যে সদ্যোজাতকে চুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, সেই শিশুটির মৃত্যুই হয়েছিল বলে জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার তদন্ত রিপোর্ট পেশের পরে এ কথা জানান হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্ত। যদিও শিশুটির মা রুবি সাউয়ের বাড়ির লোকজন হাসপাতালের এই দাবি মানতে চাননি। তাঁরা শিশুটির দেহও নেননি। ঘটনার বিচার চেয়ে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
পাশাপাশি, শিশুমৃত্যু নিয়ে পরিবারের লোকজনকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগের ঘটনায় এক আয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার হাসপাতালের সুপার ও ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ ওই শিশুর বাড়ির লোকজনকে জানান, মৃত সন্তানই প্রসব হয়েছিল। কিন্তু এক আয়া ভুল করে জানায় যে, সুস্থ শিশু হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। |
মঙ্গলবার মেমারির কেন্না গ্রামের বাসিন্দা রাকিবা বিবির বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেছিলেন, প্রসব নিয়ে নানা রকম তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁদের। প্রথমে এক আয়া জানান, সুস্থ শিশুর জন্ম হয়েছে। পরে আয়া, নার্স ও জুনিয়র ডাক্তার জানান, গর্ভ থেকে শুধু শিশুটির মাথা বেরিয়েছে। প্রসূতির স্যালাইন চলছে। শেষে জানানো হয়, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে শিশুর দেহ নিতে চাইলে নানা ভাবে তাঁদে হয়রান করা হয় বলেও অভিযোগ করেছিলেন রাকিবার বাবা আব্দুল কুদ্দুস সরকার। বুধবার হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আমরা গত কাল রাতেই দেহ নিয়ে গিয়ছিলাম। সৎকারও হয়ে গিয়েছে। আজ তদন্তের রিপোর্ট জানতে এসেছি।”
গত শনিবার বিহারের মুঙ্গেরের বধূ রুবি সাউ অভিযোগ করেন, তাঁর শিশুকন্যাকে চুরি করা হয়েছে। অভিযোগে তিনি জানিয়েছিলেন, ঘণ্টা দু’য়েক আগেও সন্তানকে সুস্থ দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে তাঁকে জানানো হয়, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তবে দেহ দেওয়া হয়নি। প্রসূতি বিভাগের কথা মতো ২৪ ঘণ্টা পরে দেহ নিতে গেলে কোনও কথা শোনা হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
এই ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের দল গড়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ দিন তারও রিপোর্ট পেশ হয়। সুপার রুবিদেবীর পরিবারকে জানান, তাঁদের শিশুর মৃত্যুই হয়েছিল। সুপার বলেন, ‘‘শিশুটির ওজন ঠিক থাকলেও তার সেপ্টিসেমিয়া হয়েছিল। তার উপরে ছিল জন্ডিস। শিশুটিকে এই কারণেই তাকে নার্সারি বিভাগে ভর্তি রাখা হয়েছিল।” কিন্তু যে ঘণ্টা দু’য়েক আগেও মায়ের দুধ খায়, তার মৃত্যু হল কী ভাবে? সুপারের দাবি, “শিশুদের গলায় দুধ আটকে শ্বাসরোধ হয়েও তো মৃত্যু হয়। তাই দুধ খাওয়ার মাত্র দু’ঘণ্টা পরে মৃত্যু হয়েছে বলে শিশুটি সুস্থই ছিল, এ কথা বলা সম্ভব নয়।” |
তবে হাসপাতাল ছাড়ার আগে রুবিদেবীর বাবা দীপু সাউয়ের অভিযোগ, “হাসপাতালের এই তদন্ত রিপোর্ট আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের শিশু লোপাট করে সুপার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছেন। এর বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হব।” যদিও সন্ধ্যায় সুপার বলেন, “রুবিদেবীর সন্তানের দেহ দিতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। তবে শিশুটির দেহ মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগে সংরক্ষিত আছে। বাড়ির লোকজন ভবিষ্যতে আদালতে গেলে দরকারে যাতে ডিএনএ পরীক্ষা কারনো যায়, সে দিকে নজর রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
|