হাসপাতালে হানা দিয়ে এক মদ্যপকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।
নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্রীকুমার চক্রবর্তী মঙ্গলবার রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, “রাতে হাসপাতালের অব্যবস্থা দেখে রীতিমত তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম। হাসপাতাল তো নয়, যেন বহিরাগতদের হাট বসেছে। রোগীর সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি। কেউ বা শুয়ে আছেন রোগীর পাশের শয্যায়। মহিলা বিভাগেও আশ্চর্যজনকভাবে ভিড় করে আছেন পুরুষরা। প্রায় শতাধিক বহিরাগতকে এ দিন হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’’ প্রায় ঘন্টা দু’য়েক ধরে হাসপাতালের এ মাথা থেকে ও মাথায় এই সময় তটস্থ হয়ে পড়েন কর্মীরা। জরুরি বিভাগ থেকে মাইকে হাসপাতাল কর্মী ও রোগীর বাড়ির লোকজনদের সচেতন করেন শ্রীকুমারবাবু বলেন,‘‘ প্রথমবার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ বাদে আবার ফিরে আসি তখনই জরুরি বিভাগের সামনে আচমকা মদের গন্ধ পাই। ওই ব্যক্তি ছাড়াও একজন মহিলাকেও মদ্যপ অবস্থায় ধরি।”
রোগীর বাড়ির লোকজনদের বক্তব্য, রাতে এই হাসপাতাল পুরোপুরি নিরাপদ নয়। রাতে শক্তিনগর ও সদর জেলা হাসপাতালে বহিরাগতদের দাপট নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল। রাতের হাসপাতালে মদ্যপ যুবকদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রোগীর পরিবারের লোকজন। শুধু হাসপাতাল চত্বর নয়, হাসপাতালের ভিতরেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই মদ্যপদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৪০০। রোগীদের অভিযোগ, কোনও শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকলে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দখল করে বহিরাগতেরা। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের বিরাট চত্বরের বিভিন্ন প্রান্তে রাতের অন্ধকারে বসে মদের আসর। সম্প্রতি কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে রাতে প্রতীক্ষালয়ে মাদক মেশানো মিষ্টি খাইয়ে রোগীর বাড়ির লোকজনদের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তারপরেও যে স্বাস্থ্যকর্তা ও প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি, তার প্রমাণ মিলল এই দিনের ঘটনায়। হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্যরক্ষা কমিটির জেলা সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “রাতে জেলা সদর হাসপাতালেই বহিরাগতদের এমন দাপট থাকলে জেলার ছোট ছোট হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কী অবস্থা চলে তা সহজেই অনুমান করা যায়।”
তবে প্রশাসনের এমন আচমকা অভিযানের নজির শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এই প্রথম নয়। নভেম্বরেও আচমকা রাত্রে এই হাসপাতালে হানা দিয়েছিলেন জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা। মাসখানেক আগে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে দুই অতিরিক্ত জেলাশাসককে নিয়ে আচমকা হানা দিয়েছিলেন জেলাশাসক। চার ঘন্টা ধরে হাসপাতালে থেকে বেশ কিছু অনিয়ম হাতেনাতে ধরে ফেলেন তিনি। সেদিনও এক মদ্যপ বহিরাগতকে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল। হাসপাতালেই শো কজ করা হয় ওয়ার্ড মাস্টারকে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা আদায় করা হয়। তার পরপরই ওই হাসপাতালে আবারও হানা দিয়েছিলেন কল্যাণীর মহকুমাশাসক। আয়াদের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়। জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এই ধরনের নানারকম অভিযোগ আসছিল। তারপরেই আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে আচমকা হানা দিতে শুরু করেছি। বেশ কিছু অনিয়মও ধরা পড়েছে।”
মঙ্গলবার রাতে এই আচমকা হানার পরেও পরিস্থিতি অবশ্য বিশেষ বদলায়নি। বুধবার রাতেও হাসপাতাল চত্বরে একইভাবে দেখা মিলেছে বহিরাগতদের। |