কলকাতায় মধ্যরাতে ঠাকুর দেখতে বেরোলে একটা বড়সড় ভিড়ের আঁচ পাওয়া যায়। কিন্তু এ ভিড় যেন তাকেও হার মানায়। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের হিসেব মতো বিকেল ৫টার মধ্যেই অন্তত লাখ দুয়েক মানুষ ঢুকেছেন বইমেলায়। তার পর থেকে ভিড়ও দ্রুত বাড়তে থাকে। এক, দুই এবং চার নম্বর গেট দিয়ে পিলপিল করে মানুষ ঢুকতে থাকেন মেলায়। ভিড় এতটাই যে, মেলার মধ্যে কারও পক্ষে দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে চার পাশ দেখা, এমনকী হাঁটা পর্যন্ত সম্ভব নয়। ধাক্কা খেতে খেতে এগিয়ে চলা।
মিলন মেলার মাঠে ঘাস বিছানো সবুজ জায়গা রয়েছে প্রচুর। রয়েছে কংক্রিটে বাঁধানো চত্বরও। কোথাও তিল ধারনের জায়গা নেই। গত তিন বছরে মিলন মেলার বইমেলায় এত ভিড় কখনও হয়নি বলে জানাচ্ছেন গিল্ড কর্তারা। অনেকেরই অভিযোগ, আর যাই হোক এই ভিড়ে খুঁজে-পেতে বা ভেবে-চিন্তে বই কেনা সম্ভব নয়।
কিন্তু বইমেলায় এই ভিড় কি কাম্য? মেলায় হাজির প্রতি দশ জনে অন্তত এক জনের হাতেও বইয়ের প্যাকেট দেখতে পেলে হয়তো এই প্রশ্ন উঠত না। বাছাই কয়েকটি বইয়ের স্টলের সামনে অবশ্যই লাইন পড়েছে। কিন্তু বহু স্টলেই তেমন ভিড় নেই। বেসামাল ভিড় খাবার স্টলগুলোতে। বিশেষত ফুড প্লাজা যেন উপচে পড়ছে। বিনি পয়সার এই মেলাকে অনেক জায়গাতেই যেন বইমেলা মনে হয় না। স্রেফ খাবার সংগ্রহের জন্য যত মানুষ লাইন দিয়েছেন, বই কেনার লাইনে তার সিকি ভাগ লোকও নেই। |
এক এবং দুই নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই আয়করের এক হুল্লোড়ে ভরা মণ্ডপ, ওবি ভ্যান, টিভি চ্যানেলের স্টল, লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে উপচে পড়া ভিড় এ দিন যেন মাত্রা ছাড়িয়েছিল। সেখানেই এক প্রকাশককে স্টল দেওয়া হয়েছে। বেদম নাজেহাল হয়ে গিল্ডের কাছে অভিযোগ জানান তিনি। গিল্ড কর্তারা অবশ্য আমল দেননি। সেই অসন্তোষ জানিয়ে তিনি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন। সেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, অ-বইয়ের ভিড়ে কেন একটি মাত্র স্টল প্রকাশন সংস্থার জন্য নির্ধারিত করা হল। বইমেলা এ তল্লাটে আসার পর থেকে গত চার বছর ধরে স্টল থাকে তৃণমূলের ‘জাগো বাংলা’-র। এ বারও রয়েছে। মেলার সব চেয়ে ভাল জায়গায় সব চেয়ে বড় স্টলটিই এ বার ‘জাগো বাংলা’-র। চোখে পড়ার মতো বড়। স্টলের সঙ্গে লাগোয়া সবুজ কার্পেটে মোড়া মুক্তমঞ্চ। আবার স্টলের সামনেই মুক্তাঙ্গনে অনেকটা জায়গা নিয়ে তাদেই বসার, সভা করার, আড্ডা দেওয়ার আয়োজন। এমনকী নিজস্ব মাইকেরও বন্দোবস্ত। সেখানে প্রতিদিন অন্তত দু’জন করে রাজ্যের মন্ত্রী অবশ্যই হাজির থাকছেন।
এরই মধ্যে মিলন মেলার উত্তর প্রান্তে স্থায়ী মুক্তমঞ্চে রোজই জমে উঠছে গানের আসর। বেশির ভাগই নামী-অনামী ব্যান্ডের গান। তাদের মধ্যে একটু ব্যতিক্রম ‘দরবেশ’-এর ফকিরি গান। সেখানেও ভিড়। এ দিন ছিল বইমেলার বাংলাদেশ দিবস। সেই উপলক্ষে একটি আলোচনা সভারও আয়োজন করে গিল্ড। ইংরেজি সমেত বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুদিত গ্রন্থের একটি সম্পূর্ণ পঞ্জি তৈরি করছে জাতীয় অনুবাদ মিশন। এখনও পর্যন্ত ২০ হাজার অনুবাদ গ্রন্থের তথ্য তাঁরা তালিকাভুক্ত করেছেন। সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রকাশক, লেখক এবং পাঠকদের সহযোগিতা চেয়ে এ দিন আলোচনা সভা ছিল বইমেলায়। এরই মধ্যে মেলায় প্রকাশিত হল অরূপ আস সম্পাদিত ‘তাঁতঘর’ পত্রিকা। বিষয় ‘ফিরে পড়া বই’। কৃষি ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার, কীটনাশক আর জিন বদলানো ফসলের বিরোধিতায় এবং জৈব কৃষির পক্ষে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল ডিআরসিএসসি। সেখানেই প্রকাশিত হল তথ্যে ভরা পুস্তিকা ‘কৃষি একটি অব্যর্থ মারণাস্ত্র’। বেরোলো জয় গোস্বামীর গদ্য ও পদ্যের সংকলন ‘বিজল্পের জয়’, অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়ের নতুন বই ‘আন্না হাজারে: রালেগন থেকে রাজপথ’, দীপান্বিতা রায়ের কিশোরপাঠ্য গল্প সংকলন ‘র-এ রহস্য’, মণিশঙ্কর দেবনাথের উপন্যাস ‘রোদনভূমি’। |