টুজি নিলামের প্রস্তুতি ট্রাইয়ের লগ্নি নিয়ে চিন্তা, সংশয়
কাটাতে সচেষ্ট সরকার
সুপ্রিম কোর্ট ১২২টি লাইসেন্স বাতিল করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টুজি স্পেকট্রাম নিলামের প্রস্তুতি শুরু করে দিল টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই। বাতিল লাইসেন্সগুলির নিলাম পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছ থেকে মতামত চেয়ে শুক্রবারই নোটিস জারি করেছে তারা। আর এই নিলামে যাতে সব সংস্থা অংশ নিতে পারে, সে জন্য এর মধ্যেই চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে টেলিকম মন্ত্রক। গত কালের রায়ের পরে এই ভাবে লগ্নিকারীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা শুরু করেছে তারা।
নতুন করে নিলামের ফলে থ্রিজি-র মতোই টুজি পরিষেবাও দামি হবে কি না, তাই নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা। টেলি বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বেশি দাম দিয়ে যে সব সংস্থা এই লাইসেন্স কিনবে, তারা সেই টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আর তাতেই বাড়তে পারে পরিষেবা ব্যবহারের খরচ। একই সঙ্গে তাঁরা ভারতে টেলিকম শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় জানিয়েছেন।
টেলিকম শিল্পমহল অবশ্য বলছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে লগ্নিকারীদের ভরসা সাময়িক ধাক্কা খেতে পারে। কিন্তু লগ্নি তুলে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত ও ঝুঁকি নেওয়ার সময় এখনই আসেনি। কারণ, সংগঠিত ক্ষেত্র হিসেবে ভারতের টেলিকম বাজার লগ্নিকারীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আগামী দিনেও এর সম্ভাবনা বিপুল। ফলে লগ্নি প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে তারা দু’বার ভাববে। আপাতত সরকার কী পদক্ষেপ করছে এবং তা লগ্নির ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তার উপরই নির্ভর করছে গোটা বিষয়টি।
টেলিকম বাজারের আকর্ষণ যে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির কাছে একটুও কমেনি, আজ একটি ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। গত কাল যাদের টুজি লাইসেন্স বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ইউনিনর এবং এসএসটিএল। আজ তারা অন্য সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ‘গ্রাহক চুরির’ অভিযোগ করেছে। সংস্থা দু’টির বক্তব্য, তাদের গ্রাহকদের কাছে এই মর্মে এসএমএস যাচ্ছে যে, এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে, আপনারা পরিষেবা বদলে নিন। আলাদা করে দুই সংস্থাই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, পরিষেবা বন্ধ করে ব্যবসা গোটানোর কোনও ইচ্ছে তাদের নেই। ঘটনাচক্রে এ দিনই একটি বহুজাতিক সংস্থা বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, কী ভাবে পরিষেবা বদলাতে হবে।
লগ্নিকারীদের ভবিষ্যৎ যাতে সুরক্ষিত থাকে, তার জন্য তৎপর হয়েছে কেন্দ্রও। তাই আদালতের রায়ের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বাতিল লাইসেন্সগুলির নিলাম কী ভাবে হবে, তা ঠিক করতে সব পক্ষের মতামত চেয়ে নোটিশ জারি করেছে ট্রাই। সংস্থার মুখ্য উপদেষ্টা (এমএস) সুধীর গুপ্ত জানান, স্পেকট্রাম ও লাইসেন্স আলাদা ভাবে দেওয়ার জন্য গত মে মাসের সুপারিশ মেনেই এগোবেন তাঁরা। পাশাপাশি টেলিকম মন্ত্রক সূত্রে এ দিন দাবি করা হয়েছে, গত কালকের রায় টেলিকম ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। মন্ত্রকের বক্তব্য, তারা চায় না কোনও সংস্থা টেলিকম ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়াক। বরং সরকার এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চায়, যাতে সমস্ত সংস্থাই এই নিলামে অংশ নিতে পারে।
মন্ত্রকের একটি অংশে মতে, কালকের রায় টেলিকম ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করবে। এর ফলে যে সংস্থাগুলির দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এই শিল্পে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে, আগামী দিনে তারাই রয়ে যাবে। যে সমস্ত সংস্থা অল্প সময়ে বিরাট আর্থিক লাভের লক্ষ্যে এই ব্যবসায় নেমেছিল, তারা সরে যাবে। এতে কিছু বড় সংস্থার হাতে বাজার চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সামগ্রিক ভাবে টেলিকম শিল্পের লাভই হবে। যে সংস্থাগুলি শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে, তাদের জন্য এখন ‘এগ্জিট পলিসি’ তৈরি করছে মন্ত্রক।
মন্ত্রকের আর একটি অংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে, শেষ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা পড়ে থাকলে কি গ্রাহকেরা খুব একটা লাভবান হবেন? অনেকেই মনে করছেন, পরিষেবা বা পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে ফায়দা হলেও আর্থিক দিক থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে গ্রাহকদের। কেন না, নতুন সংস্থা আসায় পুরনো সংস্থাগুলি মাসুল কমাতে বাধ্য হয়েছিল। এখন যদি বাজার ফের বড় সংস্থাগুলির কুক্ষিগত হয়, তা হলে প্রতিযোগিতার অভাবে ফের মাসুল বাড়াবে সংস্থাগুলি। গত কয়েক মাস ধরেই মাসুল বৃদ্ধির ধারা শুরু হয়েছে। এ বার সেই ধারা অব্যাহতই শুধু থাকবে না, আগামী দিনে মোবাইলের বিল প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন জোনের লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় বাড়তে পারে রোমিং খরচও। এ ছাড়া যদি কোনও সংস্থা চলে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে তার প্রভাব পড়বে চাকরির বাজারেও। প্রাথমিক সমীক্ষা বলছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজারপাঁচেক ব্যক্তি কাজ হারাতে পারেন।
ভারতের টেলিকম বাজার কতটা আকর্ষণীয়, তা উপদেষ্টা সংস্থা ‘ট্রাস্ট রিসার্চ অ্যাডভাইসারি’র সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষাতেই স্পষ্ট। দেশের হাজারটি সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ‘ব্র্যান্ডে’র উপর সমীক্ষা চালিয়েছিল তারা। তাতে দেখা যাচ্ছে, টেলিকম ব্র্যান্ডগুলির উপর গ্রাহকদের আস্থা বা ভরসা যথেষ্টই। সেই তালিকায় এয়ারটেল রয়েছে নবম স্থানে, ভোডাফোন ১৭তম, আইডিয়া ১৮তম, টাটা ডোকোমো ৬৪তম, ইউনিনর ১১৩তম, লুপ ১২৯তম, এমটিএস ১৫৮তম, টাটা ইন্ডিকম ৩৯৫তম ইত্যাদি। সংস্থাটির কর্তা এন চন্দ্রমৌলির মতে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই আস্থা ধাক্কা খেতে পারে। বিভিন্ন টেলিকম ব্র্যান্ড যে আমজনতার কাছে যথেষ্টই জনপ্রিয়, তা-ও ওই সমীক্ষায় পরিষ্কার। তাই বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় এই বাজারকে লগ্নিকারীরা কতটা উপেক্ষা করতে পারবে, তা নিয়ে টেলিকম শিল্পমহলে ধন্ধ রয়েছে। বরং আইনি পথে হেঁটেই এ দেশে নিজেদের লগ্নি সুরক্ষিত রাখতে যে তারা তৎপর হবে, তার ইঙ্গিতই মিলেছে লাইসেন্স বাতিল হওয়া বিভিন্ন সংস্থার বক্তব্যেও।
যেমন ইউনিনরের মূল সংস্থা টেলিনর জানিয়েছে, এ দেশে নিজেদের ‘আইনি’ লগ্নি সুরক্ষিত রাখতে লড়াই করবে তারা। নরওয়ে সরকারও প্রয়োজনে তাদের সমাধানসূত্র খুঁজতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে। অন্য এক সংস্থা সিস্টেমা শ্যাম টেলিসার্ভিসেসের মূল সংস্থা সিস্টেমা জেএসএফসি-ও জানিয়েছে, এ দেশে তাদের লগ্নির স্বার্থে সমস্ত আইনি দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই সংস্থাই পরিষেবা চালু থাকার কথা জানিয়েছে। একই পথে হেঁটে ভিডিওকন-ও আগামী চার মাস পরিস্থিতির উপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
টেলিকম মহল সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ খতিয়ে দেখতে উৎসাহী বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পের সংগঠন সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (সিওএআই) ডিরেক্টর জেনারেল আর এস ম্যাথুজ। তিনি বলেন, “যাদের লাইসেন্স বাতিল হল, তারা ফের নিলামে অংশ নিতে পারবে কি না, নিলামের শর্তই বা কী হবে, সে সবের পরিপ্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত নেবেন লগ্নিকারীরা। এখনই তাই এ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় আসেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.