নেতাই ‘কাঁটা’ই সিপিএমের
মাওবাদী-তৃণমূল ‘সংস্রব’ প্রসঙ্গও ফের প্রতিবেদনে
লের ২১ তম জেলা সম্মলন উপলক্ষে গত বুধবার মেদিনীপুরে প্রকাশ্য সমাবেশে মাওবাদী-তৃণমূল ‘সংস্রবে’র অভিযোগ নিয়ে ফের সরব হয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। জঙ্গলমহলের জেলার সমাবেশে আপাতত জঙ্গলে ‘শান্তি’র ব্যাখ্যায় সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূলের মদতেই মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল। সরকারে এসে তৃণমূল নেতৃত্ব সেই ‘মদত’ প্রত্যাহার করাতেই আপাত শান্তি। এর মাধ্যমে মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাত নিয়ে তাদের অভিযোগই প্রমাণ হচ্ছে বলে দাবি সিপিএমের।
বস্তুত, জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে জেলা সম্পাদক দীপক সরকারও জঙ্গলমহলে অশান্তির মূলে মাওবাদী-তৃণমূল সংস্রবকেই দায়ী করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মাওবাদীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে বনাঞ্চলের সমস্ত রকম নাশকতার জন্য সিপিএমকে দায়ী করার রাজনীতিই ছিল তৃণমূল নেত্রীর হাতিয়ার। আমরা প্রথম থেকে বলেছিলাম, তৃণমূল কংগ্রেস মদত দেওয়া বন্ধ করলে মাওবাদীরা এক দিনও পশ্চিমবঙ্গে পা রাখতে পারত না। ক্ষমতায় এসে কয়েক মাস মাওবাদীদের সঙ্গে দর কষাকষি করে অবশেষে যৌথ বাহিনীকে সক্রিয় করে। যে কিষেণজি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছিলেন শেষ পর্যন্ত সে খুন হয় তাঁরই নির্দেশে। ক্ষমতায় এসে তৃণমূল কংগ্রেস মাওবাদীদের সঙ্গ ত্যাগ করায় মাওবাদীরা ওই এলাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ঘটনা আমাদের অভিযোগকেই সঠিক বলে প্রমাণ করল’।
এক সময়ে তাঁদের সম্পর্কে ‘মিথ্যাচার’ করে এখন তৃণমূল নেত্রীকে ঢোক গিলতে হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের সর্ডিহা স্টেশনে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে বর্বরোচিত নাশকতায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত দেড় শতাধিক মানুষের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তথাকথিত সুশীল-সমাজ ও রেলমন্ত্রী এই ঘটনার সমস্ত দায় সিপিএমের উপর চাপিয়ে দেন। লালগড় ব্লকের নেতাইয়ে তৃণমূল-মাওবাদীরা গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়। ৯ জন সাধারণ মানুষ মারা যান। এই ঘটনায় সিপিএমকে দোষী করে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমস্ত প্রতিক্রিয়ার শক্তি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে সমর্থ হয়। উভয় ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়। তৃণমূল ও রেলমন্ত্রী সিবিআই তদন্তের দাবি করেন। জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সূত্রে জানা গিয়েছে, মাওবাদীরাই এই দুর্ঘটনার জন্য সর্বতোভাবে দায়ী। তদানীন্তন রেলমন্ত্রী, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীও এখন বলছেন, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার পিছনে মাওবাদীরা যুক্ত ছিল’।
জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডের সঙ্গে এক অনুচ্ছেদে ‘নেতাই’ প্রসঙ্গ উল্লেখ নিয়ে অবশ্য সিপিএমেই প্রশ্ন উঠছে। জ্ঞানেশ্বরীতে না হয় সিবিআই-ও মাওবাদীদেরই দায়ী করে চার্জশিট দিয়েছে। তাতে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু নেতাই-কাণ্ডে সিবিআই চার্জশিটে অভিযুক্ত যে সিপিএম নেতারাই (চার্জশিটে নাম থাকা অনুজ পাণ্ডেরা পুনর্নির্বাচিত জেলা কমিটিতেও)! নেতাই নিয়ে তৃণমূলের অভিযোগই যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে!
তবু, জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডের সঙ্গে একই অনুচ্ছেদে নেতাইয়ের উল্লেখ ‘কৌশলগত’ কারণে বলেই ব্যাখ্যা সিপিএমের নব-গঠিত জেলা কমিটির এক সদস্যের। তাঁর বক্তব্য, “নেতাই নিয়ে যাই বলা হোক না কেন, আমাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হবে না। ওই ঘটনায় শুধু তো জেলায় নয়, রাজ্য জুড়েই পার্টি বিড়ম্বনায় পড়ে। অরাজনৈতিক লোকেদের হাতে পার্টির কর্তৃত্ব চলে গেলে যা হয়, নেতাইয়ে ঠিক তাই ঘটেছিল। নেতাই নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ সীমিত। মুখরক্ষায় কৌশলগত ভাবেই জ্ঞানেশ্বরী প্রসঙ্গের সঙ্গে নেতাইয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।” জেলা কমিটির ওই নেতার বক্তব্য, “অন্তত এটা বলার সুযোগ থাকছেজ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে আমরা যা বলেছিলাম তা সিবিআই থেকে শুরু করে তৃণমূল নেত্রীও মেনে নিচ্ছেন। নেতাই-কাণ্ডে সিবিআই আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে চার্জশিট দিয়েছে তো কী, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরছি না। অন্তত এটা তো দাবি করা যাবে, জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে আমাদের কথাই যেমন সবাইকে মানতে হয়েছে, নেতাইয়ের ষড়যন্ত্রও এক দিন ফাঁস হবে। সে আসলে হোক বা না হোক।”
জঙ্গলমহলের অনতি-অতীতের পর্যালোচনায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এক সময় জেলার পশ্চিমাংশে যৌথ বাহিনীর অভিযান ও গণপ্রতিরোধের ফলে মাওবাদীরা কোণঠাসা হয়। পিছু হটে। ফলে লালগড় ও পাশাপাশি এলাকাগুলিতে প্রাণের স্পন্দন ফিরে আসে। প্রশাসনের উপরে ভয়ার্ত মানুষ কিছুটা ভরসা পায়। কিন্তু, সাঁকরাইল থানা আক্রমণ করে পুলিশ হত্যা, ওসিকে অপরহণ, থানার অস্ত্র লুঠ ও বেলপাহাড়ির শিলদায় যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ, অস্ত্র লুঠ, নির্বিচারে জওয়ানদের হত্যা সমগ্র জেলায় ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করে। তার পরেই যৌথ বাহিনীর দুর্বলতা নজরে আসে’। প্রতিবেদনে বার বার ‘গণপ্রতিরোধে’র উল্লেখ করে জেলা সম্পাদক বোঝাতে চেয়েছেন, সেই প্রতিরোধের ফলেই মাওবাদীদের চূড়ান্ত ভাবে কোণঠাসা করা সম্ভব হয়। প্রতিবেদনে ‘দৃপ্ত’ শব্দবন্ধে বলা হয়েছে, ‘বর্বরোচিত আক্রমণ মোকাবিলায় পথ দেখায় গোয়ালতোড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মার্শাল মুর্মু। এনায়েতপুরে বিড়ি শ্রমিক ও ঘরছাড়া পরিবারের মানুষজন মাওবাদী হামলা রুখে দেয়’।
তার পরেও বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল-সহ গোটা জেলাতেই বিপর্যয় হয়েছে সিপিএমের। সম্মেলন-উত্তর জেলা-পার্টি যে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র অনুপ্রেরণা খুঁজবে মার্শাল, এনায়েতপুরের শ্রমজীবীর সংগ্রামের ঐতিহ্যেতা বলাই বাহুল্য। তবে সম্পাদকের সতর্কবাণী: ‘ঘুরে দাঁড়ানোর উপাদানগুলি স্বয়ংক্রিয় নয়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হবে না। চাই সংগঠিত উদ্যোগ এবং পরিকল্পিত কাজ’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.