নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও ক্রমশ শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের অনেকেরই মোহভঙ্গ হচ্ছে বলে দাবি করলেন নকশাল নেতা অভিজিৎ মজুমদার। বুধবার বিকালে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) শিলিগুড়ি ডিপোর সামনে এক শ্রমিক সমাবেশে ওই মন্তব্য করেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ওই নেতা। কিছুদিন আগেও যাঁদের এক মঞ্চে দেখার কথা ভাবাই যেত না সেই সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ছাড়াও কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যের সরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলি নিয়ে রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের নিন্দা করেন বক্তারা। এমনকী, পরিবহণ কর্মীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে, সেই ক্ষেত্রে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার দাবিও তোলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। সভায় নকশাল নেতা অভিজিৎবাবু বলেন, “নানা কথা, ইস্তেহারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজ্যে নতুন সরকার এসেছিল। এখন দেখছি কোনটাই কিছু হচ্ছে না। কৃষক আত্মহত্যা করছেন। পরিবহণ শ্রমিকেরা বেতন, পেনশন পাচ্ছেন না। ট্রেড ইউনিয়ন করা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এত দ্রুত মানুষের সরকার সম্পর্কে মোহভঙ্গ হওয়াটা ভাবা যায় না।” শ্রমিক স্বার্থে মতাদর্শ সরিয়ে রেখে একযোগে শ্রমিক সংগঠনগুলি আন্দোলন করবে বলে অভিজিৎবাবু জানিয়েছেন। বক্তব্যের শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের এক হাত নেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু। তিনি বলেন, “রাজ্যে অচলাবস্থা চলছে। টাকা নেই বলা হচ্ছে। আর রোমের সম্রাট নিরোর মত উনি (মুখ্যমন্ত্রী) উৎসব করে বেড়াচ্ছেন। মন্ত্রীদের ভাতা বাড়ানো হচ্ছে, ক্লাবগুলিকে লক্ষ লক্ষ টাকা দান করা হচ্ছে। কেউ মরলেই ২ লক্ষ টাকা ঘোষণা হয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তনপন্থী বিদ্বজ্জনদের একাংশকে ৫০ হাজার টাকার ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। অথচ পরিবহণ শ্রমিকেরা বেতন, পেনশন, ভাতা পাচ্ছেন না। কৃষিকেরা আত্মহত্যা করছেন। প্রগতিশীল, উন্নয়নের কথা বলে ঠিক উল্টোটা করছে রাজ্য সরকার।” ২৫ জানুয়ারি মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী, পরিবহণ মন্ত্রী ঘোষণা করেন, এনবিএসটিসি-তে আগামী ছমাস কোনও কর্মী ছাঁটাই করা হবে না। ভর্তুকি বজায় রাখা হবে। অথচ এদিনই সংস্থার অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন এনবিএসটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সত্যানন্দ দত্ত বলেন, “সংস্থা যাঁরা পরিচালনা করছেন তাঁরা হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ক্ষমতাবান। অথবা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁরা ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আমরা সবাই বিভ্রান্ত। কর্মী স্বার্থে বড় আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।” ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী শ্রমিক ধমর্ঘটের ডাক দিয়েছে ডান-বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি। তৃণমূল বাদে সমস্ত সংগঠন অংশ নিচ্ছে। সভায় ওই ধমর্ঘট সফল করার আহ্বান জানান বক্তরা। সভায় সিপিআই-র জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী, সিপিএম নেতা জীবেশ সরকার ছিলেন। |