নিজের জমি নেই, করেন না ভাগ-চাষও, অথচ চাষি হিসেবে শংসাপত্র দেখিয়ে চালকলে ধান বিক্রি করেছেন। বর্ধমানের গলসির এমনই ২১ জন ‘ভুয়ো’ চাষির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বলে শুক্রবার জানালেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
বর্ধমানে এ দিন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, জেলার ১৫ জন বিডিও এবং খাদ্য দফতরের রাজ্য ও জেলা স্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি গলসিতে ধান কেনার জন্য শিবির করলেও বিশেষ সাড়া মেলেনি। উপযুক্ত প্রচারের অভাবেই সেখানে কম সাড়া মিলেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ দিন মন্ত্রী জানান, বর্ধমানে ধান সংগ্রহের জন্য ১৫টি ব্লকে শিবির করা হবে। এই সব শিবির শুরুর তিন দিন আগে থেকে ব্লকের প্রতিটি গ্রামে দু’বেলা ধান কেনার কথা মাইকে প্রচার করা হবে। প্রতিটি শিবিরে প্রতিদিন ১,০০০ বস্তা করে ধান কেনা হবে। শিবিরগুলি চলবে চার থেকে পাঁচ দিন। রাজ্যের যেখানেই ধান কেনার শিবির হবে, সব জায়গায় এমন প্রচার চালানো হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, বর্ধমানের বিভিন্ন চালকলে বর্তমানে যে পরিমাণ ধান জমে রয়েছে, তা থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টন চাল মিলবে। তিনি বলেন, “প্রতিদিন ১০ হাজার টন করে চাল পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় পাঠিয়ে দিতে পারলে বর্ধমানের গুদামগুলি খালি থাকবে। ফলে, প্রয়োজনে সেখানে আরও ধান মজুত রাখা সম্ভব হবে।”
গলসি ১ ব্লকের বিভিন্ন চালকলে ধান কেনার রেজিস্টার নিয়ে তদন্ত করে ২১ জন ‘ভুয়ো’ চাষির নাম মিলেছে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়েছে। গলসি ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও ওই ২১ জনের নামের তালিকা গলসি থানায় পাঠিয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।” জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ হোসেন মির্জা বলেন, “গলসি থানার কাছে ওই তালিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। যদি তাঁরা চাষি না হন, তা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাশাসক আরও জানান, ম্যাজিষ্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ২১ জনকে চাষি হিসেবে শংসাপত্র দিয়েছিলেন পারাজ পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান সুজয়কুমার সাঁতরা। ওই প্রধানকে ‘শো-কজ’ করা হয়। জবাবে ওই প্রধান প্রশাসনকে জানান, শংসাপত্রগুলি তিনি দেননি। সে ক্ষেত্রে ওই ২১ জন কী ভাবে শংসাপত্র পেলেন, তা পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে বলে জানান জেলাশাসক। বহু চেষ্টা করেও এ দিন সুজয়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ দিনই কালনায় দু’টি সমবায় সমিতিতে ধান কেনা পরিদর্শনে এসেছিলেন কৃষি মন্ত্রকের কৃষিমূল্য ও দর কমিশনের দুই প্রতিনিধি। খবর পেয়ে জড়ো হন শ’খানেক চাষি। কমিশনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কে জে রাধাকৃষ্ণন এবং অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা মহম্মদ শোয়েবের কাছে ধানের সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ১,০৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,২০০ টাকা করার দাবি জানান চাষিরা। দুই প্রতিনিধি চাষিদের দাবি-দাওয়া মন দিয়ে শুনলেও মন্তব্য করেননি। |