ক্রীড়া জনজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাজ্যের আর্থিক সংকটেও যদি তৃণমূল সরকার ক্রীড়ার জন্য বরাদ্দ বাড়াইয়া থাকে, তাহাতে আপত্তি নাই। কিন্তু ক্রীড়ার উন্নয়ন কী রূপে হইবে, এবং তাহাতে সরকারের ভূমিকা কী, সে ধারণা না থাকিলে টাকা অপচয় হইবে। ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নয়ন হইবে, এই উদ্দেশে নানা জেলার ক্লাবগুলিকে মোট ২১ কোটি টাকা অনুদান দিয়াছে রাজ্য সরকার। এই সংবাদ রীতিমত ধন্দে ফেলিয়া দেয়। ক্লাবগুলিকে ২৫ হাজার কিংবা ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়াই কি পরিকাঠামোয় উন্নতির সর্বাধিক কার্যকরী উপায়? ওই ক্লাবগুলি কী ভাবে অনুদান খরচ করিবে তাহার রূপরেখা কী, তাহাদের উদ্যোগের মূল্যায়ন কী করেই বা করা যাইবে, -- এই গুরুতর প্রশ্নগুলি লঘু হইয়া পড়িয়াছে। প্রশ্ন উঠিয়াছে ক্লাবগুলির বৈধতা লইয়া। স্বীকৃতিহীন কোনও সংস্থাকে সরকারি অনুদান দেওয়ার নিয়ম নাই, বলাই বাহুল্য। যদি এক হাতে নথিভূক্তি, অন্য হাতে অনুদানের টাকা দেওয়া হইয়া থাকে, তাহা নিয়মপালনের ছল মাত্র, তাহাও মানিতে হইবে। কিন্তু তাহার চাইতেও বড় প্রশ্ন, কেন অনুদান দেওয়া হইল? ক্রীড়ার প্রসারই যদি রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য হয়, তাহা হইলে দুঃস্থ কিন্তু প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীদের অর্থসাহায্য করা যাইত। যদি পরিকাঠামোর উন্নতিই উদ্দেশ্য হইত, তাহা হইলে জেলাগুলিতে নূতন স্টেডিয়াম এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করিলে কাজ হইত। মান উন্নত করিতে চাহিলে আধুনিক সরঞ্জাম আনিয়া ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো সম্ভব হইত। রাজ্যের একমাত্র স্পোর্টস মেডিসিন কেন্দ্রটি বন্ধ হইয়া রহিয়াছে, সরকার তাহার জন্য সামান্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করিতেও রাজি নহে। কয়েক কোটি টাকা ক্লাবগুলির মধ্যে বিলাইবার অর্থ কী?
অনেকেই বলিবেন, যুবসমাজের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা বাড়াইতে সরকারি অনুদান বিলাইবার ইহা একটি দৃষ্টান্তমাত্র। এ বিষয়ে বিতর্ক তাই অর্থহীন। হয়তো এই কথাটি ভ্রান্ত নহে, কিন্তু গ্রহণযোগ্যও নহে। রাজনৈতিক দল তাহার জনপ্রিয়তা বাড়াইতে নানা কৌশল অবলম্বন করিতে পারে, কিন্তু সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ, জনগণের অর্থের যথাযথ ব্যবহারের দায়িত্ব সরকারের উপরে ন্যস্ত। রাজ্যের উন্নয়নের যে কোনও নীতির ক্ষেত্রেই তাই সরকার সকল বিকল্পের মধ্যে সর্বাধিক কার্যকর পথটিই বাছিয়া লইবে, ইহাই প্রত্যাশিত। এই প্রত্যাশা হইতে সরকারকে মুক্তি দেওয়া চলিবে না। ক্রীড়া উন্নয়নের অর্থ ক্লাবগুলির হাতে দিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝাইয়াছেন, পরিকল্পনা করিবার ধৈর্য, সদিচ্ছা কিংবা পারদর্শিতা তাঁহার নাই। তাহা হইলে তিনি বুঝিতেন, উন্নয়নের অর্থ এত সামান্য পরিমাণে এত বেশি মানুষের মধ্যে ছড়াইয়া দিলে কাজ হইবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। কারণ, প্রত্যেকটি সংগঠন নিজেদের বিচার-বুদ্ধি মতো খরচ করিবে, তাহাদের তৎকালীন প্রয়োজনটিই সর্বাধিক প্রাধান্য পাইবে, পরিকাঠামোর প্রয়োজন নহে। বিকেন্দ্রিত পরিকল্পনার দ্বারা ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নতি সম্ভব নহে। সর্বোপরি, এই টাকা যে উদ্দেশ্যে খরচ হইল, তাহা কতটুকু সাধিত হইল, তাহা বুঝিবার কোনও উপায় রাজ্য সরকারের হাতে নাই। এই দারুণ অর্থসংকটে এমন অপচয় ক্ষমাহীন অপরাধ। |