উত্তরপ্রদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব রাহুল-প্রিয়ঙ্কা
চিদম্বরমের রেহাই, স্বস্তি ফিরল কংগ্রেসে
মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধান। তার মধ্যে দ্বিতীয় রায়ে শুধু চিদম্বরমই নন, বড় রকমের স্বস্তি পেল কংগ্রেসও। শনিবার টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জি খারিজ করে দিল নিম্ন আদালত। উত্তরপ্রদেশ ভোটের চার দিন আগে এই রায়ে দৃশ্যতই উজ্জীবিত কংগ্রেস রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দু’ভাবেই সেই সুযোগ কাজে লাগাতে জোর কদমে নেমে পড়ল।
বৃহস্পতিবার ইউপিএ জমানার টুজি স্পেকট্রাম লাইসেন্স বণ্টন প্রক্রিয়াটি সমূলে বাতিল করে মনমোহন সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু দু’দিনের মধ্যেই বদলে গেল ছবিটা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কংগ্রেস। তা যতটা না চিদম্বরম ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য, তার থেকেও বড় কারণ, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির আঁচড় অন্তত মনমোহন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের কারও গায়ে লাগল না। বরং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, এখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে স্পেকট্রাম দুর্নীতি করেছেন আন্দিমুথু রাজা। কংগ্রেস কোনও ভাবেই দায়ী নয়। তবে রাজার কেলেঙ্কারির জন্য যে কলঙ্কের দাগ লেগেছে, স্বচ্ছতার সঙ্গে নতুন লাইসেন্স বণ্টন করে এখন তা-ও ধুয়ে ফেলতে তৎপর হবে সরকার। উত্তরপ্রদেশ ভোটের ময়দানেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এ দিন একই সঙ্গে রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা বঢরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। রাহুলের বক্তব্য, চোর-গুন্ডাদের সঙ্গে কংগ্রেস জোট গড়বে না। আর অমেঠিতে প্রচারে গিয়ে প্রিয়ঙ্কাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধেই লড়ছে কংগ্রেস।
স্বস্তির খবর পেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন চিদম্বরম। ছবি: পিটিআই
টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে ষড়যন্ত্রের ঘটনায় প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী রাজার সঙ্গে চিদম্বরমকে সহ-অভিযুক্ত করার দাবি জানিয়ে দু’টি মামলা করেছিলেন জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। একটি নিম্ন আদালতে। অন্যটি সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালত টুজি লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও চিদম্বরম প্রসঙ্গে রায় ঘোষণার দায়িত্ব নিম্ন আদালতের ওপরেই ছেড়ে দেয়।
তবে নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পরেও হাল ছাড়তে রাজি নন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। বরং আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি জানিয়েছেন, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করে এ বার তিনি উচ্চ আদালতে দরবার করবেন। তাঁর কথায়, “টুজি স্পেকট্রাম লাইসেন্স বাতিলের আর্জি গোড়ায় হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আর্জি মেনে নেয় সুপ্রিম কোর্ট। ফলে কোনও ভাবেই চিদম্বরমের স্বস্তির কারণ নেই।”
আজকের রায়ে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি-ও। স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব প্রধান বিরোধী দল। সংসদের মধ্যেও তারা চিদম্বরমকে বয়কট চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আজ রায় ঘোষণার পর বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদও বলেন, “এখনও উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতে আর্জির সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া স্পেকট্রাম বণ্টনে যে দুর্নীতি হয়েছিল, তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই স্পষ্ট। এর জবাবদিহি প্রধানমন্ত্রীকে করতেই হবে।” সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসুর বক্তব্য, “স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতি রুখতে চিদম্বরম যে সচেষ্ট ছিলেন, এমনও কোনও নজির নেই। সুতরাং লাইসেন্স বণ্টনে দুর্নীতি জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই এখন বিবৃতি দিতে হবে।”
তবে রাজনৈতিক ভাবেই আজ দিনটা ছিল কংগ্রেসের। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে রাহুল গাঁধীর লড়াইয়ের প্রধান অস্ত্রই হল বিএসপি সরকারের ‘দুর্নীতি’। দু’দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের রায় স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের সেই অস্ত্র কিছুটা ভোঁতা করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফার ভোট গ্রহণের চার দিন আগে আদালতের আজকের রায় দলকে ফের লড়াইয়ে এনে দিল।
চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্ত
শুরুর মতো যথেষ্ট প্রমাণ
নেই। আর্জি খারিজ করা
হল। বিচারক ও পি সাইনি
এক আদালতে হারলে
অন্য আদালতে যাব। সনিয়ার
বিরুদ্ধেও প্রমাণ পেশ করব।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামী
অন্যায় ভাবে এক
জনকে হেনস্থা
করা হয়েছিল।
প্রণব মুখোপাধ্যায়
স্পেকট্রাম দুর্নীতি নিয়ে
প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি
করতেই হবে।
রবিশঙ্কর প্রসাদ
আর তাই আজ রায় ঘোষণার পরেই সমস্বরে কৌশলগত ভাবে মুখ খুলেছেন কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বল, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনি-সহ মনমোহন মন্ত্রিসভার শীর্ষ মন্ত্রীদের কথায়, “এর আগে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, স্পেকট্রাম বণ্টন ও তার মূল্য নির্ধারণে চিদম্বরমের কথা শোনেননি প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী। আজ নিম্ন আদালতও জানিয়ে দিল চিদম্বরমের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই।”
কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, এর ফলে স্পেকট্রামের ভূত এখন অনেকটাই কংগ্রেসের ঘাড় থেকে নেমে গেল। গত প্রায় দু’বছর ধরে যে বিতর্ক কংগ্রেসকে বারবার টেনে ধরছিল, তা পিছনে ফেলে এ বার সামনে এগোতে পারবে কংগ্রেস। সংসদের বাজেট অধিবেশন আসন্ন। সেখানে একটি ভাল বাজেট পেশ করে এবং খাদ্য সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সব আইন পাশ ও তা রূপায়ণের মাধ্যমে ফের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে মনমোহন সরকার।
ব্যক্তি চিদম্বরমের কাছেও আজকের দিনটি কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কংগ্রেস পরিবারে চিদম্বরমের জনপ্রিয়তা বিশেষ নেই। উপরন্তু স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে কিছুটা চাপের মধ্যেই ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রকের বিতর্কিত নোট তাঁকে এ ব্যাপারে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, সেই সব অস্বস্তি কাটিয়ে এ বার চিদম্বরম সংশয়াতীত ভাবেই দলের মধ্যে নিজের অবস্থান মজবুত করতে সচেষ্ট হবেন।
দিল্লিতে তাঁর সরকারি বাসভবনে বসেই আজ সকাল থেকে আদালতের ওপর নজর রাখেন চিদম্বরম। পরে নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে কথা বলেন। যদিও সংবাদমাধ্যমে কোনও বিবৃতি তিনি দেননি।
চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে আজ নিম্ন আদালতে শুনানি পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে আদালত রায় ঘোষণা করে দেবে, এমন নিশ্চয়তা গত রাত পর্যন্তও ছিল না।
কিন্তু আজ সকালে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ও তাঁর স্ত্রী রোক্সানাকে ডেকে বিচারক ও পি সাইনি ইঙ্গিত দেন, আজই রায় ঘোষণা করে দেবেন তিনি। তার পর বেলা দেড়টা নাগাদ রায় ঘোষণা করেন তিনি। স্বামীর আর্জি ও সাক্ষ্য বিচার করে বিচারক তাঁর রায়ে বলেন, “কোনও মন্ত্রীর কেবল এই সহজ কারণেই ফৌজদারি অপরাধ হতে পারে না যে, তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।” তাঁর কথায়, চিদম্বরম স্পেকট্রাম নিয়ে মন্ত্রিসভার আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ঠিকই। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত থাকা মানে তিনি ষড়যন্ত্রে সামিল ছিলেন। তাঁর সরকারি পদ ব্যবহার করে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মতো কোনও দুর্নীতির প্রমাণ চিদম্বরমের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি।
তবে চিদম্বরমকে ছাড়পত্র দিলেও, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে ফৌজদারি মামলা এ বার চলবে নিম্ন আদালতে। তার পরবর্তী শুনানি হবে ১৭ মার্চ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.