শীর্ষ আদালত সেনাপ্রধানের পাশে, ফের বিপাকে কেন্দ্র

স্পেকট্রাম লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ গিয়ে গত কালই কেন্দ্রে মনমোহন সিংহ সরকারকে বড়সড় অস্বস্তিতে ফেলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। আজ ফের সরকারের সমালোচনা করা হল সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে। সেনাপ্রধান বিজয়কুমার সিংহের অবসরের মেয়াদ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়ে দিল, সেনাপ্রধানের আবেদন খারিজ করার প্রক্রিয়াটাই ছিল দুর্বল। স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের নীতি অনুসরণ করা হয়নি।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সেনাপ্রধানের অবসর সংক্রান্ত মামলায় আজ সর্বোচ্চ আদালত কোনও রায় দেয়নি। কেবল পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে মাত্র। সুতরাং এ ব্যাপারে কেন্দ্রের উদ্বেগ জিইয়ে থাকলই। তার ওপর কাল আবার স্পেকট্রাম মামলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জি নিয়ে শুনানি হবে আদালতে। সার্বিক ভাবে আদালতে চলতি সব মামলা নিয়েই এখন উৎকণ্ঠায় কংগ্রেস। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী তৎপরতা যখন তুঙ্গে, তখন আদালতের ধারাবাহিক সব পর্যবেক্ষণ ও রায় দলের ভোট সম্ভাবনার ওপর আঁচ ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ।
দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, মূলত এই সব মোকদ্দমা মোকাবিলার কৌশল নিয়েই সনিয়া-মনমোহনের উপস্থিতিতে আজ আলোচনা হয়েছে কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে। শুক্রবারের শুনানির পরেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। তার পরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সেনাপ্রধানও। বৃহস্পতিবার প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জি সংক্রান্ত মামলাটি নিয়ে এখন সরকার ও দলের উদ্বেগ সব থেকে বেশি। কারণ এই মামলায় সরকার তথা চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আদালত রায় দিলে কংগ্রেসের সমূহ রাজনৈতিক ক্ষতি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হিসেবে সেনাপ্রধানের জন্মতারিখ ১৯৫০ সালের ১০ মে। কিন্তু জেনারেল ভি কে সিংহের দাবি, তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালে। এই বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ফল না মেলায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। ভি কে সিংহের জন্ম ১৯৫০ সালেই হয়েছে বলে ২০১১ সালের ২১ জুলাই একটি নির্দেশ জারি করে সরকার। তার পরে নিয়মমাফিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে অভিযোগ জানান জেনারেল সিংহ। সেই অভিযোগ বাতিল করে সরকার। এই বাতিল করার প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিচারপতি আর এম লোঢা ও এইচ এল গোখেলের বেঞ্চ। জুলাই মাসে অ্যাটর্নি-জেনারেল জি ই বাহনবতীর আইনি পরামর্শের ভিত্তিতে সেনাপ্রধানের বয়স নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। আবার ডিসেম্বর মাসে বাহনবতীর পরামর্শেই জেনারেলের আর্জি বাতিল করা হয়। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সেনাপ্রধানের আবেদন নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করা হয়নি। দু’বারই অ্যাটর্নি-জেনারেলের মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা স্বাভাবিক ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থী।
সেনাপ্রধানের অভিযোগ বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন্দ্র প্রত্যাহার করতে পারে বলে ধারণা বেঞ্চের। সে ক্ষেত্রে সেনাপ্রধানও অন্য পথে হাঁটতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি লোঢা ও বিচারপতি গোখেল। ফলে শুনানি এক সপ্তাহ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। ১০ ফেব্রুয়ারি ফের এই মামলার শুনানি হবে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সেনাপ্রধান প্রয়োজনে আর্মড ফোর্সেস ট্রাইবুন্যাল বা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। তবে বেঞ্চের মতে, ট্রাইবুন্যালে যাওয়া ভাল বিকল্প নয়। কারণ, জেনারেল সিংহের উর্দ্ধতন বা অধস্তন অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন এমন সেনা অফিসার ট্রাইবুন্যালে থাকতেই পারেন।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি কংগ্রেস। কিন্তু সরকার ও দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আদালতের এই সব ধারা-বিবরণী বিরোধীদের রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠছে। সে কথা আদালতকে মাথায় রাখতে হবে।” বস্তুত মামলা চলাকালীন আদালত যাতে এই ধরনের পর্যবেক্ষণ না দেয়, তা সুনিশ্চিত করার কথা বিচারকদের দায়বদ্ধতা বিলে রয়েছে। কিন্তু সেটি এখনও সংসদে পাশ হয়নি।
তবে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ কিছুটা আশার আলোও দেখছেন। তাঁদের মতে, আজ না হোক কাল স্পেকট্রাম মামলার রায় ঘোষণা হতই। কাল সর্বোচ্চ আদালত স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির জন্য প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজাকে দায়ী করেছে। কার্যত ছাড়পত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও চিদম্বরমকে। কিন্তু নেতৃত্বের বড় অংশই মনে করছেন, বিরোধীরা যে ভাবে প্রচারে নেমেছে, তাতে অস্বস্তির কাঁটাই বড় হয়ে উঠছে। বিশেষত উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের মুখে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.