বেপরোয়া রাতের কলকাতা, নাম নেই নজরদারির
ভোররাতে বড়বাজারে সুমোকে পিষে দিল ট্রাক, মৃত ৬
রাতের শহরে বেপরোয়া যান চলাচলের নজির ফের দেখল কলকাতা! শুক্রবার শেষ রাতে অতিকায় ট্রাকের মুখে পড়ে একটি টাটা সুমোর পাঁচ আরোহী-সহ ছ’জন প্রাণ হারালেন। জখম দু’জন। কলকাতার ট্র্যাফিক পুলিশবিহীন ‘অরক্ষিত’ রাজপথের চেহারাটাও ফের বেআব্রু হয়ে গেল।
ভোর পৌনে চারটে। আলো ফুটতে তখনও কিছুটা দেরি। এই সময়েই মহাত্মা গাঁধী রোড ও রবীন্দ্র সরণির মোড়ে যাত্রিবোঝাই টাটা সুমোর পেটে ধাক্কা মারে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা একটি ট্রাক। দুমড়ে-মুচড়ে অন্তত ফুট তিরিশেক দূরে ছিটকে যায় গাড়িটা। ভিতরে চালক ছাড়াও ছিলেন একই পরিবারের লোকজন। প্রায় তালগোল পাকিয়ে যান তাঁরা। মারা গিয়েছেন এক ফুটপাথবাসীও।
বেসামাল ট্রাক ও চেপ্টে যাওয়া গাড়ির ধাক্কায় রবীন্দ্র সরণির একটি সিগন্যাল পোস্টও দুমড়ে ভেঙে গিয়েছে। শহরে যান চলাচলে নজরদারির জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাফিক সিগন্যালে সিসিটিভির ক্যামেরা বসানো আছে। মধ্য কলকাতার ওই মোড়েও তা রয়েছে। কিন্তু যান্ত্রিক-বিভ্রাটে তা কাজ করেনি। এমনিতেই দুর্ঘটনার সময়ে ওই তল্লাটে পুলিশের নাম-গন্ধ ছিল না। তার উপরে সিসিটিভির ক্যামেরা অকেজো থাকায় কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা বোঝারও উপায় নেই। দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় কয়েক জন ফলবিক্রেতা প্রথমে দুর্ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে পরে পুলিশ আসে। পুলিশের অনুমান, দুর্ঘটনার পিছনে ট্রাক ও টাটা সুমো দু’টিরই ‘দায়’ রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা ধূপকাঠি বোঝাই ট্রাকটি রবীন্দ্র সরণি ধরে শোভাবাজারের দিকে যাচ্ছিল। আর শিয়ালদহের দিক থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড হয়ে হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল টাটা সুমো গাড়িটা। ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে চলতে গিয়ে অন্য দিক থেকে কোনও গাড়ি আসছে কি না, খেয়াল করেনি কেউই। ফলে, সুমোর বাঁ দিকের দরজায় ট্রাকটি ধাক্কা মারে।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে আখতার আলি (৩৫), আমোদ আলি (৩২), নার্গিসা বিবি (৩০) ও তুহিদা খাতুন (১৮)একই পরিবারের। বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম ব্লকের সুরখালি গ্রামে। নুর সেলিম শেখ (২৫) ওই টাটা সুমোর চালক। ফুটপাথবাসীর পরিচয় জানা যায়নি।
দুর্ঘটনায় তুবড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: সুদীপ আচার্য
টাটা সুমোর আরোহীরা হাওড়া স্টেশনে যাচ্ছিলেন তাঁদের এক আত্মীয় শেখ সাজউদ্দিনকে আনতে। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই মুর্শিদাবাদে ফেরার কথা ছিল পরিবারটির। তাঁদের আরও দুই আত্মীয় দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মহানগর কলকাতার নাগরিক-জীবনে রাত-বিরেতে অনেকেই নানা দরকারে বাইরে ঘোরাঘুরিতে অভ্যস্ত। পণ্যবোঝাই ট্রাক-লরিও পাইকারি বাজারে মাল সরবরাহের জন্য রাতভর শহরের রাজপথে দাপিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের মতো কিছু বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের কাজ সেরে বাড়ি ফিরতেও মাঝরাত পেরিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার সপ্তাহান্তে বেশি রাতে বাড়ি ফিরতে অভ্যস্ত। কিন্তু রাত ১০টাতেই শহরের বেশির ভাগ রাস্তায় ‘ট্র্যাফিক-আওয়ার্স’-এর মেয়াদ শেষ। তার পরে পুলিশবিহীন মোড়গুলির সিগন্যালে হলুদ আলো দপদপ করে। গাড়ির চাপ কিছুটা বেশি এমন কয়েকটি মোড়ে অবশ্য স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল চালু থাকে। কিন্তু ভোর পর্যন্ত ট্র্যাফিক পুলিশের দেখা মেলে না রাজপথে। পুলিশের বক্তব্য, হলুদ আলোর মানেই সতর্কীকরণ। যার মানে, দেখে-শুনে গাড়ি চালান। অর্থাৎ, গাড়ি চালকের ‘সচেতনতা’র উপরেই সাবধানতার সব দায় কার্যত ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ।
এ বিষয়ে লালবাজারের এক ট্র্যাফিক কর্তার বক্তব্য, “শুধু কলকাতা নয়, দেশ-বিদেশের প্রধান শহরগুলির কোথাওই রাতে ট্র্যাফিক পুলিশ থাকে না। তা ছাড়া, ট্র্যাফিক পুলিশের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। এখনই রাতে ট্র্যাফিকের ডিউটি রাখার মতো পরিস্থিতি নেই।” কিন্তু কারও কারও পাল্টা যুক্তি, কলকাতার মতো খুব বেশি জায়গায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি বাজারের অবস্থান নেই। ফলে, ওই সব শহরে রাতে সাধারণ যাত্রীদের ট্রাক-লরির ভিড়ের মাঝে প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হয় না। শুক্রবার রাতের দুর্ঘটনাস্থলটিতেও ওই সময়ে হলুদ আলো জ্বলছিল। কিন্তু পুলিশের অনুমান, মোড়ের কাছে নিয়মমাফিক গতি কমিয়ে মোড় পেরোনোর চেষ্টা করেনি ট্রাক বা গাড়িটি। সিসিটিভি-র বিভ্রাটের কথাও পুলিশকর্তারা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নিচ্ছেন। ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিসিটিভি-র বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি বেসরকারি সংস্থাকে সিসিটিভি-র দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই মোড়ের ফুটেজ-এর বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা হবে।” অকেজো সিসিটিভি সারানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে তাগাদা দিতে পুলিশ কতটা তৎপর হয়েছিল তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.