গোটা ম্যাচ ইস্টবেঙ্গল যে ভাবে খেলেছে তাতে শনিবার ওদের জেতা উচিত ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পনেরো মিনিটই শুধু ঝকমকে লাগল মোহনবাগানকে। আর সেই সময়েই পুরো একার কৃতিত্বে দু’-জন ডিফেন্ডারকে ডজ করে গোল শোধ করল ওডাফা। বলটা ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারের গায়ে লেগে ‘ডিফ্লেক্ট’ হয়ে গোলে ঢুকলেও ওডাফার ডান পায়ের শটটা কিন্তু অসাধারণ।
কিন্তু ড্র ম্যাচেও কাঁটা হয়ে থাকবে ইস্টবেঙ্গলের দুটো গোল। যার একটা রেফারি দিয়েছেন। আর একটা বাতিল করেছেন। তবে যদি গোলের সময় রবিন অফসাইডে না থাকে, তা হলে টোলগের গোলটা বাতিল হল কী করে?
এই ফল একমাত্র খুশি করবে ডেম্পো আর চার্চিলকে। এক পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেওয়ায় কলকাতার দু’দলই পিছিয়ে পড়ল।
নব্বই মিনিট যা দেখলাম তার কিছু কিছু জিনিস তাৎপর্যপূর্ণ। ম্যাচটায় চোখে লাগল ইস্টবেঙ্গলের আধুনিক ফুটবল। বিশেষ করে প্রথমার্ধে ওরা যা পাসিং ফুটবল খেলেছে তাতে ম্যাচের গতি ছিল বেশ ভাল। বল বেশি মাটিতে রেখে গতি বাড়াতে পারছিল পেন-মেহতাবরা। |
মোহনবাগান এই সময়ে একটু বেশিই বল হাওয়ায় খেলার চেষ্টা করছিল। এই সময় রবিন বল ধরে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে কোনাকুনি বাঁ-পায়ে শট নিল। বরাবরই ওর বাঁ-পাটা ভাল। তার জোরেই গোল।
কিন্তু রবিনের ওই গোলটা আমার মতে গোল ছিল না। ও যখন বল রিসিভ করে, তখন অফসাইড ছিল। ডিফেন্ডাররা সবাই ওর ওপরে। কেন গোল দেওয়া হল বুঝলাম না। টোলগের বাতিল গোলটাও গোল ছিল বলে মনে হল না। এই দুটো বিতর্ক তাড়া করবে বড় ম্যাচটাকে।
ম্যাচে অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের বেশি নিয়ন্ত্রণ ছিল। ওদের ডিফেন্স, মাঝমাঠ এবং স্ট্রাইকারদের মধ্যে কখনই খুব বেশি দূরত্ব তৈরি হয়নি। যার ফলে মোহনবাগানের মাঝমাঠ খেলাটা ধরতে পারল না। পেন-মেহতাব ছিল কিং-পিন। পুরো ম্যাচের রাশ ধরা ছিল পেন আর মেহতাবের পায়ে। ওরা খুব সুন্দর ব্যবহার করছিল দুই উইংকে। ডান দিকে হরমনজোৎ খাবরা আর বাঁ দিক দিয়ে তরতরিয়ে উঠছিল কখনও পাইতে, কখনও রবার্ট।
মোহনবাগানের সমস্যা হল, ওডাফা আক্রমণে একা হয়ে গেল। একটা সময় সুনীল ছেত্রী সরে গেল ডান প্রান্তে। ওডাফার থেকে বেশ খানিকটা দূরে। সুনীল যদি ওডাফার কাছে-কাছে থাকত, তা হলে সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা আরও বেশি থাকত।
ছ’-গজ বক্সের ঠিক বাইরে থেকে যখন সুনীল সহজ সুযোগ গোলকিপারের হাতে তুলে দিল সেই সময় গোল হলে ম্যাচের ফল অন্য রকমও হতে পারত। |
মোহনবাগানের আর একটা সমস্যা হল, খেলা থেকে মিডফিল্ডারদের হারিয়ে যাওয়া। এর কারণ, ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের দক্ষতা। এর জেরেই লাল-হলুদের আক্রমণের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছিল মোহনবাগান ডিপ ডিফেন্স এবং ডিফেন্সিভ ব্লকারদের।
জুয়েল রাজা-হাদসন লিমারা বেশ কয়েক বার উইং ধরে দৌড়েছিল সত্যি। কিন্তু এই ছোট আক্রমণগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ ছিল না। ওরা নিজেরাই দৌড়াদৌড়ি করে চেষ্টা করছিল। উল্টো দিকে পেন যে কাজটা করছিল সেটা মোহনবাগানের কেউ করতে পারলে আরও জমত খেলাটা। আনফিট ব্যারেটো মাঠে ১৯-২০ মিনিটের বেশি থাকতে পারল না। আর বিরতির পর তো মোহনবাগান একটাও কর্নার আদায় করতে পারেনি।
তবে মোহনবাগানের রক্ষণ একেবারে অটুট ছিল। পরপর পাইতে, পেন, খাবরার পাসগুলো পৌঁছচ্ছিল টোলগে বা রবিনের পায়ে। কিন্তু ওইটুকুই। তার পরে আর খুব বেশি ওপেনিং করতে পারছিল না টোলগেরা। আনোয়ার আর কিংশুক জায়গা দিচ্ছিল না এতটুকু। ওদের বোঝাপড়া বেশ ভাল ছিল। ওদের সামনে রাকেশ মাসিও রুখে দিয়েছে বেশ কয়েক বার। মাঝমাঠে যে ‘হোল্ড’ করে খেলার দরকার ছিল সেই কাজটা করছিল ওরাই। আর লিমা চোটের জন্য মাঠ ছাড়ায় আরও কোনঠাসা হয়ে পড়ল আনোয়াররা। সব ক’টা বদল হয়ে যাওয়ায় ইনজুরি টাইম-সহ শেষ ১৪ মিনিট দশ জনে খেলতে বাধ্য হয় মোহনবাগান।
সবুজ-মেরুনের মাঝমাঠের ব্যর্থতা মেনে নিলেও একটা কথা স্বীকার করতেই হবে। সেটা হল, দু’দলের ওপেন ফুটবল। দুটো দলই জেতার চেষ্টা করেছে। নিজেদের ডিফেন্স থেকে ছিটকে বেরনো বল ধরে মোহনবাগান প্রতিআক্রমণে গেছে অনেক বার। সব মিলিয়ে তাই কৃতিত্ব দিতে হবে দু’-দলের ফুটবলারদেরই।
|
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, হরমনজোৎ, গুরবিন্দর (রাজু), ওপারা, রবার্ট (সৌমিক), ভাসুম (সঞ্জু), পেন, মেহতাব, পাইতে, টোলগে, রবিন।
মোহনবাগান: সংগ্রাম, সুরকুমার, কিংশুক, আনোয়ার, নবি (ধনরাজন), রাকেশ, জুয়েল, ড্যানিয়েল (ব্যারেটো) (অসীম), লিমা, সুনীল, ওডাফা।
|
ডার্বি ম্যাচে গোল |
ভাইচুং-১৯ (ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ১৩, মোহনবাগানের হয়ে ৬) |
ব্যারেটো-১৭ (সব গোলই মোহনবাগানের হয়ে) |
চিমা-১৫ (ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ১০, মোহনবাগানের হয়ে ৫) |
হাবিব-১০ (সব গোলই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে) |
শিশির ঘোষ-১০ (মোহনবাগানের হয়ে ৭, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ৩) |
তথ্য: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় |
|