বহরমপুর জেলা সদর হাসপাতালের মাতৃসদনে চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগে রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্যভবন।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা (হাসপাতাল, প্রশাসন) বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “ওই ঘটনার কারণ জানতে সুপারের কাছে একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্তকারী দলও ওই হাসপাতালে যেতে পারে।”
এ দিকে হাসপাতালের গড়ে দেওয়া মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরাও এ দিন তদন্তে এসেও ফিরে গেলেন।
যে ইঞ্জেকশন দেওয়ার আগে রোগীর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক, কিংবা যে ওষুধ অন্য কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে শরীরে প্রয়োগ করলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থেকে যায় এক সঙ্গে সেই তিনটি ওষুধ মিশিয়েই প্রয়োগ করা হয়েছিল সদ্য-প্রসূতি শামিরা আখতারের শরীরে। ফলে সোমবার রাতে মিনিট পনেরোর মধ্যেই মারা গিয়েছিলেন ডোমকলের ওই মহিলা। বুধবার সে ব্যাপারে তদন্ত করতে বহরমপুর সদর হাসপাতালে এসেছিলেন ওই হাসপাতালের ডেপুটি সুপার আনন্দ মণ্ডল, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অরুনাংশু ভট্টাচার্য ও প্যাথলজিস্ট অশোক কুণ্ডু। কিন্তু মেডিক্যাল বোর্ডের োই তিন সদস্যকেই এ দিন ফিরে যেতে হয়। কেন? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কোনও কর্তার কাছেই এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি।
হাসপাতালের সুপার পার্থ দে বলেন, “মেডিক্যাল বোর্ডের তিন জন সদস্যের মধ্যে দুজন ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন। তাঁরা ফিরলে সোমবার থেকে ওই তদন্ত শুরু হবে।” তা হলে এ দিন ওই তিন জন হাসপাতালে এলেও তাঁরা তদন্ত শুুরু করতে পারলেন না কেন? উত্তর মেলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, রোগী মৃত্যুর তদন্তের কাজ বন্ধ রেখে ওই সদস্যদের ‘ছুটি’ দেওয়া হল কেন? মেলেনি তারও কোনও সদুত্তর। এমনকী কোন দু’জন চিকিৎসক বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটির আবেদন করেছেন, সুপার তাও বলতে নারাজ। পার্থবাবু বলেন, “ঘটনার পরেই চিকিৎসক, নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও কর্তব্যরত নার্সের কাছ থেকে যে লিখিত রিপোর্ট পেয়েছি, তাতে ওই রাতে প্রসূতিকে ফেনারগান ও ফোর্ট-উইন ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই দুটি ওষুধ পৃথক দুটি সিরিঞ্জে নিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।” কিন্তু ওই দুই ওষুধ মিশিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল কিনা সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি তিনি।
মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যতম অরুনাংশুবাবু বলেন, “এ দিন দুপুরে সদর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি তদন্তের কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কবে থেকে শুরু হবে তাও পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এর পরেই ফিরে আসি।” তবে ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাতে মেডিক্যাল বোর্ডে এক জন জেনারেল ফিজিসিয়ানকে রাখা উচিত ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পার্থবাবু ফেনারগান বা ফোর্ট-উইন ওষুধের কথা বললেও ওই দিন রাতে চিকিৎসক কমলকৃষ্ণ মজুমদার সাদা চিরকুটে যে ৬টি ওষুধের নাম লিখে দিয়েছিলেন তাতে ফেনারগান বা ফোর্ট-উইন-এর নাম নেই। সুপারের কাছে এ ব্যাপারেও স্পষ্ট উত্তর নেই।
কলকাতার ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের শিক্ষক আফতাবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, “সেফটাজাইডিম গ্রুপের কোনও ইঞ্জেকশন দেওয়ার আগে শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কিনা তা পরীক্ষা করার প্রয়োজন। পরীক্ষা ছাড়া ওই ইঞ্জেকশন দেওয়া ঠিক হয়নি।” তিনি জানান, সেফটাজাইডিম, অক্সিটোসিন ও অ্যামিকাসিন গ্রুপের তিনটি ওষুধ মিশিয়ে সিরিঞ্জে নিয়ে ওই প্রসূতিকে দেওয়ার ফলেই শরীরে হাইপার সেনসিটিভ রিঅ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে পালমোনারি এডিমা হয় এবং তার ফলেই ওই প্রসূতি হৃদরোগে আক্রান্ত হন বলেই তাঁর অনুমান। |