অসুস্থ সদ্যোজাতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে একটি চার শয্যার ‘সিক নিউ বর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট’ তৈরি করা হবে। বুধবার এই হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে এ কথা জানান রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি। শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্যই যে এই ব্যবস্থা করার হচ্ছে সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল অসুস্থ সদ্যোজাতদের শারীরিক অবস্থার অন্তত কিছুটা উন্নতি ঘটিয়ে তবেই যেন তাকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়। এতে শিশুমৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো যাবে। এই ব্যবস্থা রাজ্যের প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করা হবে।”
আমতা গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে পরিষেবার হাল দেখে অবশ্য ‘হতাশ’ই হন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। ২০ শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ৫০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। ঘটা করে তার উদ্বোধনও করা হয়েছে ওই বছরেই। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা বা আধুনিক চিকিৎসার সরঞ্জাম না থাকায় এটির পরিষেবার মানের কোনও উন্নতি হয়নি। হাসপাতালে সূত্রের খবর, মহিলা ও প্রসূতি বিভাগ এবং পুরুষ বিভাগ মিলিয়ে মোট ৩০টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু দিনে ১০-১২ জনের বেশি রোগী অন্তর্বিভাগে আসেন না। |
এ দিন দেখা গেল মহিলা ও প্রসূতি বিভাগে জনা পাঁচেক এবং পুরুষ বিভাগে দু’জন মাত্র ভর্তি রয়েছেন। পরিদর্শন চলাকালীনই স্বাস্থ্য অধিকর্তা হাসপাতালের সুপার তথা আমতা ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌভিক সরকারকে বলেন, “এত কম সংখ্যাক রোগী ভর্তি রয়েছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে কোনও চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না। রোগীরা এই হাসপাতালে আসতে চান না।” সুপার স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং উন্নত মানের সরঞ্জাম না-থাকার কথা জানান।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা মহিলা ও প্রসূতি বিভাগটি ঘুরে দেখেন। আসেন লেবার রুমে। অসুস্থ সদ্যোজাতদের জন্য যেখানে দরকার চারটি ‘রেডিয়ান্ট ওয়ার্মার’ সেখানে এই হাসপাতালে রয়েছে মাত্র দু’টি। সদ্যপ্রসূত মায়েদের শয্যার পাশেই সদ্যোজাতদের রাখার ব্যবস্থা করার প্রয়োজন। অথচ এই হাসপাতালে সেই ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবেই যে এটা করা যাচ্ছে না, সে কথা বলেন সুপার। তবে স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে তিনি জানান, দোতলায় নতুন লেবার রুম করা হচ্ছে। সেখানেই অসুস্থ সদ্যোজাতদের জন্য চার শয্যার ‘সিক নিউ বর্ন স্টেবিলাইজেশন ইউনিট’ করা হবে।
পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করার সময়ে শুধু ভবনটিই একতলা থেকে দোতলা করা হয়েছে। উন্নত পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে পরিকাঠামো গড়ার প্রয়োজন ছিল তা হয়নি।”
মঙ্গলবারই রোগী কল্যাণ সমিতি হাসপাতালটির পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছে। সমিতির সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নির্মাল মাজি বলেন, “এই সব সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে গেলে টাকার প্রয়োজন। সেই কারণেই স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে এখানে এনেছি। নিজের চোখে দেখে তিনি এ বিষয়ে যা করার করবেন।” স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “রোগী কল্যাণ সমিতি যে সব পরিকল্পনা করেছে তা বাস্তবসম্মত। এগুলি যাতে রূপায়িত হয় তা দেখা হবে। আপাতত, মহিলা ও প্রসূতি বিভাগ, সদ্যোজাতদের জন্য চিকিৎসা এবং পিপিপি মডেলে একটি নির্ণয়কেন্দ্র কেন্দ্র খোলার ক্ষেত্রটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।” |