তৃণমূল নেতা কৃপাসিন্ধু সাহাকে খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবিতে এ বার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন কেতুগ্রামের কান্দরা গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। এ ব্যাপারে ৩০ জানুয়ারি ৭০৫ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন তাঁরা। এর আগে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে কেতুগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ফ্লেক্স লাগিয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। নিহত নেতার স্ত্রী মধুমিতাদেবীও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন।
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর কেতুগ্রামের মালগ্রামে সেচখালের ধারে কৃপাসিন্ধুবাবুর গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে। তাঁকে খুনের অভিযোগ ওঠে দলের ওই ব্লকেরই কার্যকরী সভাপতি হারা শেখ-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে। ঘটনার দু’দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার। কিন্তু এত দিন পরেও অভিযুক্তদের ধরতে পারেনি পুলিশ। গ্রামবাসী নন্দদুলাল মাঝি, রাধানাথ সাহা, মহম্মদ রফিকুল শেখদের দাবি, ‘‘কোনও অজানা কারণে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ।” তাঁদের অভিযোগ, খুনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তারাশঙ্কর পণ্ডিতকেও ‘হুমকি’ দিচ্ছে অভিযুক্তেরা। কৃপাসিন্ধুবাবু খুন হওয়ার পরে ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তারাশঙ্করবাবু দলের কার্যকরী সভাপতি হারা শেখ এবং দুই কর্মী আশাদুল্লা শেখ ও চাঁদ শেখের নামে কেতুগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। এর পরেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিযুক্ত হারা শেখ দলের কেতুগ্রাম পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী। অন্য দিকে, কৃপাসিন্ধুবাবু ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সাহানেওয়াজ শেখের অনুগামী। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, কান্দরা গ্রামে ক্ষমতার ‘দখল’ ও তোলাবাজি নিয়ে কৃপাসিন্ধুবাবুর সঙ্গে হারা শেখের দীর্ঘদিনের বিবাদ ছিল। তার জেরেই এই খুন। হারা শেখের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিজ’ করা হয়েছে। সম্পত্তি ‘সিল’ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের দাবি, ব্লক তৃণমূল সভাপতি রত্নাকর দে অভিযুক্তদের ‘আড়াল’ করার চেষ্টা করছিলেন। তাই কয়েক দিন আগে রত্নাকরবাবুর পদত্যাগও দাবি করেছিলেন তাঁরা। এর পরেই রত্নাকরবাবু পুলিশের কাছে একটি লিখিত বিবৃতিতে বলেন, “দলে একনিষ্ঠ কর্মী কৃপাসিন্ধু সাহাকে খুন করেছিলেন হারা শেখ, আশাদুল্লা শেখ ও চাঁদ শেখ। তারা আমার দলের বর্তমানে কোনও সদস্য নয়। এদেরকে আমি সমাজের দুষ্কৃতী বলে মনে করি। এরা যাতে ধরা পড়ে তার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করি এবং উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই।”
তৃণমূলের কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রতবাবু বলেন, “যা বলার পুলিশ সুপারকে বলেছি।” বিধায়ক সাহানেওয়াজও বলেন, “পুলিশের দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করা উচিত।”কেতুগ্রাম থানার আইসি আবদুল গফ্ফর বলেন, “অভিযুক্তরা পলাতক। নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে।” |