সুন্দরবন সফরে গিয়ে নদীবাঁধের জন্য জমি দিতে গ্রামবাসীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সুন্দরবনেরই রায়দিঘি এলাকায় নদীবাঁধের জন্য জমি দেওয়ার আগে ঘূর্ণিঝড় আয়লায় দুর্গতদের জন্য রাজ্য সরকার ঘোষিত পুনর্বাসনের আশ্বাস বাস্তবায়িত করার দাবি তুললেন কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। ফলে, সেখানে বাঁধ দেওয়ার কাজ থমকে গিয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার আগেই ঘোষণা করেছিল, ‘আয়লা’য় যাঁদের ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের নতুন ঘর গড়ে দেওয়া হবে। বাঁধের জন্য জমি নেওয়া হলে ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারপিছু এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে।
রাজ্য সরকারের দেওয়া পুনর্বাসনের আশ্বাস এখনও কার্যকর হয়নি বলেই অভিযোগ রায়দিঘির কঙ্কনদিঘি গ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত উত্তর ও দক্ষিণ মুণ্ডাপাড়ার বাসিন্দাদের। যার জেরে গত সোমবার ওই এলাকায় থমকে থাকা রিং-বাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজে গিয়েও ফিরে যেতে হয় সেচ দফতর এবং প্রশাসনের কর্তাদের। ‘আয়লা’য় কঙ্কনদিঘির প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে মণি নদীর বাঁধ ধসে যায়। ২৫টি বাড়ি ভাঙে। তার কিছু দিন পরে ওই এলাকায় রিং-বাঁধের কাজ শুরু হলেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার রায়দিঘি ডিভিশনের সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার অমিত চক্রবর্তী এবং ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য ওই এলাকায় গেলে আদিবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন।
কঙ্কনদিঘির অর্জুন সর্দার, শ্যামল সর্দার, রতন সর্দার প্রমুখের ক্ষোভ, “আয়লার পরে ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ২৫টি পরিবারের জন্য ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও আমাদের কোনও ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়নি।” তাঁদের কথায়, “রাজ্য সরকারের দেওয়া পুনর্বাসনের আশ্বাস কার্যকর হলেই আমরা বাঁধের জন্য জমি দেব।”
শুক্রবার ওই এলাকায় যান প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী নানা জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন, তিনি আদিবাসীদের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু এখানে তেমন কিছু হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে না।” পক্ষান্তরে সংশ্লিষ্ট মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি কংসমোহন কয়াল বলেন, “ভূমিদান প্রকল্পের মাধ্যমে কঙ্কনদিঘির ওই সব পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। জমি না মেলায় সমস্যা হচ্ছিল।” মহকুমাশাসকও জানিয়েছেন, জোর করে কারও জমি নেওয়া হবে না। পুনর্বাসনের জন্য বিকল্প জমি পেলে ঘর গড়ে দেওয়ার পরে বাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
এ দিনই মহাকরণে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “আয়লা-বিধ্বস্ত দুই ২৪ পরগনায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৪ হাজার একর জমির প্রয়োজন। সেই জমিতে ৭৭৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হবে। এ জন্য প্রথম পর্যায়ে দরকার ৬ হাজার একর, যেখানে ২৬৬ কিলোমিটার বাঁধ গড়া হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৯০ একর পাওয়া গিয়েছে।” তিনি জানান, প্রকল্পের জন্য দু’বছর আগেই ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
মানসবাবু বলেন, “জমি হাতে পাওয়ার পরেই সেচ দফতরের কাজ শুরু করার কথা। সেই জমি না পাওয়া পর্যন্ত আমার দফতরের কিছু করার নেই।” তবে তাঁর আশা, মুখ্যমন্ত্রীর সুন্দরবন সফরের ফলে জমি দেওয়ার ব্যাপারে মানুষের ভূমিকা সদর্থক হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে যে জমি পাওয়া গিয়েছে তাতে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের খোসবাগ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে একটি করে প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই ওই দুই জেলায় আরও ৮০০-৯০০ একর জমি পাওয়া যাবে বলে জেলা প্রশাসন আমাকে জানিয়েছে।” |