পরিবর্তনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বিনিয়োগের বাজার। শিখর ছুঁয়ে নামতে শুরু করেছে মূল্যবৃদ্ধি। এ বার সুদের নামার পালা। আবার আসতে শুরু করেছে বিদেশি লগ্নি। এরই মধ্যে বেশ খানিকটা নেমেছে ডলারের দাম। কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে শেয়ার বাজার। বাজার তেজী হওয়ায় বিলগ্নীকরণের পথে হাঁটার কথা নতুন করে ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। সব মিলিয়ে পরিবর্তনের হাওয়া সর্বত্র। এই হাওয়া বদলের প্রভাব পড়বে বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পে। পরিবর্তনের এই সন্ধিক্ষণে সঞ্চয়কারীদের সজাগ থাকতে হবে সর্বদা। আজ আমরা একনজরে দেখে নেব কোন প্রকল্পে কী ধরনের নতুনত্ব আসতে পারে এবং পরিবর্তনের মুখে লগ্নিকারীদের কী করা উচিত। |
এরই মধ্যে পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন প্রকল্পে। পিপিএফ বাদে আকর্ষণ কমেছে অন্য প্রকল্পগুলির। পিপিএফ প্রকল্পে সুদ বেড়ে হয়েছে ৮.৬ শতাংশ। বাৎসরিক লগ্নির সীমা ১ লক্ষ টাকা। করদাতাদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। অন্য দিকে মাসিক আয় প্রকল্পে সুদ বেড়ে ৮.২ শতাংশ হলেও তুলে নেওয়া হয়েছে মেয়াদ শেষে ৫ শতাংশ বোনাস। তুলনায় ব্যাঙ্ক সুদের হার এখনও অনেক ভাল। ব্যাঙ্ক সুদের সঙ্গে তুলনা করলে আকর্ষণ বাড়েনি জাতীয় সঞ্চয়পত্রেরও। |
সুদের হার বেশ আকর্ষণীয়। কিছু দিনের মধ্যেই সুদ কমতে শুরু করবে ধরে নিয়ে এখনই দীর্ঘ মেয়াদে টাকা গচ্ছিত করা যায় ব্যাঙ্কে। নিয়মিত টাকা জমানোর জন্য খোলা যেতে পারে রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট-ও। কর সাশ্রয়ের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পে টাকা রাখা যায় ব্যাঙ্কে। সাধারণ মেয়াদি আমানতে বর্তমান সুদের হার কমবেশি ৯.২৫ শতাংশ (মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে), প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই হার ০.২৫ থেকে ০.৫ শতাংশ বেশি। |
ঋণপত্র নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড (ডেট ফান্ড) |
সুদের হার কমতে শুরু করলে বাড়বে সরকারি ঋণপত্র এবং বন্ডের বাজার দর। এই কথা মাথায় রেখে সুদ কমার আগেই লগ্নি করা যেতে পারে বন্ড ফান্ড এবং ইনকাম ফান্ডে। বিবেচনা করা যেতে পারে মাসিক আয় প্রকল্পের কথাও। |
বলা যায়, মন্দা কেটেছে শেয়ার বাজারে। গত ৫ সপ্তাহ ধরে একনাগাড়ে উঠে সেনসেক্স ছাড়িয়েছে ১৭,৬০০ পয়েন্ট। ফলে ন্যাভ্ বেড়েছে প্রায় সব ইক্যুইটি প্রকল্পের। সুদের হার কমতে শুরু করলে বাজার আরও উপরে যাবে ধরে নিয়ে সুবিন্যস্ত প্রকল্পে লগ্নি শুরু করা যেতে পারে। সাবধানী মানুষেরা লগ্নি করতে পারেন ব্যালান্সড ফান্ডে। কারণ ঋণপত্রের ভবিষ্যৎও ইক্যুইটির মতোই আশাব্যঞ্জক। এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করতে পারেন নিয়মিত লগ্নিকারীরা। দর ভাল উঠলে পুরনো কোনও লগ্নি ভাঙানোর কথাও ভাবতে পারেন। |
কোম্পানির মান অনুযায়ী কমবেশি ঝুঁকি আছে। সুদ কিছুটা কম হলেও সুরক্ষার বিচারে ব্যাঙ্ক আমানত অনেক এগিয়ে। দেশের অগ্রণী গৃহঋণ কোম্পানির জমা প্রকল্পগুলি বিবেচনা করা যেতে পারে। |
বাজারে এখন বন্ডের ছড়াছড়ি। কর সাশ্রয়কারী এবং করমুক্ত দু’ধরনেরই বন্ড পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। অর্থাৎ এই ধরনের বন্ড ও ডিবেঞ্চারের আকর্ষণ মূলত করদাতাদের কাছে। আয়কর আইনের ৮০ সিসিএফ ধারা অনুযায়ী সর্বাধিক ২০,০০০ টাকা লগ্নি করা যেতে পারে কর সাশ্রয়কারী পরিকাঠামো বন্ডে। সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। অন্য দিকে করমুক্ত বন্ডে সুদ দেওয়া হচ্ছে ৮.২ শতাংশ থেকে ৮.৩ শতাংশ হারে। এ ছাড়া আকর্ষণীয় সুদে ডিবেঞ্চার ছাড়তে দেখা গিয়েছে স্বর্ণঋণ কোম্পানিগুলিকে। |
ঝুঁকি ও লাভের শ্রেষ্ঠ জায়গা। এরই মধ্যে বাজার অনেকটা উঠেছে। মাঝে-মধ্যে সংশোধন হলেও সূচক আরও উঠতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যে যে বিষয় আগামী দিনে বাজারের উপর প্রভাব ফেলবে, তার মধ্যে থাকবে মূল্যবৃদ্ধি, সুদের হার, বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল, কেন্দ্রীয় বাজেট, ইউরোপের পরিস্থিতি, বিদেশি লগ্নির পরিমাণ, সময় মতো বর্ষার আগমন ইত্যাদি। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি মাঝারি থেকে বড় সংশোধনে সংগ্রহ করা যেতে পারে বাছাই করা ভাল শেয়ার। সুদের হার কমতে শুরু করলে সবার আগে ব্যাঙ্কিং এবং বেশি মাত্রায় ঋণনির্ভর কোম্পানির শেয়ার বাড়তে শুরু করবে বলে আশা করা যায়।
কোনও শেয়ার ভাল লাভের জায়গায় পৌঁছলে বিক্রি করে লাভ ঘরে তোলার কথাও ভাবতে পারেন। |