বিধানসভা ভোটের ‘পরিবর্তনের’ ধারা অব্যাহত থাকলেও কলেজের ভোটের গোলমাল ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস, শূন্যে গুলিও চালাতে হল পুলিশকে। শনিবার উত্তরবঙ্গের ১৮টি কলেজের ভোটগ্রহণ পর্ব সম্পূর্ণ হয়েছে। তার মধ্যে বাম বিরোধী মনোভাবাপন্ন ছাত্র সংগঠনের দখলে গিয়েছে ৯টি। এসএফআই সহ বামপন্থী সংগঠন পেয়েছে ৭টি। বাগডোগরা কলেজে ছাত্র সংসদে এককভাবে কোনও সংগঠনই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে ধূপগুড়ি কলেজে গণনায় কারচুপির অভিযোগে তুমুল গণ্ডগোল হলে ফল প্রকাশ স্থগিত হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস, শূন্যে গুলি চালাতে হয়েছে বলে ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন। রাত পর্যন্ত ফল প্রকাশের দাবিতে ফালাকাটায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে এসএফআই। |
ওই কলেজগুলির মধ্যে ১৩টি এসএফআই ও তাদের সম মনোভাবাপন্নদের দখলে ছিল। যাঁর মধ্যে ৮টি কলেজ হাতছাড়া হয়েছে তাদের। আলিপুরদুয়ার কলেজ জোটের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে এসএফআই। এককভাবে টিএমসিপির দখলে একটিও কলেজ ছিল না। এ বার এসএফআইকে হারিয়ে শিলিগুড়ি কলেজ ও কামাখ্যাগুড়ি কলেজের ছাত্র সংসদ এককভাবে জিতেছে টিএমসিপি। এককভাবে ছাত্র পরিষদের দখলে ছিল ২টি কলেজ (জলপাইগুড়ি এসি ও জলপাইগুড়ি কমার্স)। এককভাবে শিলিগুড়ি পলিটেকনিক কলেজে ছাত্র সংসদ পেয়েছে সিপি। জোট পেয়েছে আলিপুরদুয়ার বিবেকানন্দ কলেজ, সূর্য সেন কলেজ ও হলদিবাড়ি কলেজ। জয়গাঁ কলেজে ছাত্র সংসদ দখল করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ছাত্র সংগঠন ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের জোট।
তবে বেশ কয়েকটি কলেজে পর্যুদস্ত হলেও ফলাফলে ‘সন্তুষ্ট’ সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “সন্ত্রাস ও হুমকির মধ্যেই ছাত্রছাত্রীরা লড়াই করেছে। এত বাধার পরেও যা ফলাফল হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।”
এ দিন ভোট নির্বিঘ্নে করতে সব কটি কলেজ লাগোয়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। তার পরেও বিক্ষিপ্ত ভাবে গোলমাল হয় আলিপুরদুয়ার কলেজে। বড় মাপের গণ্ডগোল বাঁধে ধূপগুড়িতে। সেখানে ফল ঘোষণার সময়ে গণনায় কারচুপির অভিযোগে পুলিশের সামনেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে এসএফআইয়ের সঙ্গে মারপিট হলে অন্তত ৮ জন জখম হয়েছেন। এসএফআইয়ের দখলে থাকা ছাত্র সংসদের অফিস ভেঙে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও পরে শূন্যে ২ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে বলে অভিযোগ। ঘটনার সময়ে ছবি তুলতে গেলে চিত্রগ্রাহকদের টিএমসিপি সমর্থকেরা বাধা দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শেষ পর্যন্ত ফল ঘোষণা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা হলে গোলমাল থামে। ধূপগুড়ি কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য সুদীপ মল্লিক বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জলপাইগুড়ির ডিএসপি দমন কর্মকার অবশ্য গুলি চালানো নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “কলেজের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” ধূপগুড়ির বিডিও বলেন, “ব্যালট ছেঁড়া-সহ ভাঙচুরের ঘটনার অভিযোগ এসেছে। গোটা বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” |
শিলিগুড়ি কলেজে জয়ের উল্লাস। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
ধূপগুড়ি কলেজের সংসদ এসএফআই-র দখলে ছিল। এসএফআই-এর লোকাল কমিটির সম্পাদক নূর আলম বলেন, “পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে তৃণমূল ব্যালট ছিঁড়ে ভোট প্রক্রিয়া বানচাল করতে চাইছিল। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরণের আন্দোলনে নামব।”
টিএমসিপি নেতা দেবদুলাল ঘোষ বলেন, “গণনার সময় কারচুপি হচ্ছিল। ইচ্ছাকৃত ভাবে আসন গুলিতে এস এফ আই-এর প্রার্থীদের জিতিয়ে দেওয়া হচ্ছিল আমাদের সমর্থকরা প্রতিবাদ করে। আমরা পুর্ননির্বাচনের দাবি জানিয়েছি।” ফালাকাটা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র সংসদের ২৮ টি আসনের মধ্যে ২২ টি আসনে জিতল এসএফআই। গতবার কোনও আসন না মিললেও এ বার জোট ৬টি আসন পেয়েছে। বীরপাড়া কলেজেও ছাত্র সংসদ দখলে রাখল এসএফআই-পিএসইউ জোট। ৩১ টি আসনের মধ্যে ২৬টি পেয়েছে।
দুপুরে পাকুয়াহাট কলেজে কনভেনশনে যাওয়ার সময় এসএফআই-র গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল টিএমসিপির বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে এসএফআই পাকুয়াহাট কলেজের সামনে মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। ছাত্রদের বিক্ষোভে সামিল হন হবিবপুরের সিপিএম বিধায়ক খগেন মুর্মু। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনিমেষ সিংহ বলেন, “আমাদের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ১০জন সমর্থক জখম হয়েছেন। পুলিশ টিএমসিপি সমর্থকদের গ্রেফতার করছে না।” টিএমসিপি’র জেলা সভাপতি ক্ষুদিরাম মিস্ত্রির দাবি, “পাকুয়াহাট কলেজে এসএফআইয়ের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। নিজেরাই গাড়ি ভেঙে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।” যদিও জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে।” আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি কলেজের সংসদ নির্বাচন। এই নিয়েই কনভেনশন ডাকা হয়েছিল। |