ডার্বি ম্যাচে রেফারিদের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার সরব হচ্ছে দুই প্রধান। রবিন সিংহের ‘অফসাইড গোল’ নিয়ে যখন ফুঁসছে মোহনবাগান, তখন টোলগের ‘ন্যায্য গোল’ বাতিল হওয়া নিয়ে ক্ষোভ ইস্টবেঙ্গলে। কিন্তু ব্যারেটো বা টোলগে কেউই আই লিগে হাল ছাড়ছেন না।
শনিবার ম্যাচের পরে গোয়ার সহকারী রেফারি ফ্রান্সিসকো ফার্নান্ডেজকে এক হাত নিলেন স্বয়ং টোলগেই। ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার বললেন, “গোটা ম্যাচে যত ভাল খেলালেন রেফারি, তত খারাপ সিদ্ধান্ত নিলেন সহকারী রেফারি। একা হাতে ম্যাচ লণ্ডভণ্ড করে দিলেন। লাইন্সম্যানকে ধিক্কার জানাই।” পিছিয়ে নেই মোহনবাগানও। ড্রেসিংরুমে কোচ, ফুটবলাররা সবাই সরব। সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মতো শান্ত ছেলেও বললেন, “ওটা নিশ্চিত অফসাইড। এটা শুধু আমি বলছি না, আমাদের সবাই বলছে।
বিতর্কের রেশ ক্লাব কর্তাদের মধ্যেও। মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র আবার বললেন, “রবিনের গোলটা যে অফসাইড ছিল, সেটা অন্ধও বলতে পারবে। দুর্ভাগ্য, শুধু রেফারিই বুঝতে পারলেন না। চিঠি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাই এ বার চিঠি না দিলেও ফেডারেশন সচিবের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলব।” ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কর্তা দেবব্রত সরকারের লক্ষ্য আবার রেফারিজ বোর্ড কর্তা, “গৌতম কর এক কট্টর মোহনবাগান সমর্থক। তাঁকে রেফারিদের প্রধান করা উচিত হয়নি। আমরা শুধু টোলগের নিশ্চিত গোল বাতিল নিয়ে চিঠি দিচ্ছি না। গৌতম করের বিরুদ্ধেও কড়া চিঠি দেব ফেডারেশনকে।”
|
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে এই মরসুমে তিন ম্যাচ জেতা হল না মোহনবাগানের। কিন্তু তিনে তিন করে ফেললেন ওডাফা ওকোলি। নিজের গাড়ি আনায় ছিল নিষেধাজ্ঞা। তাই এই ম্যাচে আসেননি ওডাফা ওকোলির স্ত্রী-পুত্ররা। বলছিলেন, “গোলটা এ ভাবে পাব ভাবতেই পারিনি।” ফুলের মালায় মুড়ে নাইজিরিয়ান গোলমেশিনকে ধরাধরি করে টিম বাস পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরাই। আর রবিন সিংহ? ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র গোলদাতা? শুক্রবার অনুশীলনের পর থেকে সেই যে মৌনব্রত নিয়েছেন, তা শনিবার ম্যাচের পরেও ভাঙা গেল না। থমথমে মুখে টুঁ শব্দ নেই। তাঁর বাবা এসেছিলেন খেলা দেখতে। রবিন কোনও কথা না বলে বাবার সঙ্গে বেরিয়ে গেলেন।
ব্যারেটো যুবভারতী ছাড়লেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে। টোলগে বান্ধবীর হাত ধরে। ব্যারেটোর কথায়, “ড্র হারের থেকে ভাল। তবে দু’-পয়েন্ট হারালেও চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যাইনি।” ব্যারেটোর মত টোলগেরও। বললেন, “গতবার ৫ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে রানার্স হয়েছি। ফুটবলে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। ডেম্পোকে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং চার্চিলের সঙ্গে খেলতে হবে। লিগ এখনও অনেক বাকি।”
সুব্রত-প্রশান্ত যাঁকে ম্যাচের সেরা বলছিলেন, সেই আনোয়ার বললেন, “কোনও বিশেষ নির্দেশ ছিল না। আমরা জানতাম একটা বলও গলতে দেওয়া যাবে না। সেটাই করার চেষ্টা করেছি।” আর সঙ্গী কিংশুক বোঝালেন কী করে তারা বারবার পেন-টোলগে-রবিনদের বাধা দিয়েছেন। কিংশুকের ব্যাখ্যা, “আনোয়ার আর আমি সারাক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম। চেষ্টা করছিলাম, নিজেদের মধ্যে দূরত্বটা যেন কখনও হাত দুই-তিনের বেশি না হয়।”
ড্র ম্যাচের পরে নতুন চিন্তা দুটো দলে। মোহনবাগানের হাদসন পায়ে চোট নিয়ে মাঠ থেকে সোজা গেলেন হাসপাতালে। তাঁর দু’সপ্তাহ খেলা বন্ধ। ব্যারেটোরও চোট ভালই। মুম্বই এফ সির সঙ্গে যুবভারতীতে পরের ম্যাচে দুই ব্রাজিলিয়ান নেই। সঙ্গে আহত নবিও। কার্ডের জন্য নেই সুনীল ছেত্রী। ইস্টবেঙ্গল আবার শিলংয়ে লাজং ম্যাচে পাচ্ছে না কার্ড দেখা পেন ও হরমনজিৎকে। চোট গুরবিন্দরের।
ডার্বি সব দিক দিয়েই অস্বস্তিতে ফেলে গেল দুই প্রধানকে। |