|
|
|
|
|
|
খেলা |
মাঠে তরুণ |
চন্দন রুদ্র |
শরীরে বয়সের ছাপ। কিন্তু মন সবুজ। সম্প্রতি হাওড়ার ডুমুরজলা মাঠে এর প্রমাণ দিলেন এক ঝাঁক প্রবীণ অ্যাথলিট। ডিস্ট্রিক্ট মাস্টার্স অ্যাথলিট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে তাঁদের এই প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল। ৩৫ থেকে ৭৫-এর এই লড়াইয়ে কোনও খামতি ছিল না।
তিনশোর বেশি প্রতিযোগী ১০৭টি ইভেন্টে নেমেছিলেন। শুধু কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনাই নয় ঝাড়গ্রাম, শিলিগুড়ি থেকেও প্রতিযোগীরা এসেছিলেন। ঝাড়গ্রাম থেকে দল বেঁধে এসেছিলেন বরেন মাহাতো, দুবাই মুর্মু, কল্যাণী মণ্ডলরা। জিতলেন একাধিক পদক। যেমন, মহিলাদের ৩৫ ঊর্ধ্ব বিভাগে তিনটি ইভেন্টেই সোনা জিতেলেন কল্যাণী। ১০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে সোনা জয়ের সঙ্গে লংজাম্পেও সোনা তুলে নিয়ে কল্যাণীদেবী বললেন, “আমাদের ৪৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ১২ জন মেয়ে এসেছেন। ঘরের কাজ সামলে তাঁরা খেলার টানে মাঠে আসেন।” জঙ্গলমহলের দক্ষিণ শোলের বাসিন্দা প্রাক্তন রেলকর্মচারী দুবাই মুর্মু ৭০ ঊর্ধ্ব বিভাগে জ্যাভেলিনে রুপো জিতেছেন।
|
|
খুব ছোটবেলা থেকে অ্যাথলেটিক্স চর্চা করছেন হাওড়ার নিভা দেয়াশি। মহিলাদের ৫৫ ঊর্ধ্ব বিভাগে নেমে শটপাটের সঙ্গে ডিসকাস থ্রোয়েও সোনা জিতে নেন নিভা। শরীর সুস্থ রাখতে মাঠে নামেন। আক্ষেপ করে বললেন, “চাকরি, সংসার সামলে নিয়মিত অনুশীলন করতে পারি না। পারলে ফল আরও ভাল হত।” বয়স ৭২। পায়ে অল্প ব্যথা। তবুও ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা পেলেন হাওড়ার মহম্মদ ইলিয়াস। পুরুষদের ৭০ ঊর্ধ্ব বিভাগে ৪০০ মিটার দৌড়ে সোনা এবং ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ পেলেন হাওড়ারই মোহিনী দত্ত।
দেখলে মনেই হয় না ৭৫টি বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন। বারাসতের সুধীন্দ্রনারায়ণ নন্দী মাঠে নেমে শটপাট, ডিসকাস থ্রো আর জ্যাভেলিনে সোনা জিতলেন তিনি। সোনায় পিছিয়ে ছিলেন না কলকাতার বিবেকানন্দ রোডের মঞ্জুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ৬৫ ঊর্ধ্ব বিভাগে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড় ছাড়াও তিন কিলোমিটার হাঁটায় সোনা পান তিনি। সংসার সামলে এখানে এসে ৪৫ বছর বিভাগে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটায় সোনা জিতে মছলন্দপুরের বিপ্লবী দেবনাথ বললেন, “এ বার বেঙ্গালুরুতে জাতীয় প্রতিযোগিতায় গিয়ে সোনা জিততে চাই।”
|
|
আয়োজক সংস্থার সচিব তন্দ্রা বসু নিজেও অ্যাথলিট। ৫৫ বছর বিভাগে শটপাট, ডিসকাস ও জ্যাভেলিন থ্রোতে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। তন্দ্রাদেবীর কথায়: “সাত বছর ধরে চলছে এই প্রতিযোগিতা। আমরা চাই প্রবীণেরা বেশি করে মাঠে আসুন।” প্রতিযোগীদের উৎসাহ দিতে সাংসদ অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী অরূপ রায়, মেয়র মমতা জয়সোয়াল, বিধায়ক ব্রজমোহন মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রাক্তন অ্যাথলিট মনোরঞ্জন পোড়েল পুরস্কার তুলে দিতে এসে বললেন, “শুধু ওষুধের উপরে নির্ভর না করে সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেক প্রবীণের মাঠে নামা উচিত। এই মানুষগুলিই তার প্রমাণ।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|