রাজ্যের কংগ্রেসকর্মীরা তৃণমূলের হাতে প্রহৃত হওয়ায় সিপিএম চিন্তিত!
শনিবার কলকাতা জেলা পার্টি অফিসে সেই ‘চিন্তা’ ব্যক্ত করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব! যিনি বললেন, “শুধু সিপিএম নয়, পরিবর্তনের নামে শরিক কংগ্রেসকেও আক্রমণ করছে তৃণমূল। অবিলম্বে এই ধরনের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।” একের পর এক ঘটনায় সিপিএম-কংগ্রেস ‘আঁতাঁত’ রয়েছে অভিযোগ তুলে বারবার সিপিএমের ‘বি-টিম’, ‘বন্ধু’ বলে কংগ্রেসকে ‘আক্রমণ’ করছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস সম্পর্কে রবীনবাবুর এমন ‘সহৃদয়’ মন্তব্যের পরে তৃণমূল শিবিরের সুর আরও চড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। তাতে যে জোট শরিকের সঙ্গে ‘সম্পর্কে’ অস্বস্তি আরও বাড়তে পারে, তা আঁচ করে ‘বিড়ম্বিত’ কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়াতেই তা স্পষ্ট। সিপিএমের বিরুদ্ধে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “৩৪ বছর ধরে সিপিএম কংগ্রেস কর্মীদের উপর অনেক হামলা চালিয়েছে। অনেক কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন সিপিএমের হাতে।”
আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বলতে গিয়ে রবীনবাবু ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ হয়েই কংগ্রেস কর্মীদের মার খাওয়ার প্রসঙ্গটি তোলেন। ব্রিগেড সমাবেশকে সফল করতে কলকাতায় বাড়ি বাড়ি যে চিঠি দেওয়া হচ্ছে তাতেও বলা হয়েছে, ‘উন্মত্ত ভৈরব বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ রাজ্যে। জোট কংগ্রেসও রেহাই পাচ্ছে না।’ প্রসঙ্গত, ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে শুধু বিভিন্ন জায়গায় পথসভা নয়, ফেসবুক এবং এসএমএস-এও প্রচার চালানো হচ্ছে। রবীনবাবু বলেন, “বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এখন জনপ্রিয়। সে কারণেই ব্রিগেড সমাবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সেখানে প্রচার চালাচ্ছি।” ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে এ ভাবে ফেসবুকে প্রচার সিপিএম আগে করেনি।
কৃষকদের আত্মহত্যার এই মিছিল ৩৪ বছর কলকাতার মানুষ দেখেছে কি না, চিঠিতে সেই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মীদের বেতন নেই, পেনশন নেই আত্মহত্যাই যেন এ রাজ্যের মানুষের একমাত্র ভবিতব্য।’ কেন রবীনবাবু জোট সরকারের শরিক কংগ্রেসের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের উপর তৃণমূলের আক্রমণ নিয়ে মুখ খুলছেন? রবীনবাবু বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তাই কেবল বামপন্থীরা আক্রান্ত হলেই প্রতিবাদ করি না। যে কেউ অন্যায় ভাবে আক্রান্ত হলেই প্রতিবাদ করি। যে ভাবে কংগ্রেসের উপর তৃণমূল আক্রমণ করছে, তা নিয়ে বার বার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন রাজ্য ও জেলার কংগ্রেস নেতৃত্বও। আমরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূল কর্মীরাই তৃণমূলকে আক্রমণ করছে। তারও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” যার প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু আবার বলেন, “এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আগ বাড়িয়ে সিপিএমের কোনও সাহায্যের দরকার নেই আমাদের। কংগ্রেস নিজের দুর্গ নিজেই সামলাতে পারবে।”
তৃণমূলের বিরুদ্ধে রবীনবাবুর অভিযোগ, রাজ্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই ‘ব্যাহত’ করতে উঠে পড়ে লেগেছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। তাঁর কথায়, “প্রথমে পুলিশের ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়েছে। তার পরে সরকারি কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কাড়ার চেষ্টা করছে। ফসলের দাম না-পেয়ে কৃষক আত্মহত্যা করলেও তার প্রতিবাদ করা যাবে না! বহু লোককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ঘরছাড়া করা হয়েছে। শুধু সিপিএম নয়, শরিক কংগ্রেস কর্মীদের উপরেও একই ভাবে আক্রমণ করছে তৃণমূল।” |