যেন নিলামে উঠেছে চার মাসের এক শিশু
চার মাসের একটি শিশু। গোহাটের মতো তার দর ওঠানামা করছে।
শিশুটির ‘অপরাধ’ সে অভাবের সংসারে জন্মেছে। তাই তাকে বিক্রি করে দেয় তার দিনমজুর বাবা। একটি গরু ও ১৪ হাজার টাকার বিনিময়ে। যিনি কেনেন তিনিও দিনমজুর। দুই দিনমজুরের ফারাক হল, এক জন ৯ সন্তানের বাবা। আর এক জন নিঃসন্তান।
মাস চারেক আগে উত্তর দিনাজপুরের গোবিন্দপুর বটতলা এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ সইফুউদ্দিনের যমজ সন্তান হয়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। সাত সন্তানের পর যমজ সন্তান হওয়ায় ফাঁপরে পড়েন সইফুদ্দিন। ছেলেকে বিক্রি করে দেন শ্যালক মহম্মদ আনারুল ও তাঁর স্ত্রী ইজাতুন বিবির কাছে। সেটা মাস খানেক আগের ঘটনা। কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। শুক্রবার পঞ্চায়েত সমিতিতে মৌখিক অভিযোগ হয়, শিশু বিক্রি হয়েছে।
শনিবার সেই ঘটনার তদন্তে নামে করণদিঘি ব্লক প্রশাসন। দুই পরিবারেই গিয়ে কথা বলেন করণদিঘির ব্লক ত্রাণ আধিকারিক চণ্ডীরাম কারশিপ। শিশুটিকে বিনা শর্তে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন আনারুল ও ইজাতুনকে।
কিন্তু তাতে রাজি নন ওই নিঃসন্তান দম্পতি। তাঁদের যুক্তি, “১৪ হাজার টাকা ও একটি গরুর বিনিময়ে শিশুটিকে কিনেছি। ওর চিকিৎসা ও খাবারের জন্য আরও প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সইফুদ্দিন ওই টাকা ফিরিয়ে দিলে শিশুটিকে ফেরত দিতে পারি।”
মানে নিজের ছেলেকে ফিরে পেতে হলে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে সইফুদ্দিনকে। কিন্তু তিনি অপারগ। তাঁর কথায়, “ছেলে বিক্রির টাকায় স্ত্রীর চিকিৎসা চলছে। ২০ হাজার টাকা কোথায় পাব? সরকারি অফিসারকে তা জানিয়ে দিয়েছি।” আনারুল ও ইজাতুনের দাবি, “শিশু কেনা যে বেআইনি তা জানতাম না।” সইফুদ্দিনও জানেন না, “ছেলে বিক্রি বেআইনি।”
কী বলছে প্রশাসন? পঞ্চায়েতের ভূমিকাই বা কী?
ব্লক ত্রাণ আধিকারিক বলেন, “অভাব এবং স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে সইফুদ্দিন পুত্র সন্তানকে বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন। সইফুদ্দিন এ-ও জানান, তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। ওই নিঃসন্তান দম্পতিকে অনুরোধ করা হয়েছে সইফুদ্দিনকে সন্তান ফিরিয়ে দিতে।”
এ দিন ব্লক ত্রাণ আধিকারিকের সঙ্গে সইফুদ্দিনের বাড়িতে যান স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ভারতী সিংহের স্বামী নরেনবাবু। পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় ফরওয়ার্ড ব্লক। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রধানের কাছে গেলে কোনও সাহায্য মেলে না। তাঁরা নরেনবাবুর সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, ১০০ দিনের কাজ, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, পরিস্রুত পানীয় জল, বিপিএলের সুবিধা মিলছে না। অভাবের কারণেই সইফুদ্দিন ছেলে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
সইফুদ্দিন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, টাকার জন্যই ছেলেকে বিক্রি করেছি। পাট্টা, বিপিএল-সহ কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা আমি পাইনি।” করণদিঘির বিডিও শম্ভুদীপ সরকার বলেন, “পঞ্চায়েতের কাছে আবেদন না-করায় মহম্মদ সইফুদ্দিনের পরিবার বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাননি। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে সকলকেই লিখিত আবেদন করতে হয়। ওই পরিবারকে আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কীভাবে শিশুটিকে সইফুদ্দিনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায় তা দেখছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.