টানা সাড়ে চার বছর পরে ছেলে বাড়ি ফিরছে। তার পছন্দের খাবার তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মেহরুন বিবি। সেই ছেলেকে আনতে গিয়েই শনিবার ভোরে কলকাতার বড়বাজারে দুর্ঘটনায় তাঁর পরিবারের চার জনের মৃত্যুর পর থেকে আর উনুন চড়েনি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের সুরখালি গ্রামের মেহরুন বিবির বাড়িতে।
মেহরুন বিবির তিন ছেলে। বড় দুই ছেলে কর্মসূত্রে থাকেন পশ্চিম এশিয়াতে। তাঁদের মধ্যেই মেজো ছেলে সাজউদ্দিন শুক্রবার ফিরেছেন দিল্লিতে। এই দিন ট্রেনে তিনি কলকাতায় ফেরেন। মেহরুন বিবি বলেন, “এত দিন পরে ছেলেটা বাড়ি ফিরছে। তাই তাকে আনতে কলকাতা যেতে চেয়েছিল বাড়ির সকলে। এই দিন রাতেই এক সঙ্গে ফেরার কথা ছিল ওদের।” ভোর রাতে একটি ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন সাজউদ্দিনের বৌদি নার্গিসা বিবি, বোন তহিদা খাতুন, খুড়তুতো দাদা আমদ আলি, জামাইবাবু আব্দার আলি। গুরুতর আহত হয়েছেন ছোট ভাই তরুল শেখ ও ভাইপো বুলেট শেখ। মারা গিয়েছেন গাড়ির চালক মুরসেলিম শেখ। |
শোকাহত পরিজন। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি। |
মেহরুন বিবির স্বামী ফুরকান শেখ জানান, তাঁর দুই ছেলে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার পর থেকে একটু একটু করে দারিদ্র ঘুচেছে। সেখান থেকে তাঁদের পাঠানো টাকায় বাড়ি তৈরির ইট কেনা হয়েছে। সাহস করে গাড়ি ভাড়া করে কলকাতায় যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তাঁরা। ঠিক করে রেখেছিলেন রবিবার সকালে বাজারে যাবেন। মেহরুন বিবি বলেন, “নদীর মাছ ছেলেটা ওখানে তেমন খেতে পায় না। তাই ভেবেছিলাম ভাল করে রান্না করে তাই খাওয়াব। বৌমাও ফিরে রান্নায় হাত লাগাবে বলেছিল।” মেহরুন বলেন, “নতুন বাড়ির আর ইট গাঁথব কারল জন্য।”
প্রতিবেশী নুরানি বিবির কথায়, “সাজউদ্দিন ফিরবে শোনার পর থেকে গোটা পরিবারটাই আনন্দে ভাসছিল। তারপরে দুর্ঘটনার খবরটা পাওয়ার পরে গোটা গ্রামেরই মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।” দ্বারকা নদীর ধারের এই গ্রামের আরও অনেক পরিবারের ছেলেরাও বিদেশে কাজ করতে যান। কেউ এক জন বাড়ি ফিরলে নিয়ে আসেন অন্যদের খবরও। কখনও তাঁর হাত দিয়েই টাকাও পাঠান অন্যরা। তাই গোটা গ্রাম যেন এই সূত্রেই আত্মীয়তায় বাঁধা। এই দুর্ঘটনার পরে তাই ফুরকান শেখের পরিবারের শোক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা গ্রামেই। সারা দিন গ্রামের সব দোকানপাট বন্ধ। ভিড়ে থিক থিক করছে সাজউদ্দিনদের বাড়ি। উঠোনে বসে রয়েছেন মেহরুন বিবি। প্রতিবেশী খোশদিল শেখ বলেন, “সকালে আমদকে ফোন করে জানতে চাই তারা পৌঁছেছে কি না। ফোন ধরে থানার পুলিশ। সেখান থেকে দুর্ঘটনার খবর পাই। তার পর টিভি খুলে বুঝতে পারি সব শেষ হয়ে গিয়েছে!’’ গ্রামের লোক এখন অপেক্ষা করে রয়েছেন কখন তাঁদের দেহ ফিরবে। |