উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ভোট গ্রহণের দিন চারেক আগে পি চিদম্বরমকে নিয়ে আদালতের রায় কংগ্রেসের মনোবল এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিল। এতটাই যে, বারাণসীতে আজ এক নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে রাহুল গাঁধী স্পষ্ট করে দিলেন, যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল, সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকেই ভোট ময়দানে মূল অস্ত্র করবে তারা। রাহুল বলেন, “ভোটে আমরা জিতছিই। কিন্তু কংগ্রেস যদি দু’-চারটি আসনেও জেতে, তা হলেও চোর-গুন্ডাদের সঙ্গে জোট গড়ব না।” আর রাহুলের নির্বাচন কেন্দ্র অমেঠিতে ভোট প্রচারে গিয়ে প্রিয়ঙ্কা বঢ়রা বলেন, “উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের প্রধান লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধেই।”
|
বারাণসীতে রাহুল। ছবি: পিটিআই |
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনকে দীর্ঘদিন ধরেই পাখির চোখ করেছেন রাহুল গাঁধী। সেখানে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের সংগঠনকে মজবুত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এই অবস্থায় গত পরশু সুপ্রিম কোর্ট ইউপিএ জমানার টু-জি স্পেকট্রাম লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দেওয়ায় কংগ্রেস প্রাথমিক ভাবে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে। কিন্তু আজ আদালত চিদম্বরমকে ছাড়পত্র দেওয়ায় ফের তেড়েফুঁড়ে উঠেছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, রাহুলের মন্তব্য দু’টি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এক, স্পেকট্রাম মামলায় যা-ই হোক না কেন উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী ও পূর্বতন মুলায়ম সিংহ সরকারের দুর্নীতিকেই মূল বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন তিনি। তাই ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে ‘চোর-গুণ্ডাদের’ সঙ্গে জোট না করার বার্তা দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, ভোটের পরে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের জোট সম্ভাবনা আপাতত খারিজ করে দলের শক্তিবৃদ্ধিকেই মূল লক্ষ্য করছেন তিনি। ভোটের পর জোটের এই সম্ভাবনা যাতে দলের আসনবৃদ্ধির সম্ভাবনা নষ্ট না করে, তা নিশ্চিত করতে চান তিনি।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে ভোট যত এগিয়ে আসছে, কংগ্রেসের আসনবৃদ্ধির সম্ভাবনা ততই উজ্জ্বল হচ্ছে বলে মনে করছেন দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা। তার মধ্যেই স্টার নিউজ-এসি নিয়েলসেনের সাম্প্রতিকতম প্রাক্-ভোট সমীক্ষাও কংগ্রেসকে অক্সিজেন দিয়েছে। গত নভেম্বরে স্টার নিউজ-এসি নিয়েলসেন যে সমীক্ষা করেছিল, তাতে বলা হয় যে, উত্তরপ্রদেশে এ বার বিস্ময়কর ফল করবে কংগ্রেস। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, কংগ্রেসের ভোট শতাংশ রাতারাতি বাড়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় লোকদলের জোট অন্তত ৮৫টি আসন পাবে। আর দু’মাস পরের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, কংগ্রেসের আরও উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। |
উত্তরপ্রদেশ |
মোট আসন ৪০৩ |
|
|
সমাজবাদী পার্টি |
১৩৫ |
(১৩২) |
|
বিএসপি |
১০১ |
(১১৭) |
|
কংগ্রেস+আরএলডি |
৯৯ |
(৮৫) |
|
বিজেপি ৬১ |
৬১ |
(৬৫) |
স্টার নিউজ-এসি নিয়েলসেনের জানুয়ারি মাসের সমীক্ষা।
বন্ধনীর মধ্যে নভেম্বরের সমীক্ষার ফল |
|
|
সর্বশেষ পূর্বানুমান অনুযায়ী, কংগ্রেস একাই ৭৯টি আসন পেতে পারে। রাষ্ট্রীয় লোকদল পেতে পারে ২০টি আসন।
তবে নভেম্বর মাসের সমীক্ষার তুলনায় সমাজবাদী পার্টি ও বিজেপির আসনের বিশেষ কোনও হেরফের দেখা যাচ্ছে না সাম্প্রতিকতম সমীক্ষায়। বলা হচ্ছে, মায়াবতীর দলের আসন সংখ্যা অনেকটাই কমতে পারে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এই কারণেই সপার সঙ্গে কোনও রকম ঘনিষ্ঠতা এখনই দেখাতে চাইছেন না রাহুল। বরং দুর্নীতি ও অরাজকতার প্রশ্নে মায়াবতী এবং প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট যাতে কংগ্রেসের পক্ষে আসে, সে চেষ্টাই চালাচ্ছেন তিনি।”
অতীতে দেখা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই এই জাতীয় সমীক্ষা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। তবে ভোটদাতাদের মনোভাবের আগাম আঁচ পেতে এই ধরনের সমীক্ষার একটা গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। গত বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে স্টার নিউজ-এসি নিয়েলসেনের প্রাক্-ভোট সমীক্ষা ভোটের ফলাফলের সঙ্গে প্রায় মিলে গিয়েছিল। তাই এ বার এদের সমীক্ষা অন্য রকম গুরুত্ব পাচ্ছে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের ভোটে মায়াবতী সরকারের দুর্নীতিই নির্ণায়ক হয়ে উঠবে বলে দল মনে করে। তা ছাড়া বিধানসভা ভোটে বরাবরই স্থানীয় বিষয় প্রধান্য পায়। না হলে কংগ্রেসের আসন এ ভাবে বৃদ্ধির ইঙ্গিত থাকত না। টু-জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় বিজেপিকে ভোটের মুখে একটা বাড়তি অস্ত্র দিলেও আজ আদালত চিদম্বরমকে ছাড়পত্র দেওয়ায় কংগ্রেসের মুখ অনেকটাই রক্ষা পেয়েছে। ওই নেতার দাবি, আদালতের রায়ের পরে প্রমাণিত যে, স্পেকট্রাম-কাণ্ডে অন্তত কংগ্রেসের কোনও নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। আর সেটাই এখন বড় অস্ত্র দলের। |