চমকে-ধমকে লাভ নেই
বন্ধ-হরতাল আর নয়,
আবার বললেন মমতা
রকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সংক্রান্ত বিতর্কের মধ্যেই বন্ধ-হরতালের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্ধ-হরতালের বিরুদ্ধে এর আগেও মুখ খুলেছেন মমতা। শনিবার তিনি আরও এক বার জানিয়ে দিলেন, কথায়-কথায় বন্ধ-হরতাল আর চলবে না। গত ৩৪ বছরের বাম শাসনে রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে। ফলে উন্নয়নে গতি আনতে বন্ধ-অবরোধ ভুলে যেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর যে ঘোষণাকে কাজে গতি আনতে কাজের জায়গায় রাজনীতি বন্ধে ক্রমশ ‘কঠোর’ হওয়ার নিদর্শন হিসেবেই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সরকারি কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে বামেরা। বন্ধ-হরতাল সম্পর্কে তাঁর এ দিনের মন্তব্যও যে বিরোধীদের সমালোচনা এবং প্রতিবাদ কুড়োবে, সেটা মমতা বিলক্ষণ জানেন। সেই কারণে এ দিনই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে ‘চমকে-ধমকে’ কোনও লাভ হবে না। তাঁর কথায়, “আমায় চমকালে আমি বর্ষাই। আমায় ধমকালে আমি গর্জাই।”
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট রাজ্য থেকে বন্ধ-অবরোধের রাজনীতি বিদায় করার পথেই তিনি ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারের নামে সরকারি দফতরে কল-কারখানার মতো স্লোগান দেওয়া বা ওই ধরনের ‘আধা-জঙ্গি’ কার্যকলাপ কড়া হাতে বন্ধ করতে চান। ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তের কথা দিন কয়েক আগে জানিয়েছিলেন, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ঘোষণায় ‘আশ্বস্ত’ হয়েছিল রাজ্যের বণিকমহল। কারণ, বহু জায়গাতেই ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের ফলে সরকারি দফতরে কাজকর্ম শিকেয় ওঠে। তার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিল্পোদ্যোগীরাও। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যে শিল্পমহলের সঙ্গে আমজনতাও ‘আশ্বস্ত’ হবে বলে তৃণমূলের গরিষ্ঠ অংশের অভিমত।
দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, বন্ধ-অবরোধের রাজনীতি বন্ধ করে মমতা চাইছেন উন্নয়নের প্রতি নজর দিতে। তাঁর নিজের কথায়, “সিপিএম গত ৩৪ বছরে যা করতে পারেনি, তা আমি পাঁচ বছরে করে দেখিয়ে দেব!”
মমতা নিজে গত বেশ কয়েক বছর আগেই বন্ধ-অবরোধের রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন। বিরোধী দলে থাকার সময়েই বিভিন্ন ঘটনায় (নেতাই-কাণ্ডের উদাহরণ প্রায়শই দেন মমতা) তিনি বন্ধ ডাকা থেকে বিরত থেকেছেন। দলের অন্দরে তিনি নির্দেশও দিয়েছিলেন, কোথাও বন্ধ বা অবরোধ করলে দলের রাজ্য নেতৃত্বের থেকে অনুমতি নিতে হবে। রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া কেউ কোথাও বন্ধ বা অবরোধ করতে পারবেন না।
জরির কাজে হাত লাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার সাঁকরাইলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
ক্ষমতায় আসার পর তো মমতা আরও ‘কঠোর’ বন্ধ-বিরোধী। কারণ, তিনি মনে করেন, “বন্ধে জনসাধারণের ভোগান্তি হয়। ওটা করা উচিত নয়। কোথাও কোনও ঘটনা ঘটলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বন্ধ বা অবরোধ হয়ে
গেলে অন্য কথা। কিন্তু পরিকল্পনা করে বন্ধ ডাকলে কারও লাভ হয় না। আন্দোলনকারীদের দাবি যেমন তার ফলে পূরণ হয় না, তেমনই জনসাধারণকেও পাশে পাওয়া যায় না। ফলে যথাসম্ভব দ্রুত ওই পথ থেকে সরে আসা উচিত।”
এ দিন হাওড়ায় পরপর দু’টি সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ-হরতাল সম্পর্কে তাঁর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। হাওড়ার পাঁচলার রানিহাটিতে ফাউন্ড্রি পার্কের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মমতা বলেছেন, “অনেক বন্ধ হয়েছে। অনেক স্ট্রাইক হয়েছে। আর বন্ধ এবং স্ট্রাইক নয়। আমরা (কলকারখানা) খুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। এ বারে শুধুই উন্নয়ন।” তার পরেই সাঁকরাইলে জরি হাব-এর উদ্বোধন করতে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কথায় কথায় বন্ধ চলবে না!” তাঁর পরের বাক্যে স্পষ্ট যে, ওই বিষয়ে কোনও ‘বিরোধিতা’র তোয়াক্কা মুখ্যমন্ত্রী করছেন না। কারণ, তিনি সরাসরিই বলেছেন, “আমায় চমকে-ধমকে কোনও কাজ হবে না।”
গত কয়েক দিন ধরে রাজ্য-রাজনীতিতে সব চেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবুর বক্তব্য। বামফ্রন্ট আমলে কর্মচারীদের ‘সার্ভিস রুল’ সংশোধন করে পুরোমাত্রায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল। গত মঙ্গলবার মহাকরণে শ্রমমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ওই বিধি ফের সংশোধন করে ট্রেড ইউনিয়ন শব্দবন্ধনী বাদ দেওয়ার কথা ভাবছে বর্তমান সরকার। ওই ভাবনার পিছনে পূর্ণেন্দুবাবুর যুক্তি ছিল নিয়মমতো সরকারি কর্মীরা ট্রেড ইউনিয়নের সব অধিকার ভোগ করতে পারেন না। অনুমতি ছাড়া তাঁরা কখনওই ধর্মঘট, মিটিং-মিছিল করতে বা সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিতে পারেন না। কিন্তু ট্রেড
ইউনিয়ন সদস্যদের সে অধিকার রয়েছে। বিধি মতে, সরকারি কর্মীদের কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়াও নিষিদ্ধ। ১৯৮১ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আমলে বাম সরকার সরকারি কর্মীদের
ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দিয়েছিল। শ্রমমন্ত্রীর বলেছিলেন, “এটা বেআইনি কাজ।”
ওই ভাবনার পিছনে কি কর্মচারীদের মিটিং-মিছিল করা বা সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে?
শ্রমমন্ত্রী প্রথমে বলেছিলেন, “সরকারি কর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল করবেন, তা আমি মেনে নেব না। প্রয়োজনে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কনভেনশন ডাকতে পারেন।” সে ক্ষেত্রে কর্মীদের ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ খর্ব হওয়ার প্রশ্ন উঠলে শ্রমমন্ত্রী বলেছিলেন, “সরকারি কর্মচারীদের মিটিং-মিছিল করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার কথা আমি বলিনি। ট্রেড ইউনিয়নের তকমা সরকার কখনওই দিতে পারে না। তাই বিধি থেকে ওই অংশটি তুলে দেওয়ার কথা বলেছি।”
পূর্ণেন্দুবাবুর ওই বক্তব্যের পরেই বিরোধী বামেদের প্রতিবাদ শুরু হয়। তখন প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর শ্রমমন্ত্রীর সমর্থনে সামনে এগিয়ে দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। পার্থবাবু বলেছিলেন, “কর্মীদের অধিকার কোথাও খর্ব করা হচ্ছে না। তাঁদের অভাব-অভিযোগ নিশ্চয়ই শোনা হবে। খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু সরকারি কাজ বন্ধ করে কর্মীরা মিটিং-মিছিল করবেন, তা বরদাস্ত করা হবে না।”
শহরের কেন্দ্রস্থলে মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ করতে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে প্রত্যাশিত ভাবেই, কোনও ঐকমত্য হয়নি। এ দিন কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, উন্নয়নের পথে ‘বাধা’ তিনি বরদাস্ত করবেন না। সে আমজনতার হয়রানি কমাতেই হোক বা শিল্পমহলের ‘আস্থা’ পেতে।

হাওড়ায় মুখ্যমন্ত্রী
• রানিহাটি ফাউন্ড্রি পার্কে পিপিপি মডেলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হিমঘর। খোলা হবে শিশু বিভাগ। এর জন্য বছরে ২৫ লক্ষ টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার। রানিহাটি মোড় থেকে ফাউন্ড্রি পার্ক পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা।
• সাঁকরাইলে জরি-হাবে ৬০০ জরিশিল্পী প্রশিক্ষণ নিয়ে পণ্য উৎপাদন করবেন। জরি রফতানি হবে আমেরিকা, দুবাইয়ে।
• ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে পূর্ত দফতরের ৪ একর জমিতে স্বর্ণশিল্পীদের জন্য হাব। ডোমজুড়েই আরও একটি হাব গড়ার চেষ্টা।
• বাগনানে বেসরকারি উদ্যোগে মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়।
• উদয়নারায়ণপুরে ভেষজ ওষুধ তৈরির কারখানা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.