|
|
|
|
ভাবমূর্তি ফেরাতে তৎপর মনমোহন |
চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্ত রুখতে আজ টুজি-রায়ই হাতিয়ার কেন্দ্রের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এক দিকে টুজি-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত ঠেকানো। অন্য দিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অস্বস্তি কাটিয়ে দুর্নীতি দমনে সরকারের সাহসি মুখ তুলে ধরা। এই দুই লক্ষ্যে এখন তৎপর হয়ে উঠেছেন কংগ্রেস ও মনমোহন সরকারের শীর্ষ নেতারা।
টুজি-কাণ্ডে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে কি না তা নিয়ে নিম্ন আদালতে শুনানি হবে কাল। কিন্তু তার আগেই সর্বোচ্চ আদালতের গত কালের রায়কে অস্ত্র করে চিদম্বরমের ‘প্রতিরক্ষায়’ নেমে পড়েছেন সরকার ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। চিদম্বরমকে বাঁচানো রাজনৈতিক দায় হলেও এটাই অবশ্য তাদের একমাত্র চিন্তা নয়। বরং মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধী এখন যত দ্রুত সম্ভব টুজি কলঙ্ক মুছে ফেলে সরকারের ভাবমূর্তি ফেরাতে তৎপর। যে কারণে গত কালের রায়ের অস্বস্তি থেকে বেরিয়ে এসে দুর্নীতি দমনে সরকার এ-যাবৎ কী কী কাজ করেছে সেগুলি তুলে ধরতে চাইছে সরকার।
মুখ্যসচিবদের সম্মেলনে আজ ঠিক সেই কাজটিই করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দুর্নীতি দূর করার কাজে গত এক বছরে যথেষ্ট এগিয়েছে সরকার। তবে সরকারি কাজে ও জনজীবনে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও সততা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এখনও দীর্ঘ পথ পেরোতে হবে আমাদের।”
তবে সরকার ও দলের আশু চিন্তা অবশ্যই চিদম্বরমের ভবিষ্যৎ। তাঁর বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত তদন্তের নির্দেশ দিলে রীতিমতো বিপাকে পড়বে সরকার ও দল। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের একটি পর্যবেক্ষণকে চিদম্বরমের ঢাল করতে চাইছে তারা। প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার আমলে দেওয়া ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করার পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালত কাল এ-ও জানিয়েছে যে, স্পেকট্রাম বণ্টনে ‘আগে এলে আগে পাবে’ নীতি অনুসরণের সময় প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা ও মত শোনেননি। সরকার ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের তাই বক্তব্য, স্পেকট্রামের দাম ঠিক করা ও বণ্টনে প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর যে কোনও ভূমিকা ছিল না সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট কার্যত ‘ছাড়পত্র’ দিয়েছে। চিদম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সপক্ষে কণামাত্র তথ্য-প্রমাণ নেই। বিরোধীরা স্রেফ রাজনীতি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে
আঙুল তুলছেন।
চিদম্বরমের ভূমিকা খতিয়ে দেখার জন্য সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তেরও আর্জি জানিয়েছিলেন জনতা পার্টি সভাপতি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। কিন্তু শীর্ষ আদালত বিষয়টি নিম্ন আদালতের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দু’সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে রায় দিতে হবে নিম্ন আদালতকে। নিম্ন আদালত চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিলেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হবে। সরকার ও দলের পক্ষে যার থেকে বড় অস্বস্তি আর কিছু হতে পারে না। তদন্ত শুরু হলেই বিরোধীদের প্রধান নিশানা হয়ে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চিদম্বরম বিশেষ জনপ্রিয় না হলেও এটা তাদের রাজনৈতিক দায়।
গত কাল রায় দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ আদালত এ-ও বলেছে যে, তাঁদের মত যেন কোনও ভাবেই নিম্ন আদালতের শুনানিকে প্রভাবিত না করে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক বাতাবরণ ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনা আদালতের রায়ে অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে। তা ছাড়া সর্বোচ্চ আদালত চিদম্বরম সম্পর্কে যে মত দিয়েছে, তা-ও সুবিবেচিত। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সেই রায় দিয়েছে আদালত। তাই নিম্ন আদালত রায় দেওয়ার আগেই চিদম্বরমের অনুকূলে রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরিতে তৎপর কেন্দ্র ও কংগ্রেস।
তবে এমন নয় যে, স্রেফ চিদম্বরমকে বাঁচানোই এক মাত্র চিন্তা কেন্দ্রের। বরং কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়া-মনমোহন এখন বিশেষ সচেষ্ট সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে। আজ কোর গ্রুপের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। সরকার ও দলের এক শীর্ষ নেতা পরে জানান, প্রধানমন্ত্রী নতুন লাইসেন্স নিলামের প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে সেরে ফেলতে চান। যে কারণে, নতুন নিলাম প্রক্রিয়া নিয়ে ‘টেলিকম অথরিটি অব ইন্ডিয়াকে’ শীঘ্র মতামত জানাতে বলা হয়েছে। থ্রিজি নিলাম স্বচ্ছতার সঙ্গে করার অভিজ্ঞতা সরকারের রয়েইছে। কিন্তু এ বার চ্যালেঞ্জটা অন্য রকম। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে বিনিয়োগের বাতাবরণে যাতে আঁচ না পরে, সেটা সুনিশ্চিত করাও ভীষণ জরুরি সরকারের পক্ষে। মাথায় রাখতে হচ্ছে উপভোক্তাদের স্বার্থের কথাও। এই সব বিষয়ে সামগ্রিক নীতি নির্ধারণের জন্য তাই ফের একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর অবশ্য অব্যাহতই রয়েছে। রায় নিয়ে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট কংগ্রেস। আর সেই কারণে, কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক সিঙ্ঘভি আজ বলেন, ‘আগে এলে আগে পাবে’ নীতি অনুসরণ করার দায় সরকার নিচ্ছে। কিন্তু ওই নীতি ছিল বিজেপি আমলের। ফলে দায় নিতে হবে তাদেরও।” একই সঙ্গে দুর্নীতির দায় রাজার ওপরেই চাপিয়ে দিতে চেয়েছে কংগ্রেস। যদিও বিজেপি নেতা মুরলীমনোহর জোশী আজ বলেন, “মন্ত্রিসভার সামগ্রিক দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। সুতরাং রাজার উপর দোষ চাপিয়ে তিনি দায় এড়াতে পারেন না।”
তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই এই চাপানউতোরের মধ্যেও একটি বিষয়ে এখনও মতের মিল রয়েছে কংগ্রেস-বিজেপি-র। শীর্ষ আদালতের রায়ের পরেও কংগ্রেস-বিজেপি কেউই মানতে রাজি নয় যে, ‘আগে এলে আগে পাবে’ নীতি ভ্রান্ত ছিল। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, “ওই নীতি অনুসরণ করা যে ভুল হয়েছিল, তা ২০১২-র প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। আর মুরলীমনোহর জোশীর কথায়, “এনডিএ-র নীতি ভ্রান্ত ছিল না। ইউপিএ সরকার তার অপব্যবহার করেছে।” |
|
|
|
|
|