাবে তিনি নবদ্বীপে এলেন, তা-ও বলতে পারব না। তবে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে মা’কে বেহালার বাড়িতে নিয়ে এসেছি। মা-কে আর কারও কাছে পাঠাব না।” ট্যাক্সি চালিয়ে সংসার চালান দুলালবাবু। বেহালায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে তাঁদের চার জনের সংসার। তরুবালাদেবী বলেন, “আমার দুই সন্তান। অল্প বয়সেই ওদের বাবা মারা যান। তারপর বাড়ি বাড়ি রান্না করেই ওদের বড় করেছি। বিয়ে হয়েছে দু’জনেরই। নাতি-নাতনিদের জন্ম হয়েছে। তারপরে আমার স্থান কখন সংসার থেকে সরে গিয়েছে, সে কথা বুঝতেই পারিনি।” তরুণবাবু বলেন, “মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। ওই দিন সকালে ছেলেকে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর কাঁদতে থাকেন।”
তরুবালাদেবী নিজের সংসারে ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু এই শহরের মঠ-মন্দিরের বারান্দায় বহু অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে দেখা যায়, তাঁদের ক’জন স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন, ক’জনকে রেখে দিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা বোঝা দায়। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “ওই বৃদ্ধা যে ভিক্ষুক নন, তা শহরের দুই বাসিন্দা বুঝতে পেরেছিলেন বলেই বাঁচোয়া। কিন্তু শহরে রোজ এত লোক আসেন-যান যে, এ ভাবে নজরদারি রাখা অসম্ভব। এই প্রজন্ম আরও মানবিক না হলে, এই সমস্যা কাটানো শক্ত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.