বিটি রোড ক্যাম্পাসে নতুন পরিকাঠামো যত দিন না গড়ে উঠছে, তত দিন পর্যন্ত জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে দেওয়ার দাবি জানাল রবীন্দ্রভারতী নাট্যবিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। শনিবার দুপুরে অ্যাকাডেমি চত্বরে এক সমাবেশে তাদের দাবিকে সমর্থন করলেন শহরের নাট্যব্যক্তিত্ব এবং শিল্পীরা। উপাচার্য অবশ্য তাঁর সিদ্ধান্তেই অনড়।
এ দিন সমাবেশে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ান কবীর সুমন, কৌশিক সেন, চিত্রা সেন, সমীর আইচ, সোহাগ সেন, হিরণ মিত্র, মেঘনাদ ভট্টাচার্য, বিমল চক্রবর্তী, গৌতম হালদার, নিরঞ্জন গোস্বামী, চন্দন সেন, বাদশা মৈত্র, সীমা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ছিলেন মুম্বইয়ের নাট্যাভিনেতা মাসুদ আখতার। সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও বার্তা পাঠিয়ে সমর্থন জানান, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী, সুমন মুখোপাধ্যায়, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং অঞ্জন দত্ত। প্রত্যেকে বারবার বলেন, শুধুমাত্র নাট্যপ্রশিক্ষণের পরিকাঠামোর দাবিতেই এই আন্দোলন। এর মধ্যে দলীয় রাজনীতির রং লাগানোর চেষ্টা যেন না হয়।
২০০৭ সালে জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাস থেকে বিটি রোডে স্থানান্তরিত হয় নাটক-সহ গোটা শিল্প ও চারুকলা বিভাগই। তখন থেকেই পরিকাঠামো অর্থাৎ মঞ্চ-আলো-দৃশ্যসজ্জা-ভিডিওগ্রাফির উপযুক্ত স্থান এবং সরঞ্জামের অভাব নিয়ে সরব হয়ে আসছেন ছাত্রছাত্রীরা। এ দিনের সমাবেশ মঞ্চেও বর্তমান এবং প্রাক্তনীরা একযোগে দাবি করলেন, তাঁদের আন্দোলন কোনও অকস্মাৎ ঘটনা নয়। ধারাবাহিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের অভাব-অভিযোগ জানিয়ে আসছেন তাঁরা। পড়ুয়াদের বক্তব্য: বিজ্ঞানের ছাত্রদের যেমন পরীক্ষাগার বাদ দিয়ে চলে না, নাট্য-শিক্ষার্থীদেরও মঞ্চ-আলো ইত্যাদি উপকরণ ছাড়া চলতে পারে না।
নাট্যবিভাগের প্রাক্তনী, প্রবীণ মূকাভিনয়শিল্পী নিরঞ্জন গোস্বামী মনে করিয়ে দেন, জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসের সঙ্গীত ভবন (যেখানে নাট্যবিভাগের নিয়মিত ক্লাস হত ২০০৭ পর্যন্ত এবং এখনও প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা নেওয়া হয়) হেরিটেজ ভবন নয়। রবীন্দ্রশতবর্ষ উপলক্ষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উৎসাহে জোড়াসাঁকো চত্বরে ওই ভবন গড়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায়ের আগ্রহে সেই পরিকাঠামো তৈরির কাজে সামিল হয়েছিলেন অহীন্দ্র চৌধুরী, উদয়শঙ্করের মতো ব্যক্তিত্বেরা। ১৯৭৭ সালে ওই ক্যাম্পাসেই উপযুক্ত নাটমঞ্চ গঠনের জন্য আন্দোলন করেছিল তখনকার ছাত্রেরা। তার পরেই সেখানে অহীন্দ্র মঞ্চ গঠিত হয়। এ দিন কবীর সুমন বলেন, বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের মুখে এমন একটা তৈরি পরিকাঠামো বর্জন করার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত নয়। শুক্রবারই রবীন্দ্রভারতীর নতুন উপাচার্য চিন্ময় গুহ বলেন, বিটি রোড ক্যাম্পাসে নতুন পরিকাঠামো গড়া হবে। তার জন্য গঠিত হবে নতুন উপদেষ্টা কমিটি। জোড়াসাঁকোকে হেরিটেজ ভবন হিসেবে রাখা হবে। ছাত্রছাত্রীরা এ দিন স্পষ্ট বলেন, বিটি রোডে নতুন পরিকাঠামো তৈরি হলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু যত দিন তা না হয়, জোড়াসাঁকোয় ক্লাস করতে দেওয়া হোক। সমাবেশে কৌশিক বলেন, প্রয়োজন হলে নাট্যকর্মীরা সকলে মিলে সমাধানসূত্রের খোঁজে নামবেন, দরকারে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবেন। এ বিষয়ে উপাচার্য চিন্ময়বাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “গঠনমূলক পরামর্শ সব সময় স্বাগত। কিন্তু প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ মানা যায় না। আমার সিদ্ধান্ত শুক্রবারই জানিয়ে দিয়েছি।” |