লোকসান থেকে লাভে ফিরতে যৌথ উদ্যোগের পথ ধরল সরকারি সংস্থা মাদার ডেয়ারি। সে জন্য তিনটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ব্যবসাকে রাজ্যের বাইরে ছড়িয়ে দিতেও উদ্যোগী হয়েছে তারা। লক্ষ্য লাভের মুখ দেখা ও আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি।
নতুন ব্যবস্থায় ইতিমধ্যেই মাদার ডেয়ারির লোকসানের বহর কমতে শুরু করেছে বলে সংস্থা সূত্রের দাবি। গত সেপ্টেম্বরে সংস্থার মাসিক লোকসান ছিল ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। পুজোর পরে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ডিসেম্বর মাসে লোকসান কমে হয়েছে ১ কোটি ৯০ লক্ষ। কম দামের দুধের উৎপাদন কমিয়ে দামি দুধের প্যাকেট বাজারে ছেড়ে লোকসান কমাতে শুরু করে সংস্থা। তা ছাড়া, যৌথ উদ্যোগে ঘি, পনির, আইসক্রিম ও ইয়োগার্টের উৎপাদন ও বিপণন বাড়িয়েছে সংস্থা।
চিফ জেনারেল ম্যানেজার এবং পরিচালনপর্ষদের সদস্য-সচিব উদয় নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ঘি এবং পনির নেওয়া হচ্ছে নদিয়া-ভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে। আইসক্রিম নেওয়া হচ্ছে কলকাতার এক প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে। দুটিরই বিক্রি উত্তরোত্তর বাড়ছে।” এখন মাদার ডেয়ারি তাদের পণ্যের প্যাকেজিং আকর্ষণীয় করার দিকে নজর দিচ্ছে। অন্য কী কী পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রি করা যায়, সেই তালিকাও তৈরি করছে সরকারি সংস্থা।
মাদার ডেয়ারির পণ্য এখন বিক্রি হয় উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়া এই ছয় জেলায়। বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম এই চার জেলায় পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবসা শুরু করবে তারা। সংস্থা সূত্রের খবর, ১২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মাদার ডেয়ারির বর্ধমান উৎপাদন কেন্দ্র। সেটি চালু করার চেষ্টা হচ্ছে।
এ বার গ্রীষ্মে ঘোলের ব্যবসাও শুরু করতে চাইছে মাদার ডেয়ারি। ছানার জলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় উপাদান মিশিয়ে ঘোল তৈরি হবে। জলের বিক্রি বাড়াতে কথা চলছে ভারতীয় রেল নিয়ন্ত্রিত আইআরসিটিসি-র সঙ্গে।
মাদার ডেয়ারির সংস্কার শুরু হয়েছিল কম দামের (লিটার পিছু ২১ টাকা) ডাব্ল টোনড দুধের উৎপাদন কমিয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি দামের (লিটার পিছু ২৬ এবং ৩০ টাকা) ‘মা শক্তি’ দুধ বেশি করে বাজারে ছেড়ে। রাজ্যের দুগ্ধ কমিশনার উদয়শঙ্কর নন্দী বলেন, “ধাপে ধাপে ‘মা শক্তি’র উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে।”
কাঁচামালের মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে চলায় ২০০৯-এর শেষ দিকে মাদার ডেয়ারির দুধের দাম বাড়াতে চেয়েছিল রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর। বাম-সরকার তাতে সায় দেয়নি। নয়া সরকারও সায় দেয়নি দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে। মহাকরণের নির্দেশ ছিল, সরকারি সংস্থাগুলি নিজেরাই লোকসান এড়ানোর পথ খুঁজে বার করুক। সেই পথ ধরেই মাদার ডেয়ারি হাল ফেরাচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। |