সঞ্জয় চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
বহুদিন ধরেই দার্জিলিং জেলার ভূমিসংস্কার বিভাগের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলি এরকম: মাটিগাড়া ব্লকের নিমাই জোত, বানিয়াখাড়ি, পাঁচকেলগুড়ি এলাকায় কিছু জমির দালাল খাস জমি দখল করে নিয়েছেন। নকশালবাড়িতে পাহাড়গুমিয়া চা বাগানের পাশে প্রায় দেড়শো বিঘা আদিবাসী জমি হস্তান্তর হয়েছে। খড়িবাড়িতে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের গা ঘেঁষে রয়েছে প্রায় ত্রিশ একর খাস জমি। সেই জমির একাংশও দখল হয়ে গেলেও ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমন নানা অভিযোগের মুখে জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অফিসার-কর্মীদের ঢালাও বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি মহকুমার চারটি ব্লকের ভূমিসংস্কার আধিকারিককে বদলির নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বদলি করা হবে পাহাড়ের ৮ ব্লক ভূমি ও ভূমিসংস্কার আধিকারিককেও। সরানো হবে ওই দফতরগুলির গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদেরও। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “জেলার প্রতিটি ব্লক ভূমিসংস্কার দফতরেই কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্রুত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা জুড়েই ভূমিসংস্কার দফতরের কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় উদ্বিগ্ন জেলার প্রশাসনিক কর্তারা। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে বিডিওদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়। একই ভাবে দফতরের কর্মীদের সম্পর্কে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ব্লক ভূমি ও ভূমিসংস্কার আধিকারিকদের। সম্প্রতি ওই সমস্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পরেই জেলা জুড়ে কর্মী ও আধিকারিকদের বদলির সিদ্ধান্ত নেন জেলাশাসক। গত সোমবার শিলিগুড়ি মহকুমার চার ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে বদলির চিঠি ধরিয়ে দিয়ে শিলিগুড়িতে মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে যোগ দিতে বলা হয়। জেলাশাসকের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মহকুমার প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই স্থানীয় নেতারা। পাশাপাশি, বিএলআরও অফিসের অন্যান্য ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ কর্মীদেরও বদলি দাবি করেছেন। তৃণমূলের মাটিগাড়া ব্লকের নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “খাস জমি জবরদখলের একাধিক অভিযোগ জানিয়ে আমরা বিএলআরওকে ব্যবস্থা নিয়ে বলি কিছুই হয়নি। বরং দফতরের কর্মীদের একাংশকে হাত করে দালালরা খতিয়ান জমি বেআইনি ভাবে হস্তন্তার করছে। জেলাশাসক সঠিক পদক্ষেপ করেছেন।” খড়িবাড়ি ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অরবিন্দ নাথ দাবি করেন, বিএলআরও অফিসের অন্য যে সমস্ত কর্মী দুর্নীতিতে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। জেলা ভূমিসংস্কার আধিকারিক গোপাল লামা বলেন, “কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সিপিএমের নকশালবাড়ির নেতা গৌতম ঘোষ এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে অভিযোগ করেন, “নকশালবাড়ির বেশ কিছু আদিবাসী জমি বেআইনি ভাবে হস্তান্তর হয়েছে। ব্লক ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের প্রশ্রয় ছাড়া এই ধরনের বেআইনি কাজ কখনই সম্ভব নয়। বেআইনি হস্তান্তরের জেরে বেশ কিছু এলাকায় জনবিন্যাস বদলে গিয়েছে। এসবও খতিয়ে দেখা দরকার।” |